চট্টগ্রামের রাউজানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন মো. আবদুল্লাহ মানিক (৩৭) নামের এক যুবদল কর্মী। শনিবার (১৯ এপ্রিল) গভীর রাতে উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের গরিবুল্লাহ পাড়ার ভান্ডারী কলোনিতে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহত মানিক স্থানীয় মৃত আব্দুল মোতালেবের ছেলে এবং ইট-বালির ব্যবসার পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রাত সাড়ে ১২টার দিকে মানিক ভান্ডারী কলোনিতে হানিফ নামে এক পরিচিত ব্যক্তির ভাড়া বাসায় খাবার খেতে যান। এ সময় ১০-১২ জন মুখোশধারী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী কলোনিতে হানা দেয়। তারা প্রথমে শর্টগান দিয়ে গুলি করে এবং পরে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মানিককে নির্মমভাবে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
ঘটনার পরপরই রাউজান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মানিকের মরদেহ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। মানিকের বোন নাছিমা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার ভাইকে খাবারের সময় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ১৫ বছর আগে একজন ভাইকে হারিয়েছি, এবার আরেকজনকে। আমি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।”
নিহতের মা পাখিজা বেগম জানান, “৫ আগস্টের পর ছেলে দেশে আসে। এলাকার পরিস্থিতি ভালো না থাকায় শহরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকত। তবে কিছুদিন ধরে নিয়মিত গ্রামে যাওয়া আসা করছিল। গতকাল রাতে বাড়ির পাশেই এক ভাড়া ঘরে খেতে গেলে তাকে হত্যা করা হয়। আমি এর সঠিক বিচার চাই।”
বিএনপি নেতার অভিযোগ ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
উত্তর জেলা বিএনপির নেতা হাজী জসীম উদ্দিন অভিযোগ করেন, “মানিক যুবদলের একজন নিবেদিত কর্মী ছিল। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে ফজল হক, মামুন ও ফরিদ গ্রুপের সন্ত্রাসীরা। পূর্বেও তার উপর হামলার চেষ্টা হয়েছিল।”
স্থানীয়দের দাবি, রাউজানে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যমান। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দুই গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাতজন নেতাকর্মী খুন হয়েছেন, যা পুরো এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, “ঘটনাস্থল থেকে শর্টগানের দুটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “রবিবার বিকাল পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, থানায় কোনো মামলা হয়নি। ঘটনার তদন্ত চলছে।”
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বারবার একই ধরনের সহিংস ঘটনায় এলাকায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ভেঙে পড়ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপ ছাড়া পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।