২৩ অক্টোবর ২০২৫

এস কে এম মোকাম্মেল সিয়াম’র ‘সায়াহ্নের বহ্নি’

সায়াহ্নের বহ্নি

১.

কোন সুদূরের ডাকে আমার এ মন কেঁপে উঠে
আমি থাকি ভবে মজে লাভ ক্ষতির খেলা
কেঁপে উঠে কোন সে ডাকে সুবিন্যস্ত মেলা
কোন গহনের মায়ার গলায় কে আমাকে ডাকে?

কোন প্রহরের মধুর বাতাস আবার প্রাণে আসে
মায়ার বাঁধন কেটে আমি সওদা করে ফিরি
জীবন যৌবন লগ্নি করে দুঃখ ফেরি করি
কোন জোড়া চোখ আবার আমার দু’চোখেতে ভাসে?

কোন সে গানের দরদে আজ চোখে আসে জল
আমার দু’চোখ বহু আগে হেরি কোমলতা
হারানোতে পাথর হলো সয়ে আগুন ব্যথা
কোন মায়ার জোয়ারে ভিজে আখি পাপড়িদল?

কোন প্রানের লাগি আজি জাগে হাহাকার
কবরে কে শয়ান ছিলো হরেক রকম ফুলে
কে মাটিতে সমাপিত চোখের নোনা জলে
কে জাগায় আবার কাঁপন প্রাণে বারংবার?

আমি ছিলাম দুঃখে বিলীন আত্মাহীন এক নদী
দেহের মাঝে আগাগোড়া বিরাণ বালুচর
কে জাগালো আবার তাতে প্রেমের প্রাণের বর
কোন সে জলে পুড়তে চায় মন দুঃখ নিরবধি?

কোন সুদূরের ডাকে আমার এ মন কেঁপে উঠে
আমি থাকি ভবে মজে লাভ ক্ষতির খেলা
কেঁপে উঠে কোন সে ডাকে সুবিন্যস্ত মেলা
কোন গহনের মায়ার গলায় কে আমাকে ডাকে?

২.

আমার যখন দৃষ্টি নত তোমার নয়ন পরে
আমার দেহে জাগলো প্রাণ মায়ার অস্তাচলে
কোন সুদূরের গহন হতে তুমি ডেকেছিলে
আমার ছিলো দৃষ্টি নত তোমার নয়ন পরে।

তুমি ছিলে ঐশ্বর্য এক অন্য মায়ার ভূবন
সাদামাটা তখন আমি ভুল পৃথিবী পরে
জনাকীর্ণ ভীড়ে ছিলাম অলীক স্বপ্নভরে
কোলাহলে ঝাপসা ছিলো তোমার মায়ার কূজন।

আমার তখন ব্যস্ততা খুব জীবন বিকিকিনি
তুমি ছিলে আমার জীবন বুঝতে পারিনি
তাইতো আমার জীবন রেখে অনেকখানি দূরে
জড়ালাম রূঢ় ধুম্রজালে, ফিরতে পারিনি।

তোমার প্রাণে এমন রোধন বুঝিনি প্রিয়তমা
তাই কি প্রাণ আমার তুমি এমন অভিমানে
ফিরে গেলে আকাশ পানে উড়াল পাখির প্রাণে
আমার এমন বিরাট কসুর করোনি তুমি ক্ষমা-

বেলা শেষে আমার এখন আত্মাহীন এই দেহ
শুন্য ভবে আমি সরব তোমায় খুজে ফিরি
প্রাণহীন এই দেহ নিয়ে কাঠসংসারে ঘুরি
অমোঘ জ্বালার আগুন বুকে ক্লান্ত ভারবহ।

আমার যখন দৃষ্টি নত তোমার নয়ন পরে
আমার দেহে জাগলো প্রাণ মায়ার অস্তাচলে
কোন সুদূরের গহন হতে তুমি ডেকেছিলে
আমার ছিলো দৃষ্টি নত তোমার নয়ন পরে।

৩.

আর কভু পাবেনা তোমায় নদীর পলল ঘাস
সুললিত নদীর জল তোমার পানে চেয়ে
কাতর মনে বসে থাকে তোমার পথটি চেয়ে
আর কভু হবে না তাদের তোমার সখ্যবাস।

তোমায় ব্যতিরেকে কাঁদে পাহাড় বিরাণভুমি
শীতল হাওয়া থেমে আছে তোমার অভিমানে
বহে না সে পরশ নিবিড় গেয়ে মধুর প্রাণে
ফোটেনা ঘাস-শুভ্র-ফুল তোমার চরন চুমি।

রবির কিরণ নিভে এলো নীরবতার ঢল
তোমার বিধুর প্রস্থানে আজ কাঁদে ধুমতারা
বিশাল বিজন আকাশেতে জাগলো শোক-সাড়া
চাঁদের চোখে জমে আছে কালো মেঘের জল।

তোমাদের দুয়ারে এসে থেমে আছে নদী
জলরাশি জড়ো হয়ে কাঁদে অবিরত
পাখির কুজন থেমে গিয়ে পরম মৌনব্রত
তোমার শোকে কাতর তারা কাতর প্রাণ অবধি।

পূবের দিকে তোমার বাসের পাহাড় দাঁড়ায় উঠে
নিঃস্বর মুখে পাহাড় শুনে নদীর কাঁদন বোল
দোলে না আর তার উঠোনে কাশবনের দোল
ঘাস, নদী, পাহাড়, পাখি বিরহে আজ লুটে।

আর কভু পাবেনা তোমায় নদীর পলল ঘাস
সুললিত নদীর জল তোমার পানে চেয়ে
কাতর মনে বসে থাকে তোমার পথটি চেয়ে
আর কভু হবে না তাদের তোমার সখ্যবাস।

৪.

আমি যাকে চেয়েছিলাম ফিরবে না সে কভু
পাড়ি দিলো পার্থিব পথ বিরহিনী কাতর
চোখের জলে বিদায় নিলো পরে দুঃখের চাদর
যে আমাকে চেয়েছিলো ফিরবে না সে কভু।

এখন তাকে নিত্য দেখি নীল মেঘেদের পরে
আমার শত ডাকাডাকি শুনতে পায় না ভুলে
ভালোবাসার নীলাভ চোখে তাকায় না তো পলে
আবীর নীল আর সফেদ মেঘে সে নিশিদিন উড়ে।

আমার চোখের নদে প্রিয় উচ্ছ্বসিনী ভাসে
সুবহে সাদিক সন্ধ্যা গভীর তাকে কেবল দেখি
আমার প্রানের পরশ রাণী প্রাণের মাঝে রাখি
ফোটেনা তার প্রাণে পরাগ তবু ফাগুন মাসে।

আমার প্রাণে ডানা ভাসায় আমার পরান পাখি
স্পর্শ করা যায় না তবু তার কারু পালক
নেয় না সে কোনভাবে নাকে সোনার নোলক
শুনেনা সে আমার কাতর ব্যাকুল ডাকাডাকি।

আমার জমজ প্রাণটা ছিলো বড়ো অভিমানী
প্রেমের খোপায় মালা গুঁজে আসার পথে চেয়ে
কেটেছিলো প্রহর বেলা আমার পথটি চেয়ে
ভবের ধুম্রজালটা কেটে ফিরতে পারিনি।

আমার এখন কাটে প্রহর একা কঠিন পথ
প্রানের সাথে প্রানের মিলন- বহু ব্যবধান
হয়েছে মোর আরেক প্রাণের কাতর তিরোধান
একা আমি কেবল ভাসাই শোকের মেঘে রথ।

আরও পড়ুন