তারেক মাহমুদ »
আসছে ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন। ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে প্রতীক বরাদ্দ কার্যক্রম। নগরজুড়ে বইছে নির্বাচনী আমেজ। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা শুরু করেছেন গণসংযোগ। ছাপাখানাগুলোতেও শুরু হয়ে গেছে ব্যস্ততা। নির্বাচনী ব্যস্ততার পাশাপাশি নগরজুড়ে থেমে নেই মুজিববর্ষ পালনের প্রস্তুতি। এরমধ্যে করোনার ঝুঁকি বাংলাদেশে সত্যে পরিণত হলো। বাংলাদেশে প্রথম তিনজন নোভেল করোনা ভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। আরো তিনজনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। করোনার প্রভাব বিস্তার রোধে সরকার নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করলেও করোনা আতঙ্কে মুজিববর্ষ ও নির্বাচনী আমেজ হারিয়ে ফেলার উপক্রম হয়েছে এমনটাই জানিয়েছেন নগরবাসী।
এদিকে, জনস্বাস্থ্য ও জনগণের সুবিধার বিষয়টি মাথায় রেখে মুজিববর্ষের কোন অনুষ্ঠান বাতিল না করে সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। ক্ষুদ্র পরিসরে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের আয়োজন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সামাজিক অনুষ্ঠানে কম লোক সমাগমের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিদ্যালয় বন্ধ বা খোলা রাখার সিদ্ধান্তে বিকালে বৈঠকে বসবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ইতোমধ্যে নগরীর সব স্কুল গুলোতে করোনা ভাইরাস নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার কর্মসূচি শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে স্কুলের বিভিন্ন জায়গায় ব্যানার পোস্টারিং করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনা ভাইরাস যেহেতু ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, নানা সচেতনতা অবলম্বন করেই তারা তাদের প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। গণসংযোগে যেহেতু জনসমাগম বেশি হয় তারা সবাইকে মাস্ক ব্যবহার ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। করোনা আতঙ্কে ছোট পরিসরে সভা-সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তারা।
নগরবাসীরা বলছেন, মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে অতি উৎসাহী তারা। যেহেতু এসব অনুষ্ঠানে জনসমাগম বেশি হবার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই এর মাধ্যমে করোনা দ্রুত প্রভাব বিস্তার করতে পারে। সরকার থেকে আতঙ্কিত না হবার পরামর্শ দেয়া হলেও একটু তো ভয় কাজ করেই।
নগরবাসীর দাবি, চট্টগ্রাম শহরে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোক সমাগম ঘটে। তাই সচেতনতামূলক প্রচারের পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে মাস্ক ও স্যানিটাইজার সরবরাহ করা উচিত। যাতে সবাই নিরাপদে থাকতে পারে।
উত্তর আগ্রাবাদের বাসিন্দা ইউনুস মিয়া জানান, বাংলাদেশে তিনজন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। খবরটি জানার পর মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাসায় জীবাণুনাশক সাবান কিনেছি। পরিবারের সবাই মাস্ক ব্যবহার করছি।
লালখানবাজারের বাসিন্দা আবু তৈয়ব বলেছেন, করোনা ভাইরাসের খবর পেয়ে আপাতত আমার ছেলের বিয়ে স্থগিত করে দিয়েছি। আপাতত উৎসবের চাইতে সবার সুস্থ থাকাই মুখ্য বিষয়।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির বাংলাধারাকে জানান, করোনা এখনো কোনরুপ মহামারি আকার ধারণ করে নি। তবে আগেভাগেই আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। বাইরে থেকে এসে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। যতক্ষণ হাত ধোয়া না হবে ততক্ষণ মুখে নাকে হাত দেয়া উচিত হবে না। এদিকে একটু লক্ষ্য রাখা। সেই সাথে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বাংলাধারাকে বলেন, আমরা মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সীমিত পরিসরে লোকসমাগম রেখে জনসংযোগ করার পরামর্শ দিয়েছি। জনসংযোগের পাশাপাশি জনসচেতনতা তৈরিতে তাদেরকে অবদান রাখতে অনুরোধ করেছি।
এদিকে, গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। প্রতিদিন ২-৩টি করে ওয়ার্ডের তালিকা করে ব্যাপক গণসংযোগ করছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী ওয়ার্ড ভিত্তিক কর্মসূচির প্রথম দিনে পাথরঘাটা, বকশিরহাট ও দেওয়ান বাজার ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেছেন। মঙ্গলবার (১০ মার্চ) তিনি দক্ষিণ পতেঙ্গা, উত্তর পতেঙ্গা দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করবেন। বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন সোমবার হজরত আমানত খান (র.) মাজার জেয়ারত করে আশপাশের এলাকায় গণসংযোগ করেন। মঙ্গলবার তিনি গণসংযোগ করবেন দক্ষিণ পাহাড়তলী, জালালাবাদ ও পাঁচলাইশ ওয়ার্ডে।
এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, প্রতিদিন ২-৩টি ওয়ার্ডে গণসংযোগ করবো আমি। সোমবার (০৯ মার্চ) তিনটি ওয়ার্ডে হেঁটেই গণসংযোগ করেছি। ভোটারদের উদ্দেশে আমি বলছি-সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পরিকল্পিত নগর গড়ে তুলতে নৌকায় ভোট দিন।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম












