২৪ অক্টোবর ২০২৫

রাঙামাটিতে নির্মাণাধীন আইসোলেশন ভবনের দেয়াল ভেঙে পড়লো বসতঘরে

আলমগীর মানিক, রাঙামাটি প্রতিনিধি »

কোনো প্রকার প্রতিরোধক ব্যবস্থা না নিয়ে রাঙামাটি জেলা পরিষদের অর্থায়নে জেনারেল হাসাপাতাল এলাকায় নির্মিতব্য ৫০ শয্যার কোভিড আইসোলেশন ইউনিট ভবনের দেয়াল ভেঙে পড়লো পাশের একটি বসত ঘরের উপর।

ক্ষতিগ্রস্ত বসতবাড়ির মালিক বিনা চৌধুরী জানিয়েছেন, শুক্রবার দিবাগত রাত আটটার সময় আকস্মিকভাবে তাদের বসত ঘরের উপর হাসপাতালের সীমানা দেয়ালটি ভেঙে পড়ে। এসময় আতঙ্কিত হয়ে ঘরের ভাড়াটিয়ারাসহ সকলে মিলে রাস্তায় গিয়ে আশ্রয় নেন।

তিনি অভিযোগ করেন, এই আইসোলেশন ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরুর সময় ঝুঁকিপূর্ণ দেয়ালটির ব্যাপারে একাধিকবার অভিযোগ দেয়ার পরেও জেলাপরিষদ কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। যেকোনো সময় ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা থাকা সত্বেও এই দেয়ালের ধারক মাটি কেটে পাকা ভবন তৈরি করছে। যার ফলে টানা বৃষ্টিতে দেয়ালটি ধ্বসে পড়ে। ভগবানের আশির্বাদে আমরা প্রাণে বেঁচে গেলেও আমাদের ঘরের ক্ষতি হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ঠিকাদার চাকমা জানিয়েছেন, আমি বিষয়টি নিয়ে কাজের শুরুতেই জেলা পরিষদের ইঞ্জিনিয়ারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। তারা বিষয়টি নিয়ে ভাবেননি। আমার কি করার আছে। আমাকে যেভাবে কাজ করতে বলা হয়েছে আমি সেই ভাবে কাজ করেছি।

এদিকে বিষয়টি সম্পর্কে যোগাযোগ করলে রাঙামাটি জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া প্রতিবেদককে বলেন, উক্ত দেয়ালটি গর্ণপূর্ত বিভাগের। আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করেন।

এমন একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেয়ালের পাশে ভবন নির্মাণের আগে বিষয়টি নিয়ে প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ওয়াল থেকে অনেকটা দূরে আমরা ভবনটি তৈরি করছি। আর আমি ওয়াল প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে গেলে বরাদ্দের টাকা পুরোটাই সেখানে খরচ হয়ে যেত। এটা ইতিমধ্যেই গর্ণপূর্ত বিভাগের লোকজন এসে দেখে গেছে। তারা এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।

কম বরাদ্দ বলেই প্রাণহানির মতো দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকা সত্বেও সেখানে ভবন নির্মাণ কাজ কেন শুরু করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া জানান, আমাদের ভবন তৈরির জন্য যে দুর্ঘটনা ঘটেছে এমন তথ্য সঠিক নয়।

এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ওয়াল যারা করে তাদের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এরকম হলেতো আমি বিল্ডিংই করতে পারবো না।

বিষয়টি নিয়ে রাঙামাটির গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অনিন্দ্য কৌশল জানিয়েছেন, আমাকে সিভিল সার্জন মহোদয় বিষয়টি জানিয়েছেন। আমার প্রকৌশলী সেখানে গিয়ে বিষয়টি সরেজমিনে গিয়ে দেখে এসেছেন। সিভিল সার্জনের অনুরোধে উক্ত ভেঙ্গে পড়া ওয়ালটি অপসারণ করে নিবো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঠিকাদার ও প্রকৌশলী জানিয়েছেন, এটা খুবই কাঁচা কাজ করেছে জেলা পরিষদ। তারা বলছেন ৩৫/৪০ বছর আগের একটি সীমানা দেয়াল বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্যমান দেখা সত্বেও এই ওয়ালের ধারক ব্যবস্থা না করে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করার সময় মাটি কাটতে হয়েছে সেই কারণেই এটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ভবন নির্মাণ কাজটি করানো হয়েছে। অলৌকিকভাবেই ঘরের মানুষগুলো বেঁচে গেছে নইলে এতোক্ষণে সেখানে বড় ধরনের প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটতো।

বাংলাধারা/এফএস/এআই

আরও পড়ুন