বাংলাধারা ডেস্ক »
‘বিদেশি ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বর্তমানে স্বস্তিদায়ক অবস্হানে থাকলেও ২০২৪ সালের পর দায়দেনা পরিশোধের চাপ বাড়বে। এজন্য এখন থেকে একটি কর্মপরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন, কীভাবে পরিস্হিতি মোকাবিলা করা যায়। তা না হলে ভবিষ্যতে জটিলতা তৈরি হতে পারে।’
বৃহস্পতিবার মেগা প্রকল্পগুলো নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন।
আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মেগা প্রকল্পে নেওয়া বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে চাপ তৈরি হবে। এজন্য এখনই প্রস্ত্ততি গ্রহণের পরামর্শ দেন তিনি।
ভাচুর্য়াল পদ্ধতিতে আয়োজিত এই আলাপচারিতায় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে মোট দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বিদেশি দায়দেনা পরিশোধ করা হয় ১ দশমিক ১ শতাংশের মতো। ২০২৬ সাল নাগাদ তা দ্বিগুণ হতে পারে। তখন বাংলাদেশ সমস্যায় পড়বে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি আসলে নির্ভর করবে ঐ সময়ে দেশের রিজার্ভ পরিস্হিতি কেমন থাকে, অর্থনীতি কতটা সুসংহত থাকে, তার ওপর।’
২০টি মেগা প্রকল্পের পরিস্হিতি বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, ‘যেসব উত্স থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে, তাতে বাংলাদেশ উপকৃত হবে। ২০০৯ সাল থেকে বড় প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে একধরনের জাতীয় ঐকমত্য আছে। বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখা যায় বলে রাজনীতিবিদরাও এতে আগ্রহ দেখান। কিন্তু এই মুহূর্তে যেভাবে বাংলাদেশের দায়দেনা বাড়ছে এবং ঋণ পরিশোধের সময় এগিয়ে আসছে, তা আগামী দুই বছর পর বাংলাদেশের জন্য আর্থিক খাতে চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। বড় প্রকল্পের ক্ষেত্রে রাশিয়া, চীন ও জাপানকেই বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হবে। গ্রেস পিরিয়ড বা রেয়াতকাল কম হওয়ায় চীনের ঋণ পরিশোধের সময়সীমা কম। এজন্য ঋণ পরিশোধে চীনের অর্থ সবার আগে পরিশোধ করতে হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় বলেন, ‘এ পরিস্হিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনে ঋণ পরিশোধে পুনঃতপশিল করা যেতে পারে। যদি ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর দরকার হয়, সেটিও করা যেতে পারে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার স্হিতিশীল রাখতে হবে।’
ড. দেবপ্রিয় মনে করেন, মেগা প্রকল্প যতই যৌক্তিক হোক না কেন, তার জন্য শিক্ষা, স্বাস্হ্য ও সামাজিক খাতকে উপেক্ষা করা চলবে না। অথচ বাজেটে স্বাস্হ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ জিডিপির তুলনায় কমে যাচ্ছে। মেগা প্রকল্পের তালিকার অন্যতম হলো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্প, কর্ণফুলী নদীতে টানেল নির্মাণ, মেট্রোরেল ইত্যাদি। এসব প্রকল্পে প্রায় ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ৬২ শতাংশ বিদেশি ঋণ। ২০টি প্রকল্প ২০২৮ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও চলতি দশকে সব কটি শেষ করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন তিনি। কারণ ইতিমধ্যে কয়েকটি মেগা প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নে একধরনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব রয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২ বিলিয়ন আর সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার যাই হোক, আইএমএফের কাছে অর্থ নেওয়ার প্রয়োজন আছে। এর ফলে মধ্য মেয়াদে অর্থনীতি স্হিতিশীল রাখতে সহায়তা করবে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। আইএমএফের ঋণ নিলে বিদেশি বিনিয়োগকারী ও উন্নয়ন সহযোগীরা একধরনের আস্হা পাবেন। তারা মনে করেন, বাংলাদেশকে একধরনের পরিবীক্ষণ ও নজরদারিতে রাখছে আইএমএফ। তিনি এই প্রসঙ্গে সংকটে পড়া শ্রীলঙ্কার আইএমএফের অর্থ না নেওয়ার সিদ্ধান্তের উদাহরণটি তুলে ধরেন।













