৯ নভেম্বর ২০২৫

রাঙামাটিতে কলেজ ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ভিডিও ধারণ করে ফের ধর্ষণ

রাঙামাটি প্রতিনিধি »

রাঙামাটিতে ধর্ষণের শিকার হয়ে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরার পর পূর্বের করা ভিডিও দেখিয়ে আবারও ধর্ষণ করেছে একটি সংঘবদ্ধ পাহাড়ি সন্ত্রাসী দল। এমন অভিযোগে রাঙামাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্রী।

রাঙামাটির বিলাইছড়ির দুর্গম ফারুয়া ইউনিয়নে এগুইজ্জ্যাছড়ি এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।

ধর্ষণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় আসামিরা হলেন- অঞ্জন তঞ্চঙ্গ্যা ওরফে এজেন্ট (৩০), রুজন দাশ (২৪), সুমন্ত চাকমা (২৫), স্নেহাশীষ বড়ুয়া (২৪) ও সুজন দাশ (২৮)। আসামিরা সবাই উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের ফারুয়া বাজারের বাসিন্দা। তারা স্থানীয় আঞ্চলিক দলের সশস্ত্র গ্রুপের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় ভিকটিম ও তার পরিবারকে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে কোণঠাষা করে রেখেছে।

আদালত সূত্র জানায়, ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর এবং আবারও ধর্ষণে বাধ্য হওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ ও হত্যার হুমকির পাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে বিলাইছড়ি থানাকে অবহিত করেন। কিন্তু থানা কর্তৃপক্ষ মামলা না নেয়ায় ওই কিশোরী রাঙামাটির লিগ্যাল এইড অফিসে অভিযোগ করেন।

পরে লিগ্যাল এইড কর্তৃপক্ষ ওই ভিকটিমের পক্ষে প্যানেল আইনজীবী নিয়োগ করে রাঙামাটিস্থ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা করেন। ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ ই এম ইসমাইল হোসেন অভিযোগটি আমলে নিয়ে বিলাইছড়ি থানার ওসিকে এজাহার গ্রহণ ও মামলাটি তদন্তের আদেশ দিয়েছেন বলে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এর পিপি অ্যাডভোকেট মো: সাইফুল ইসলাম অভি। তিনি জানান, লিগ্যাল এইড এর প্যানেল আইনজীবী সালিমা ওয়াহিদা জেনী ভিকটিমের পক্ষে ওই মামলাটি আদালতে দায়ের করেন।

আইনজীবী সালিমা ওয়াহিদা জেনি জানিয়েছেন, ঘটনার পর চিকিৎসা নিয়ে মেয়েটি মাসখানেক আগে রাঙামাটি আদালতস্থ আইনজীবী ভবনে আমার চেম্বারে আসে।

কিন্তু সে মানসিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল এবং আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় ছিলো। তাকে আমরা বিভিন্নভাবে কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে কিছুটা আত্মপ্রত্যয়ী করে তুলি। এরপর তার সার্বিক বিষয়টি পর্যালোচনা করে লিগ্যাল এইড এ অভিযোগ দাখিল করি। পরবর্তীতে লিগ্যাল এইডের নির্দেশনায় আমি মঙ্গলবার ৩০শে আগস্ট রাঙামাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এ এই মামলা করেছি। আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে বিলাইছড়ি থানাকে মামলা নিতে এবং তদন্ত করে রিপোর্ট দাখিল করতে নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি জানান, মূলত: ‘গণধর্ষণের শিকার কলেজছাত্রীকে ঘটনার পর থানায় মামলা না করতে চাপ প্রয়োগ এবং ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে বলে হুমকি দেয় আসামিরা। পরবর্তীতে আসামিরা কলেজছাত্রীকে ভিডিও প্রকাশ করে দেবে; এমন হুমকি দিয়ে আবারও একইভাবে ধর্ষণে বাধ্য করতে থাকে। পরে নিরুপায় কলেজছাত্রীটি আমাদের কাছে আসে এবং লিগ্যাল এইড এর সার্বিক সহযোগিতায় আদালতে মামলা দায়ের করেছে।
এদিকে, কলেজছাত্রীর অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিলাইছড়ি থানার ওসি মোহাম্মদ আলমগীর জানান, মামলার না নেয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। ঘটনার অনেক পরে স্থানীয় এক হেডম্যান অভিযোগটি দিতে এসেছেন। আমি উনাকে বলেছি, ভিকটিম যেহেতু রাঙ্গামাটি শহরে থাকেন সেক্ষেত্রে আদালতে মামলা করতে পারেন কিংবা বিলাইছড়ি থানাতেও মামলা করা যাবে। তবে ভিকটিম ও তার পরিবারকে অবশ্যই আসতে হবে।’

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ই এপ্রিল রাত ৯টায় মামলার বাদী কলেজছাত্রী তাঁর স্থানীয় এক বন্ধুর বাসায় বিঝুর (বৈশাখী উৎসব) দাওয়াত খেয়ে নিজের বাসার বাইরে বের হলে অভিযুক্ত ৫ আসামি ভয়ভীতি দেখিয়ে এগুজ্যাছড়ি ফরেস্ট অফিসের কালভার্ট ব্রিজের নিচে কলেজছাত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণ করে। কৌতূহল বশত: কলেজছাত্রীর বন্ধু তাদের অনুসরণ করে ঘটনাস্থলের দিকে আসেন। পরে কলেজছাত্রী চিৎকার করলে তার বন্ধু এগিয়ে আসেন এবং আসামিদের কলেজছাত্রীর কোন ক্ষতি না করার অনুরোধ করলে তারা ওই বন্ধুকেও কলেজছাত্রীর ওড়না দিয়ে বেঁধে রেখে কলেজছাত্রীকে মারধর ও পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এসময় ৩ নম্বর আসামি সুমন্ত চাকমা ধর্ষণের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে। পরবর্তীতে ১ ও ২ নম্বর আসামি বিষয়টি কাউকে জানালে বা মামলা করলে বাদী ও তার পিতাকে হত্যা এবং ধর্ষণের ভিডিও অনলাইনে ছেড়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। পরে ওই কিশোরী চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালের ‘ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে’ চিকিৎসা নেন। হাসপাতালের ছাড়পত্রেও ‘গ্যাং রেফ’ এর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনার পর ২৩ জুন ৩, ৪ ও ৫ নম্বর আসামি আবারও ধর্ষণের হুমকি দেন। ২৮ জুন কলেজছাত্রী বিলাইছড়ি থানায় মামলা করতে গেলে থানা মামলা নিতে চায়নি। পরে ১২ আগস্ট আত্মহত্যার চেষ্টা করেন কলেজছাত্রী। মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) রাঙ্গামাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে হাজির করে কলেজছাত্রীর মামলার আবেদন জানায়।

আরও পড়ুন