২৪ অক্টোবর ২০২৫

রক্তাক্ত সেই জুলাই এসেছে আবার

আজ ১ জুলাই। ঠিক এক বছর আগে, এই দিনে শুরু হয়েছিল ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমেছিলেন। ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’—এই স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেছিল দেশের প্রায় সব ক্যাম্পাস।

২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্টের একটি রায়ের বিরুদ্ধে এই আন্দোলনের সূচনা হয়। রায়টিতে ২০১৮ সালে কোটা বাতিলের পরিপত্র বাতিল করে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ মোট ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ঢাবিসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।

১ জুলাই ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে মিছিল বের হয়ে কলাভবন, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে এসে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শেষ হয়। সেখান থেকেই ঘোষণা করা হয় চার দফা দাবি। দাবিগুলো হলো—২০১৮ সালের কোটা বাতিলের পরিপত্র বহাল রাখা,বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে কমিশন গঠন,সংবিধান অনুযায়ী শুধুমাত্র অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য কোটার ব্যবস্থা এবংকোটাব্যবস্থা সংস্কারে আইনগত চূড়ান্ত সুরাহা।

শিক্ষার্থীরা তিন দিনের আলটিমেটাম দেন, সমাধান না হলে গণপদযাত্রা ও লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হয়। আন্দোলনটি পরে রূপ নেয় টানা ৩৬ দিনের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ হয়। চবির শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে ভিজে আন্দোলনে অংশ নেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতীকী সড়ক অবরোধ করা হয়। রাজশাহী, জগন্নাথসহ দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে বিভিন্ন কর্মসূচি।

এই আন্দোলনের এক বছর পূর্তিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, যার শুরু হবে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত দিয়ে। বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপি আয়োজন করেছে আলোচনা সভা। এতে আন্দোলনে নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যরা এবং রাজনৈতিক নেতারা অংশ নেবেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী ‘জুলাই স্মৃতি উদযাপন অনুষ্ঠানমালা’, যা চলবে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত। আজ থেকে সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে দোয়া ও প্রার্থনা, ‘জুলাই ক্যালেন্ডার’ প্রকাশ এবং গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। এই স্বাক্ষর সংগ্রহ চলবে ১ আগস্ট পর্যন্ত।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য চালু হচ্ছে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি শিক্ষাবৃত্তি’। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ ‘জুলাই ক্যালেন্ডার’ উদ্বোধন করবেন।

মাসব্যাপী কর্মসূচির শেষ দিন ৫ আগস্ট (৩৬ জুলাই) দেশজুড়ে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিজয় মিছিল, ড্রোন শো, এয়ার শো, সংগীতানুষ্ঠান ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন থাকবে।

গত বছরের এই দিনে শুরু হওয়া এই অভ্যুত্থান ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করে। ঘটনাটি ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’ বা ‘জুলাই বিপ্লব’ নামে পরিচিতি পায়।

এআরই/বাংলাধারা

আরও পড়ুন