৬ নভেম্বর ২০২৫

মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জমির দখল ছাড়তে ৪০ লাখ টাকা চাইলেন আ.লীগ নেতা !

সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »

কক্সবাজারের চকরিয়ার খুটাখালীতে এক প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জমি জবর-দখল করে নিয়েছে বিএনপির ওয়ার্ড সভাপতি থেকে বর্তমানে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ বহনকরা সাবেক এক ইউপি সদস্য। মুক্তিযোদ্ধা ও তার স্বজন ছয় পরিবারের নামে খতিয়ানভুক্ত জমি হলেও প্রতাপশালীদের সঙ্গী করে রাতের আঁধারেই প্রায় ২০ একর সমেত গবাধিপ্রাণী চারণ ভূমিটি দখল করে নেয়া হয়। তা রদ করতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আদালতের আশ্রয় নিলে ওই জমিতে ১৪৪ ধারা জারি করে আদালত।

উক্ত জমি খতিয়ানি মালিকদের ছেড়ে দিতে নির্দেশনা দেয়া হলেও আদালতের সেই আদেশ তোয়াক্কা-ই করছেন না ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিনের সিন্ডিকেট। ক্ষমতার দাপটের কাছে অসহায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সমঝোতায় দখল ছাড়ানোর প্রক্রিয়া চালায়। এ সংক্রান্ত এক বৈঠকে জমির দখল ছাড়তে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও তাদের স্বজনদের কাছ হতে ৪০ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে। এক টাকা কম হলেও জমি ছাড়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন দখলকার জসিম উদ্দিন।

বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড’ কক্সবাজার জেলা শাখার আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ আহামদের ছেলে ব্যাংকার হাসান ফারুক। এ সময় তার (হাসানের) মা হাসিনা বেগম, চাচি ছেনোয়ারা বেগম, ফুফি রাবিয়া খাতুন, চাচাত ভাই মাঈনুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম মানিক, সাইনুল ইসলাম (প্রতিবন্ধি)সহ জমির মালিক ছয় পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে হাসান ফারুক উল্লেখ করেন, চকরিয়ার খুটাখালীর কৈয়ারখালী এলাকায় ১১টি খতিয়ানের বিপরীতে তাদের পরিবারের ২০ একর জমি রয়েছে। এ জমি মহিষ, ছাগল, গরুসহ অন্যান্য গবাধি পশু লালনে ব্যবহার করা হতো। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাবা মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ আহমদ মারা যান। এর এক মাস না যেতেই সরকার অনুযায়ী দল পরিবর্তন করা প্রভাবশালী জসিম উদ্দিন সিন্ডিকেট করে রাতের আঁধারে সশস্ত্র মহড়ায় জমিটি দখল করতে যান। খবর পেয়ে বাঁধা দিতে গেলে মুত্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের প্রহার করে পরবর্তীতে জমিতে গেলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। এরপর এডিএম কোর্টের শরণাপন্ন হলে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। ওই জমির দিকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও অন্য অংশীজনদের দেখলে অস্ত্র হাতে তাড়ে আসে দখলদাররা।

তিনি আরও বলেন, আদালতের নির্দেশনা জানার পর হত্যার হুমকি পেয়ে জিডি করা হয়। এতকিছুর পরও আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রপার সহযোগিতা না পেয়ে দখলকারদের সাথে সমঝোতার চেষ্টা চালায়। এ নিয়ে সম্প্রতি এক বৈঠকে জসিম দখল ছাড়তে তাদের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা দাবি করে। এক টাকা কম হলেও সমজোতা হবে না বলে ছাপ জানিয়ে দেয়া হয়। নিজে এবং পরিবার ও গোষ্ঠীর অন্য পুরুষরা যে যার মতো চাকরি ও ব্যবসা নিয়ে ব্যস্থ থাকায় বাহু বলে তাদের মোকাবিলা করা অসম্ভব। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সু-দৃষ্টি কামনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে, সরবরাহ করা এক অডিও বার্তায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পক্ষে হাসান বলছেন- দখলে আপনাদের কতটাকা ব্যয় হয়েছে বললে আমরা দিয়ে দিবো। মুল অভিযুক্ত জসিম উত্তরে বলেন, আমাদের ২০ লাখ টাকা খচর হয়েছে, এখন ৪০ লাখ টাকা দিলে আমরা ছেড়ে দেব। মাত্র ৫ কানি জমির দামই তো! এর এক টাকা কম হলেও সমঝোতা হবে না।

অভিযুক্ত সাবেক ইউপি জসিম উদ্দিনের মুঠোফোনে বিকেলে কল করা হয়, সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে দখল ও ৪০ লাখ টাকা চাঁদাদাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, একটা মিটিংয়ে আছি সেটা সেরে কল বেক করছি। তিনি কল না করায় সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে আবার কল দেয়া হয়, দুইবার কল রিসিভ করে অন্যদের সাথে আড্ডার কথোপকথন শোনালেও প্রশ্নের কোন উত্তর করেননি।

পরে স্থানীয় সচেতন একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জসিম সবসময় সরকারি দলের রাজনীতি করেন। চারদলীয় জোটের আমলে বিএনপির দায়িত্বশীল ছিলেন, এখন ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। সরকার দলীয় উপজেলা পর্যায়ের ক্ষমতাধর এক নেতার ছায়ায় তিনি দখল-বেদখলসহ নানা অপরাধ করলেও পুলিশ তার পেশমও ছিড়তে পারে না।

এসব বিষয়ে চকরিয়া থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী জানান, জমি দখলে বিষয়টি অবগত হয়েছি- কিন্তু চাঁদাদাবির ঘটনা জানা নেই। ভুক্তভোগী পরিবার চাইলে নিয়মের ভেতর সকল আইনী সহযোগিতা দেয়া হবে।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ