২৭ অক্টোবর ২০২৫

মুক্তিপণে ফিরে এসেছে অপহৃত ১০ শ্রমিক; আতংক সর্বত্র

কক্সবাজারের টেকনাফের পাহাড়ের পাদদেশের জমিতে করা সবজি খেতে কাজ করতে গেলেই অপহরণের শিকার হচ্ছে চাষী ও শ্রমিকরা। এভাবে মঙ্গলবার-বুধবার অপহৃত ৭জনসহ আগে নিরবে অপহরণ হওয়া আরো তিনজন মিলে ১০ জনকে ফেরত পাঠিয়েছে দুর্বৃত্তরা। হতদরিদ্র খেটেখাওয়া এসব মানুষের মুক্তিপণ হিসেবে দু’লাখ টাকা দিয়েই বাড়িতে ফিরতে পেরেছেন। কিন্তু আবার অপহরণ বা অন্য কোন ক্ষতির আশংকায় কার কাছে টাকা হস্তান্তর করার পর তারা ফিরে এসেছে এসব বিষয়ে কেউ মুখ খুলছে না।

বুধবার (২৭ মার্চ) দিনগত মাঝ রাতে তারা ফেরত আসে বলপ জানিয়েছেন অপহৃতদের একজন ভিকটিম মোহাম্মদ শাকিল মিয়ার বাবা লেদু মিয়া।

অপরদিকে, পুলিশের দাবি অভিযানের চাপের মুখে দুর্বৃত্তরা অপহৃতদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

বোদ্ধামহলের ধারণা, বার বার মুক্তিপণে ফিরে এলেও প্রশাসন তা আড়াল করে তাদের অভিযানে অপহৃতরা ছাড়া পাচ্ছে প্রচার করায় অপরাধীরা উৎফুল্ল মনে অপরাধ কর্ম ঘটাচ্ছেন। তাই যাকে পাচ্ছে, তাকেই নিয়ে যাচ্ছে তারা। এমনও হতে পারে মুক্তিপণের টাকা ঘাটে ঘাটে ‘বরাদ’ চলে আসছে!

ফেরত আসা অপহৃতরা হলো, টেকনাফের হোয়াইক্যং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের করাচিপাড়ার লেদু মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ শাকিল মিয়া (১৫), বেলালের ছেলে জুনাইদ (১৩), নুরুল আমিনের ছেলে সাাইফুল (১৪), শহর আলীর ছেলে ফরিদ (৩৫), নাজির হোছনের ছেলে সোনা মিয়া (২৪), শহর মুল্লুকের ছেলে গুরা পুইত্যা (৩২) ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের রইক্ষ্যং উত্তর পাড়ার আলী আকবরের ছেলে ছৈয়দ হোসেন ওরফে বাবুল (৩৩) একই গ্রামের কালা মিয়ার ছেলে ফজল কাদের (৪৭),৯ নম্বর ওয়ার্ডের কম্বনিয়া পাড়ার ফিরোজের ছেলে মোহাম্মদ নুর(১৬) ও হ্নীলা রোজারঘোনার আমির হোসনের ছেলে অলী আহমেদ(৩২)।

লেদু মিয়া বলেন, মোহাম্মদ শাকিল মিয়াসহ ১০ জনকে গত মঙ্গল ও বুধবার বিভিন্ন সময়ে পাহাড়ি এলাকায় থেকে দুর্বৃত্তরা অপহরণ করে। এর পরে দুর্বৃত্তরা তাদের ছাড়তে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করে আসছিল। নিরুপায় হয়ে দু’লাখ টাকা মুক্তিপণ হস্তান্তর করার পর তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। এর আগে ভিকটিমদের উদ্ধারে পুলিশের টিম একাধিকবার পাহাড়ে অভিযান চালায়।

হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমেদ আনোয়ারী বলেন, দিনের পর দিন পাহাড়ি দুর্বৃত্তরা যেহারে অপহরণ বাণিজ্য শুরু করেছে- এতে স্থানীয় কৃষক, কাঠুরিয়াসহ কোন ব্যক্তি গরু-ছাগল নিয়ে পাহাড়ে কাছে যেতে ভয় পাচ্ছে। নিরাপদে চলাচল করা ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে গেছে। দুবৃর্ত্তরা সুযোগ পেলেই মানুষ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। মঙ্গল ও বুধবারে ১০ জনকে অপহরণ করা হয়েছিল। ৭ জনের বিষয়টি সামনে আসে। বাকি তিনজনের টা প্রকাশই পায়নি। তাদের মধ্যে কিশোর- যুবক, রাখাল ও কাঠুরিয়া ছিল।

তবে, টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে অপহরণকারী চক্রের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর বুধবার সন্ধ্যা থেকে টেকনাফ থানা, হোয়াইক্যং ও বাহারছড়া ফাঁড়ির পুলিশের পাশাপাশি অভিযানে যোগ দেয় র‍্যাব সদস্যরাও। অভিযানের এক পর্যায়ে অপহৃত ১০ ভিকটিমকে পাহাড়ে ছেড়ে পালিয়ে যায় অপহরণকারী চক্রটি। এরপর তাদেরকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, এ ঘটনার আগে বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) হ্নীলা ইউনিয়নের পানখালিতে খেত পাহারা দিতে গিয়ে ৫ শ্রমিক অপহরণের শিকার হয়েছিল। পরে তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উদ্ধার করে বলে দাবি করা হয়। এর আগে শনিবার ৯ মার্চ মাদ্রাসা থেকে বাড়ি ফেরার পথে ৬ বছরের এক মাদ্রাসার ছাত্রকে অপহরণ করা হলেও তাকে এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে গত ২৮ দিনে ৩০ জন অপহরণের শিকার হয়েছে। আর গত তিন বছরে টেকনাফ উপজেলায় দেড় শতাধিক লোক অপহরণের শিকার হয়েছিল। এবং অপহরণের পরে মুক্তিপন দিতে না পারায় টমটম( ইজিবাইক) ও সিএনজি চালক সহ কক্সবাজার থেকে টেকনাফে বেড়াতে আসা তিন যুবক সহ মোট পাঁচ জন অপহরণের কবলে পড়েছিল।পরে দুর্বৃত্তরা মুক্তিপন না পেয়ে তাদেরকে নির্মম ভাবে হত্যা করে পাহাড়ে রেখে পালিয়ে যায়।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ