জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার»
কক্সবাজার সদরের পিএমখালীর চেরাংঘর বাজারে দিনে দুপুরে চিহ্নিত দুর্বৃত্তরা মধ্যযুগীয় কায়দায় মোরশেদ আলীকে হাতুড়ি পেটা ও কুপিয়ে হত্যা করেছে। বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) বিকেলে সংগঠিত নারকীয় এ ঘটনায় ২৬ জনকে আসামি করে দায়ের করা হয়েছে হত্যা মামলা। বর্বর হত্যাকান্ডটি সিসিটিভির পাশাপাশি অনেকে মোবাইলেও কিছু ভিডিও ধারণ করে। যা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেসব ভিডিওতে স্পষ্ট কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। কিন্তু ওইদিন সকাল হতে এলাকায় না থাকার পরও এ ঘটনার মামলায় পিএমখালী ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার আরিফ উল্লাহকে হয়রানিমূলক আসামি করা হয়েছে। এটি হত্যাকারিদের দোসরদের সুক্ষ্ম ষড়যন্ত্র- হৃদয় বিদারক ঘটনাটির বিচার প্রক্রিয়া ব্যহত করতেই বাদিকে ভুল তথ্য দিয়ে এমনটি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন মেম্বার আরিফ উল্লাহর পরিবার।
সোমবার সন্ধ্যায় সদরের ঝিলংজা বাংলাবজার এলাকায় মেম্বার আরিফের শশুর বাড়িতে আয়োজিত অনাড়ম্বর সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মেম্বার আরিফের স্ত্রী জান্নাতুল নাইমা সুমি লিখিত বক্তব্যে বলেন, বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) আছরের আযানের সময় মায়ের জন্য ইফতার অনুষঙ্গ কিনতে পিএমখালী ইউনিয়নের চেরাংঘর বাজারে যান প্রয়াত ওমর আলীর ছেলে মোরশেদ আলী। সেখানেই দিন দুপুরে প্রকাশ্যে নারকীয় হত্যার শিকার হন মোরশেদ আলী ওরফে বলী মোরশেদ। পবিত্র রমজানে এমন ঘৃণ্য হত্যাকান্ড মেনে নেয়া যায়না। এ ঘটনায় নিহতের ভাই জাহেদ আলী কক্সবাজার সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ে করেন। প্রচলিত আইনে হত্যাকারিদের দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।
তিনি আরো বলেন, অত্যান্ত দু:খ ভারাক্রান্ত মনে বলতে হচ্ছে, হত্যার ঘটনায় কোনরূপ সম্পৃক্ত না থাকার পরও আমার স্বামী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার আরিফ উল্লাহকে ১১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। অথচ তিনি বৃহস্পতিবার সকাল হতে ভারুয়াখালী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার কাসেম সাহেবের সাথে সদর উপজেলা অফিসে দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত ছিলেন। বেলা ২টার দিকে কক্সবাজার শহরের কালুর দোকানস্থ প্রধান সড়কে খুরুশকুল এলাকার ’হাবিবুর রহমান আজাদ’ নামের এক ব্যক্তির দোকানে ব্যবসায়িক আলাপ করতে যান। ৩টা ৩৮ মিনিটে হাবিবুর রহমান আজাদের দোকান হতে বেরিয়ে আনারস ও স্বাদ নামীয় মিষ্টির দোকান হতে রসমালাই ক্রয় করে । বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটের সময় কালুর দোকান হতে বাংলাবাজারের উদ্দেশ্যে সিএনজি রিকশায় রওনা দেন। ওখানে এক ব্যবসায়ীর দোকানে লাগানো একটি সিসিটভির ফুটেজে আমরা এসব চিত্র দেখতে পায়।
আরিফের স্ত্রী বলেন, আমাদের ২য় সন্তান ভুমিষ্ট হওয়াই সন্তানদের নিয়ে আমি ২৫ দিন যাবৎ বাপের বাড়ি বাংলাবাজারে অবস্থান করছি। আরিফ উল্লাহ (আমার স্বামী) আমার সাথে ইফতার করা ও সন্তানদের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে সাড়ে ৪টার দিকে বাংলাবাজার আমার বাপের বাড়িতে পৌছে। যা প্রতিবেশীরা অবগত। আরিফ উল্লাহ ৯নং ওয়ার্ডের দুবারের নির্বাচিত মেম্বার। তার বিরুদ্ধে কোথাও একটি অভিযোগও ছিলনা। সেই আরিফকে সারাদিন এলাকায় না থেকেও হত্যা মামলায় আসামি করা হলো।
তিনি দাবি করেন, সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচনে ৯নং ওয়ার্ডে আরিফ উল্লাহর নিকটতম প্রতিদ্বন্দী ছিলে ’মাইজ পাড়া গ্রামের আবুল কালাম’। আবুল নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আরিফ উল্লাহর কাছে হেরে যায়। এবং নির্বাচন চলাকালীন আবুল কালামের সাথে আরিফ উল্লাহর বিভিন্ন বিষয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছিল। ওসময় আবুল কালাম দেখে নেয়ার হুমকি দেন। যা ওয়ার্ডের সর্বস্তরের মানুষের জানা।
আবার শহিদ মোরশেদ আলীর পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের অত্যান্ত সু-সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এক সময়ের কুখ্যাত ডাকাত ও অস্ত্র মামলার আসামী আবুল কালামের মিথ্যা প্ররোচনায় পড়ে সদ্য প্রয়াত মোরশেদ আলীর পরিবার আমার আরিফ উল্লাহ মেম্বারকে উদ্দ্যেশ্য প্রণোদিতভাবে হয়রানি করতে মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে কালুর দোকান হতে চেরাংঘর বাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে কমপক্ষে ঘন্টারও বেশি লাগে। অথছ মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে ১১ নং আসামী আরিফ উল্লাহ মেম্বার প্রয়াত মোরশেদ আলীর ’বুকের বাম পার্শ্বে হাতুড়ী দ্বারা আঘাত করে তেথলানো জখম করে’।
আপনাদের কাছে (সাংবাদিক) প্রশ্ন রাখলাম, কালুর দোকান হতে চেরাংঘর বাজারে যেতে যদি ১ঘন্টা সময়ও লাগলে, আমার স্বামী আরিফ উল্লাহ মেম্বার ৩টা ৪৫ মিনিটে রওনা দিয়ে ৪টা ২০ মিনিটের ভিতর কিভাবে হত্যাকান্ডে সামিল হল? যদি সে হত্যাকান্ডে সামিল হত প্রত্যক্ষদর্শী ও বিভিন্নজনের মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিও চিত্রে তার ছবি ও নাম প্রকাশ করলনা কেনো? কেনইবা হঠাৎ এজাহারে গোপনে তার নাম উল্লেখ করা হল? এতে স্পস্ট নই কি আমার স্বামী আরিফ উল্লাহ কে উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে উক্ত মামলায় হয়রানির উদ্দেশ্যে এজাহারভুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমরা ১১নং আসামীর পক্ষে উক্ত হয়রানি মূলক মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, আরিফ মেম্বারের মা নুর জাহান বেগম, ছোট ভাই রহিম উল্লাহ, জসিম উদ্দীন, সেলিম,খালেদ আশরাপ বাপ্পী,রিহাত, শুশুর আবদুল গফুর, শাশুড়ি রোকেয়া বেগম।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মামলার বাদি জাহেদ আলী জানান, হত্যাকান্ডটি সেদিন সংঘটিত হলেও মোর্শেদকে হত্যার পরিকল্পনা করছে দীর্ঘদিন ধরে। আরিফ মেম্বার তখন ঘটনাস্থলে ছিলনা তারপরও কেন তাকে আসামী করা হলো এমন প্রশ্নের জবাবে মামলার বাদী বলেন। আরিফ ওই সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য এবং হত্যার মুল পরিকল্পনায় তার ইন্দন রয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক করে দিয়ে কৌশলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছে সে।













