মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক »
চট্টগ্রামে বিজয়শিখা মঞ্চ তাঁরই অবদান যিনি চট্টগ্রামের তিন তিনবার নির্বাচিত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা কমিটির প্রথম সভাপতি ছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রতিবছর ১০ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) সম্মুখস্থ বিজয় শিখা স্তম্ভে শিখা প্রজ্জলনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার উদ্বোধন করতেন এই নগরপিতা। কয়েক ঘণ্টার জন্য যেন বিজয় শিখার নীচে মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনমেলা জমে উঠতো। তিনি প্রয়াত হবার পর থেকে এই অঙ্গন যেন নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। বিজয় শিখাও যেন নিভু নিভু করছে।
‘আমরা বাঙালি, বাংলা আমার মা, বাংলাকে বাঁচাতে আমরা মুক্তিসেনা’ এমন স্লোগান দিয়ে বর্তমান প্রজন্মকে জাগ্রত করে তুলছেন। চট্টগ্রামের সাবেক ও প্রয়াত নগরপিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এখন স্মৃতির মণিকোঠায়। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধে দামাল ছেলেদের অবদান তৃতীয় প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে তিনিই প্রথম চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস (পুরাতন) প্রাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন শুরু করেছিলেন।
২০০২ সালে বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের আমলে এই বিজয়শিখা প্রজ্জলন ও বিজয়মেলা উদযাপনে নানা বাধা এলেও তিনি তা রুখে দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি দিয়ে। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির কারনে আউটার স্টেডিয়ামে বিজয় মেলার আযোজন করা যায়নি দীর্ঘ সাত বছর। ২০০২ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা আয়োজন করা যায়নি চট্টগ্রামের আউটার স্টেডিয়ামে। ২০০৯ সালে আবারও মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে শুরু করেন মেলার আয়োজন। সেই থেকে এখনো চলছে বিজয় শিখা প্রজ্জ্বলন, বিজয় মেলা ও ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় র্যালি।

মুক্তিযুদ্ধের বিজয় বীর বাঙালির অহংকার। পাকিদের কাছ থেকে বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার পর পেরিয়েছে ৫০ বছর। লাল সবুজের পতাকায় বাংলাকে দেখতে শুধু প্রবীণই নয়, শিশুরাও আনন্দের জোয়ারে রয়েছে। পাকীদের হটিয়ে বাঙালি শিকড় থেকে শিখরে উঠতে শিখেছে। এক কথায় স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি মুক্তিযোদ্ধারা যেন তারুণ্যের মাঝে বেঁচে রয়েছে। বিজয় দিবসের সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত চট্টগ্রামের সড়কগুলো ১৬ ডিসেম্বর বিজয় মিছিলে আর স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে এই এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কারণেই।

মুক্তিযুদ্ধের এ বিজয়ের প্রথম অর্ঘ্য হচ্ছে লাল সবুজের পতাকা। এমনও দেখা যায় শিশুদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিচ্ছবি। শিশুদল গায়ে কাদা মেখে ও হাতে বাঁশের তৈরি বন্দুক নিয়ে বিজয় মিছিলে অংশ নেয়। লাল সবুজের পতাকাও শোভিত থাকে। স্বাধীনতার ৫০ বছরের চিত্র যেন একদিনেই ফুটিয়ে তুলতে চায় তৃতীয় প্রজন্ম। তারা দেশ ও জাতিকে জানাতে চায় ‘আমরা বাঙালি, বাংলা আমার মা, বাংলাকে বাঁচাতে আমরা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মত মুক্তিসেনা’।

যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি তারাও যেন আজ গর্জে উঠেছে। বিশাল এ প্রাপ্তির শুভলগ্ন যেন প্রতিনিয়ত জাগ্রত থাকে বাঙালির রক্তে। সেই রক্তের টানেই লাখো বাঙালি বিজয় মিছিলে অংশ নিয়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করেছে অন্তরের অন্তরস্থল থেকে। মুক্তিযোদ্ধারা যেমন পিছু হটেনি, তেমনি তরুণ সমাজও যেন পিছিয়ে না থাকে উন্নয়নশীল এদেশের উন্নয়নে। আজ আর যুদ্ধ নয়, তৃতীয় প্রজন্মের অগ্রগামীতায় চলবে আবিষ্কার আর পাওয়ার পালা। শোষিত সেই ব্রিটিশ থেকে পাকিস্তান পর্যন্ত সকলকেই ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে স্বাধীনতার সূর্য টিকিয়ে রাখার শপথে বাঙালি আজ স্বাধীন দেশের নাগরিক। এ নাগরিকত্বই বিশ্বের দরবারে এদেশকে ফুটিয়ে তোলার প্রথম সনদ।

এক মা, এক দেশ আর একই মাটির সমন্বয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের গড়া বাংলাদেশ। লালসবুজ পতাকার আড়ালে রয়েছে এদেশের সবুজ প্রকৃতি ও শহীদদের রক্তে ভেজা রক্তিম আভা। মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিময় রক্তে গাঁথা সেই লাল সবুজ পতাকা। বিজয় দিবসে চট্টগ্রামের আনাচে কানাচে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে ‘নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুর’। প্রতিবছর ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে নানা বক্তব্য উঠে আসছে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে একটি বাংলাদেশ।













