বাংলাধারা প্রতিবেদন »
রাঙামাটিতে জেলা প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে ডিসি বাংলোর পার্ক জোরপূর্বক দখল করে্ ব্যাবসার নামে অসামাজিক ও অনৈতিক কার্যক্রম করে যাচ্ছে পার্কে নির্মিত ‘পাইরেটস’ রেস্টুরেন্টের মালিক নাজনীন আনোয়ার। জেলা প্রশাসনকে নাজেহাল করতে অহেতুক সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন ছলচাতুরীর আশ্রয় নিচ্ছেন নাজনীন আনোয়ার।
গত ১৮/১২/২০১৭ তে ১৩ টি শর্ত সাপেক্ষে মোহাম্মদ হোসেন, পিতা: আবুল হাসেম, সাং- দেবাশীষ নগর, থানা: কোতোয়ালী, জেলা: রাঙ্গামাটি কে দুই (২) বছর মেয়াদী বাৎসরিক ভাড়ার বিনিময়ে ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করা হয়েছিল। পার্কটি মোহাম্মদ হোসেনের নামে ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে পক্ষান্তরে নাজনীন আনোয়ার, পিতা: শাহ আনোয়ার, দুলাই পাড়া, ফতেপুর, জেলা চট্টগ্রাম এবং বর্তমানে ভেদভেদী, মুসলিম পাড়া, থানা কোতোয়ালী, জেলা রাঙ্গামাটি, তিনি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করতে লাগলেন।
অভিযোগ রয়েছে বিগত পার্বত্য চট্টগ্রামের সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ফিরোজা বেগম চিনু এবং তাঁর মেয়ে নাজনীন আনোয়ার প্রভাব খাঁটিয়ে তৎকালিন জেলা প্রশাসক মান্জারুল মান্নানের নিকট হতে দুই (২) বছর মেয়াদী বাৎসরিক ভাড়ার বিনিময়ে জনপ্রিয় এই পার্কটি ব্যবহারের অনুমতি আদায় করে নেন। পার্কটি দখলে নিয়ে নাজনীন আনোয়ার প্রথমেই পাইরেটস নামে (জাহাজের আদলে তৈরী) একটি রেষ্টুরেন্ট তৈরী করেন যা চুক্তির ৮ নাম্বার ধারার সরাসরি লঙ্গন। সেখানে সুস্পষ্ট বলা আছে ‘কর্তপক্ষের লিখিত অনুমতি ব্যতিত পার্কের কোন রূপ পরিবর্তন পরিবর্ধন করতে পারবেন না। পার্ক এলাকায় কোন স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে না।’
এদিকে পার্কে রেস্টুরেন্ট চালু হওয়ার পর থেকে এলাকাবাসী জানিয়ে আসছেন নানান অভিযোগ। হৈ চৈ করে মাইক/সাউন্ড সিস্টেম বাজিয়ে পার্ক সংলগ্ন মসজিদের পরিবেশ নষ্ট করে, এলাকাবাসীর অসুবিধা সৃষ্টি, উচ্ছৃঙ্খলতা এবং ঘুরে বেড়ানোর পরিবেশ নষ্ট হতে থাকে সমানতালে যা অনুমতি প্রদানের ৫, ৬, ৭ নাম্বার ধারার লঙ্গন।
সম্প্রতি উঠে এসেছে আরো অভিযোগ। পার্কটি হয়ে উঠেছে মাদকের নিরাপদ সেবন ও বিক্রয়ের আবাস্থল। গত ৬/১২/২০১৯ এ এলাকাবাসী ও সচেতন নাগরিকদের পক্ষে জেলা প্রশাসক বরাবর ‘ডিসি বাংলো পার্কে অবস্থানরত পাইরেটস রেষ্টুরেন্টে মাদক দ্রব্য সেবন, বিক্রয় এবং অনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধ করা প্রসঙ্গে’ একটি আবেদন করা হয়। সে আবেদনে বলা হয়, সন্ধ্যা ৭.৩০ পর পার্কটি হয়ে উঠে মাদক দ্রব্য সেবন, বিক্রয় এবং অনৈতিক কার্যকলাপের স্থান হিসেবে এবং গভীর রাতে চলে নারীদের অবৈধ কার্যকলাপ।
২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর রাত ১০ টায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রাঙামাটি জেলা শাখার পরিদর্শক শিবনাথ শাহা ও জেলা পুলিশের উপ-পরিদর্শক সাগর এর নেতৃত্বে রাঙামাটি ডিসি বাংলো পার্কে এ অভিযান পরিচালনা করে মাদকসহ হাতেনাতে ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে রাঙামাটি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন পাইরেটস রেষ্টুরেন্টের কর্মচারী/কেয়ারটেকার ইরফান (২৫), সাইফ (২০), নাইম (২৪) ও প্রভাষ চাকমা (২১)।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকএক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, পার্ক ব্যবহারের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও ব্যবহারকারী প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করে অন্যায় ও বেআইনিভাবে পার্কটি দখলে রেখে নিষিদ্ধ কার্যকলাপ চালিয়ে আসছে যা সবাই জানে। এখন কোথায় ডিসি? কোথায় এসপি?এটা উনাদের পার্ক, উনারা যখন চুপ আমরা সাধারণ জনতা আর কি বা করতে পারি বলেন!
পাইরেটসের মালিক নাজনীন আনোয়ার সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পার্কটি মোহাম্মদ হোসেনের নামে হলেও আমরা চারজন অংশীদারী মূলে মালিক। পার্কটি ছাড়ার জন্য প্রশাসন আমদের লিখিত কোন কাগজ দেননি।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ বলেন, দেখুন ব্যক্তিগত ভাবে আমি এই নাজনীন আনোয়ার কে চিনিও না বা উনার সাথে আমার কোন ব্যক্তিগত সম্পর্কও নেই। আমরা সরকার বা জনগণের জন্য কাজ করি। পার্কের সম্পত্তিটি যেহেতু সরকারের সুতরাং তার রক্ষাণাবেক্ষনের দায়িত্বও আমাদের এবং আমি কখনোই উনার নামে মামলা করিনি। উনি বরং আমি ও আমার কর্মচারীদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা সঠিক পথে থেকে দেশ ও জনগণের সেবা করে যাব এবং যাচ্ছি যা আমাদের দায়িত্ব। দুঃখের বিষয় হলো এই নাজনীন আনোয়ার সাংবাদিক সম্মেলনের ব্যানারে সরাসরি আমার নাম উল্লেখ করেছেন যা আমাকে বিব্রত করেছে এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এ আমার জন্য অসন্মানজনক । আমরা দেশ জাতি জনগণের সম্পত্তি রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং কোন অন্যায় অনিয়মের কাছে মাথা নত করিনি, করবো না।
বাংলাধারা/এফএস/এইচএফ/এআর













