মেডিকেলে চান্স পেলেন ৪ বছর বয়সে মা হারানো অধম্য কিশোরী তানজিনা
৫ বছর বয়সে মাকে হারান তানজিনা। মা মারা যাওয়ার পর নানার বাড়িতে নানা-নানী ও মামা-মামীদের পরম স্নেহে বেড়ে ওঠছিল তিনি। সব বাঁধাকে জয় করে এবারে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তানজিনা। এমন খবরে খুশির চেয়ে পরিবারটির পিছে তাড়া করছে পড়াশোনার খরচের চিন্তা।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ফটিকছড়ি পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড দক্ষিণ রাঙ্গামাটিয়া দানু বাপের বাড়ির মরহুম আলমনারার একমাত্র সন্তান তানজিনা আলম। দক্ষিণ রাঙ্গামাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ ও ফটিকছড়ি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ-৫ ও ফটিকছড়ি সরকারি ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি-তেও জিপিএ-৫ পেয়ে ২০২৪-২৫ সেশনের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ৪৭০৭তম স্থান অর্জন করে হবিগঞ্জ জেলা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন এ অদম্য কিশোরী।
তার এমন সফলতায় হৃদয় ছুঁয়েছে ইউএনও মো: মোজাম্মেল হক চৌধুরীর। তাইতো তাকে অভিনন্দন জানাতে সন্ধ্যায় আকস্মিকভাবে হাজির হন তার নানার বাড়িতে। ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি আর্থিক অনুদান ও প্রদান করেছেন। আর এই মুহূর্তটা ফ্রেমবন্দি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় দিলেন, মুহূর্তেই প্রশংসার জোয়ারে ভাসেন ইউএনও।
হৃদয় মোস্তফা নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী সেই ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, `ফটিকছড়িবাসী আজ গর্বিত এমন একজন ইউএনও পেয়ে। আমরা এমন এমন একজন ইউএনও চেয়েছিলাম। এমন মানবিকতা ও সহানুভুতি বিদ্যমান থাকুক আজীবন। স্যালুট ইউএনও স্যার।’
হার না মেনে তানজিনার এমন সফলতায় খুশি প্রতিবেশী ও স্বজনেরা। তাকে সর্বোচ্চ শেখরে পৌঁছে দিতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার আহবান এলাকাবাসীর।
তানজিনার মামা মো: মনছুর আলম বলেন, তানজিনার কৃতিত্বে আমরা সবাই বিষ্মিত। অনেক কষ্ট করেছে আমার ভাগ্নিটি। পড়ালেখার খরচ চালানো অনেক কষ্টের ছিল তারপরেও তার অদম্য ইচ্ছার ফলে আমরা তা চালিয়েছি। আমাদের বংশের নাম উজ্জল করবে সে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এখন তার পড়ালেখার খরচ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি যদি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষরা দেখে তাহলে ভালো হয়।
মেডিকেল এ চান্স পাওয়া তানজিনা আলম বলেন,”বড় মামীর মুখে শুনেছি আমি যখন ছোট ছিলাম আমার মা নাকি বলতো আমি বড় হয়ে ডাক্তার হবো। মায়ের লালিত স্বপ্ন বুকে নিয়ে পথ চলেছি। পড়ার টেবিলে সবসময় রাখতাম ডাক্তারের স্টেথোস্কোপ ও এপ্রোন। পড়াশোনা চালিয়ে নিতে নানা ও মামাদের পাশাপাশি আমার পাশে থেকেছেন শিক্ষকেরাও। মায়ের স্বপ্ন পূরণ করে মানবিক ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন আমার। আমি সবার কাছে দোয়া চাই। ”
ইউএনও মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী তানজিনা কঠোর পড়ালেখার মাধ্যমে মেডিকেলে সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু টাকার অভাবে ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা ছিল। বিষয়টি নজরে আসায় তার ভর্তিসহ আনুষঙ্গিক খরচের জন্য কিছু সহায়তা করেছি। ভবিষ্যতেও উপজেলা প্রশাসন তানজিনার পাশে থাকবে। আমরা সকল প্রতিভাবানদের শিক্ষাজীবনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে চাই।’













