আলমগীর মানিক, রাঙামাটি »
হাজার-হাজার পাহাড়ি জনসাধারণকে উদ্ভাস্তু বানিয়ে সেই ১৯৬০ সালে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত উদ্ভাস্তু জনগণকে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও দীর্ঘ ৬২ বছরেও এই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এতেও তেমন একটা আক্ষেপ থাকতো না যদি টাকা দিয়ে কিনে হলেও নিয়মিত বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসতো রাঙামাটির বাসিন্দারা। এখনও পাহাড়ের অধিকাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
মাত্র ৬০ হাজার ৩১৫ জন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় এনে সেবা দিয়ে যাচ্ছে রাঙামাটির বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ। যার বিপরীতে চলতি বছরের জুন মাসে বিল আদায় হওয়ার কথা ছিলো ৬ কোটি ৩২ লাখ ৪১ হাজার ৪০০ টাকা। কিন্তু বিল আদায় হয়েছে ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৩৭ হাজার ৫২৫ টাকা।
রাঙামাটির বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, পার্বত্য রাঙামাটির সরকারী-বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ ব্যক্তি পর্যায়ের গ্রাহকদের কাছে প্রায় ১০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে।
রাঙামাটির বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা সহকারী প্রকৌশলী মো. আদিল-উজ-জামান জানিয়েছেন, জেলার সরকারি অফিসগুলোতেই বিদ্যুৎ বিল বাবদ বকেয়া রয়েছে ৫ কোটি ৩২ লাখ ৩৬ হাজার ৮৩৫ টাকা। তার মধ্যে রাঙামাটি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছেই বকেয়া পাওনা ৪ কোটি ৭০ লাখ, পৌরসভার কাছে বকেয়া ৩৮ লাখ ও পুলিশ বিভাগের কাছে বকেয়া পাওয়া রয়েছে ৪৭ লাখ টাকা।
এদিকে রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুর রহমান জানিয়েছেন, বকেয়া রয়েছে এটা সঠিক এবং আমরা গ্রাহকদের কাছ থেকে বকেয়া আদায়ে নিয়মিত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি জানান, আমরা এখনও দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় ভালোই সার্ভিস প্রদান করতে পারছি। প্রতিদিন গড়ে এক ঘন্টা করে লোডশেডিং দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে রাঙামাটির বিদ্যুৎ গ্রাহকদের চাহিদানুসারে প্রতিদিন গড়ে ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও পূর্ণাঙ্গ সুবিধা প্রদান করতে পারছে না বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় জনগণের প্রয়োজনীয় চাহিদানুসারে রাঙামাটিতে বর্তমান সময়ে গড়ে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৪ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৮ মেগাওয়াট।
অপরদিকে কাপ্তাইয়ে চাহিদা রয়েছে ৬ মেগাওয়াটের। প্রতিদিনই চাহিদার বিপরীতে ঘাটতি রয়েছে অন্তত ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এই ঘাটতি পূরণ করতেই বর্তমানে জাতীয় সিদ্ধান্তের আলোকে রাঙামাটি শহরে ভোর ৬টা থেকে বেলা ১২টার মধ্যে এলাকাভেদে এক ঘন্টা করে লোডশেডিং দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ। শহরে বিদ্যুতের গ্রাহকের সংখ্যা ২৮ হাজার ৯০০। পুরো জেলায় ৬০ হাজার ৩১৫ জন গ্রাহক নিয়ে চলছে রাঙামাটি বিদ্যুত বিতরণ বিভাগ কর্তৃপক্ষ।