২৮ অক্টোবর ২০২৫

রাইড শেয়ারিং—বেড়েছে যাত্রী, চালকদের ভোগান্তি (২য় পর্ব)

শাহ আবদুল্লাহ আল রাহাত  »

দেশের শহর গুলোতে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে যানবাহন। আর যানবাহন সৃষ্ট যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩২ থেকে ৩৩ লাখ র্কমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, বেড়েছে অস্বস্তি। এই অস্বস্তির মাঝে স্বস্তি এনে দিতে ৬ বছর আগে দেশে যাত্রা শুরু করেছিল রাইড শেয়ারিং সেবাগুলো। যদিও বিশ্বের বহু দেশে অনেক আগে থেকেই ইন্টারনেট ভিত্তিক সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহার করে ইনকাম করার প্রচলন রয়েছে।

স্বাধীন বাংলায় যে কয়েকটি বৈপ্লবিক উন্নতি সাধিত হয়েছে তার মধ্যে রাইড শেয়ারিং সেবা অন্যতম বলছেন অনেকেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেবাকে গুরত্ব দিয়ে দশম জাতীয় সংসদের অধিবেশনে সমাপনী বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘রাইড শেয়ারিং বা অ্যাপ ভিত্তিক সেবার মাধ্যমে দেশে এক লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।’

তবে ভোগান্তি আর কমানো যায়নি, করোনার পরিস্থিতিতে র্দীঘ দিন বন্ধ থাকার পর চালকদের ইনকাম কমার পাশাপাশি বেড়েছে চালক ও যাত্রী উভয়ের ভোগান্তি আর অস্বস্তি।

চট্টগ্রাম মহানগরে নিয়মিত রাইড শেয়ারিং সেবা নেওয়া আবরার বাংলাধারাকে বলেন, রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে একই পথে যাওয়া আসার ভাড়া এক থাকে না। যাওয়ার পথে যে পথের দূরত্ব ৩ কিলোমিটার আসার পথে সে দূরত্ব বেড়ে হয়ে যায় ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার। এছাড়া যাত্রাপথে কিলোমিটারের তারতম্য তো রয়েছে।

রাইড সেবা নেওয়া শিক্ষার্থী নাঈম বাংলাধারাকে বলেন, ইদানিং রাইড শেয়ারিং সেবাগুলো প্রথমে ভাড়া ১০০ টাকা দেখালেও গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর পর সেটি বেড়ে হয়ে যায় দ্বিগুন। এ ব্যাপারে চালকদেরও তখন কিছু করার থাকে না।

এদিকে, চট্টগ্রাম মহানগরে রাইড শেয়ারিং সেবার সাথে যুক্ত আরমান জানান, মাঝে মাঝে যাত্রীরা অ্যাপ থেকে যে মূল্যে রাইড শেয়ারিং সেবা নেয় সেটি গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর পর বেড়ে যায়। এতে যাত্রীদের সাথে আমাদের বাকবিতন্ডায় যেতে হয়।

২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর দেশে অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা প্রথম শুরু করে উবার। তবে মাঠ পর্যায়ে চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৫ সালে মে মাস থেকে। প্রথমদিকে এটি অনেকটা স্বস্তিদায়ক হলেও বর্তমানে এটি অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অ্যাপ ব্যবহারকারীদের অনেকে অভিযোগ করেছেন দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো, অ্যাপ ব্যবহারকারীদের সাথে খারাপ ব্যবহার, অফ লাইনের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা চাওয়া, যাত্রীরা গন্তব্যস্থলে যাওয়ার পর অনলাইনে তা বাতিল করার অনুরোধ করার ব্যাপারে।

এছাড়া অনেকে অভিযোগ করেছেন হেলমেট নিয়ে। তানিম নামে এক যাত্রী জানিয়েছেন, অ্যাপ সেবার সাথে নিবন্ধিত অধিকাংশ মোটর বাইকে যে হেলমেটগুলো ব্যবহার করা হয় সেগুলো শুধুমাত্র পুলিশের হাত থেকে রেহায় পাওয়ার জন্য। তাছাড়া হেলমেট গুলো সুরক্ষা দেওয়ার জন্য উপযোগী নয়।

অফলাইনে রাইড শেয়ারিং সেবা ব্যবহারের মাধ্যমে বেড়েছে নিরাপত্তা জনিত সমস্যা, ২০১৯ সালে ২৫ আগস্ট রাতে মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভারে ঘটেছে এমন একটি ঘটনা। মিলন নামে এক রাডারকে খুন করে তার মোটরসাইকেলটি ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। তখন ডিএমপির পক্ষ থেকে বলা হয়, খুনি এবং চিনতাইকারী যাত্রীবেশে রাইডার মিলনের বাইকে চড়েছিল। তবে তৎক্ষনাত পুলিশ খুনিকে শনাক্ত করতে সর্মথ হয়নি। যদি অ্যাপের মাধ্যমে ভাড়ায় ওই যাত্রীকে নেওয়া হতো, তাহলে তার নাম-পরিচয়সহ প্রয়োজনীয় তথ্য তখনই পাওয়া যেত। কিন্তু অফলাইনের মাধ্যমে তাকে তোলায় কোনো তথ্যই সাথে সাথে পাওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে নানা রকম নিরাপত্তা জনিত ঝুঁকির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।

যদিও নিরাপত্তা ও কল্যাণের উপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করে দেশের পরিবহন ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে বিশেষ করে রাইড শেয়ারিং সেবা খাতে শৃঙ্খলা আনয়নে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা ২০১৭ প্রণয়ন করেছিলো সরকার। ২০১৮ সালে জানুয়ারীর ১৫ তারিখ এই নীতিমালা মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর ২০১৮ সালে ২২ ফেব্রুয়ারি প্রথমে প্রজ্ঞাপন আকারে পরে ২৮ ফেব্রুয়ারি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। এই জারিকৃত নীতিমালা ৮ মার্চ ২০১৮ থেকে কার্যকর রয়েছে।

তবে রাইড শেয়ারিং অ্যাপগুলোর অফলাইন ব্যবহার এবং প্রতিষ্ঠান গুলোর উদাসীনতার জন্য বেড়েছে নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং চালক, গ্রাহক উভয়ের ভোগান্তি।

এই ব্যপারে জানতে রাইড শেয়ারিং কোম্পানি গুলোর সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

বাংলাধারা/এফএস/এআর

আরও পড়ুন