২৩ অক্টোবর ২০২৫

রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে

চারদিক খানিকটা ধোঁয়াশা। দু এক ফোঁটা কুয়াশা গাছের পত্র পল্লব বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে মাটিতে। এর মাঝে হেঁটে যাচ্ছেন একদল কৃষক। কিছুক্ষণ পর শুরু হয় ব্যস্ততা। হেমন্তের সাতসকালে কুয়াশায় মোড়ানো বিস্তীর্ণ মাঠে ভিড় জমিয়েছেন কৃষকের দল। কেউবা পাকা ধানের গোছায় পোঁচ দিচ্ছেন, আবার কেউবা ব্যস্ত আটি বেঁধে ধান বহনে। এ যেন এক মহোৎসব। বলছিলাম বাংলাদেশের শস্যভাণ্ডার খ্যাত চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া গুমাই বিলে সোনালি আমন ধান ঘরে তোলার উৎসবের কথা।

গুমাই বিলের সারি সারি ধানক্ষেতের দেখা মিলল সোনালি ধানে ভরে গেছে মাঠ। হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে ধানের ছড়া। টিয়েসহ নানা জাতের পাখিরা ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়াচ্ছে মাঠে। কৃষকদের কেউ ধান কেটে ঘরে আনছেন, কেউ কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যাওয়ার পথে অনেকেই গাড়ি থেকে নেমে ছবি তুলছেন। নতুন ধান ঘরে তুলতে আগাম জাতের আমনের পাকা ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। আবহাওয়া ভাল থাকায় পাকা ধান কেটে জমিতে শুকানো হচ্ছে। বসে নেই কৃষাণীরাও। তাদের ব্যস্ততা ধান মাড়াই ও গোলায় উঠানো নিয়ে।

শস্যভাণ্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলে শুরু হয়েছে ধান কাটা উৎসব। দক্ষিণা হাওয়ায় তালে তালে মাঠে দোল খাচ্ছিলো ফসল। আমন ধানের ভালো ফলন হয়েছে। পেকে গেছে ধান। এখন চলছে ধান কাটার উৎসব। প্রায় ৩ হাজার হেক্টর আয়তনের এই বিলে এক মৌসুমে উৎপাদিত ধান দিয়ে একসময় সারাদেশের আড়াই দিনের খাদ্যের চাহিদা মেটানো যেতো।
দেশের অন্যতম বৃহৎ এই বিলে ধানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ভরাটপূর্বক গড়ে তোলা হয়েছে বসত-ঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা। অনেক জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে ফসল বিধ্বংসী ইটভাটা। এতে কমে যাচ্ছে ফসলি জমি।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, গুমাই বিলে কৃষকরা ব্রি-৫১, ৫২, ৪৯, ৭৫ জাতের ধানের চাষ করেছেন। প্রতি হেক্টরে পাঁচ দশমিক তিন মেট্রিক টন ফলন হয়েছে।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা, মরিয়মনগর, হোসনাবাদ, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া, লালানগর ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৭, ৮ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে গুমাই বিলের অবস্থান। বিলের জমিতে প্রতি বছর ইরি ও আমনের বাম্পার ফলন হয়। পাকিস্তান আমল থেকে এই বিলে ধান চাষ শুরু হলেও স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারগুলো এখানে আধুনিক সেচের ব্যবস্থা করে।

স্থানীয় বাইনালার ছড়া, সোনাইছড়ি, মুন্দরী, কুরমাই, ইছামতি, বারঘোনিয়া, ঘাগড়া হ্রদ খাল ও গুট্টাকার খালের সংযোগ রয়েছে গুমাই বিলের সঙ্গে। এর মাধ্যমে পরিকল্পিত সেচ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে কৃষি বিভাগ। শুরুতে এই বিলের আয়তন ছিল ৪ হাজার হেক্টরেরও বেশি। আবাদি এই বিলে অপরিকল্পিত আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের কারণে রাঙ্গুনিয়ায় খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।

দেখা গেছে, গুমাই বিলে পাকা ধানের সমারোহ। কেউ ধান কাটছেন আবার কেউবা ধান মাড়াইয়ে ব্যস্ত। মাঠে কৃষকের পাশাপাশি ব্যস্ত কৃষাণীরাও। সাগর মিয়া নামে এক চাষি বলেন, এবার ৪ হেক্টর জমিতে আমন চারা রোপণ করেছেন। ধান পেকেছে, এখন কেটে ঘরে তোলার কাজ চলছে।

গত আগস্টের বন্যায় গুমাই বিলের বড় অংশ পানিতে তলিয়ে যায়। এতে রোপণ করা ধানের চারা নষ্ট হয়ে যায়। পানি নেমে যাওয়ার পর কৃষকরা আবারও চারা রোপণ করেন।

স্থানীয় কৃষক সবুর খান ধান লাগিয়েছিলেন দেড় শতক জমিতে।তিন জানান এবারের বন্যার কারণে অন্যান্যবারের তুলনায় এবার ফলন কম হয়েছে। পানিতে কিছু ফসল নষ্ট হয়েছে।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, বন্যায় কিছুটা ক্ষতি হলেও এবছর ধানের ভালো ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে গুমাই বিলে ধান কাটা। বন্যায় বেশকিছু জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে ব্রি-৫১, ৫২ জাতের ধান পানিসহিষ্ণু। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দিয়েছি।

ধান কাটার মৌসুমে এই এলাকায় ভিড় জমায় নেত্রকোনা, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, রংপুর, সাতকানিয়া, বাঁশখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের শ্রমিকেরা। দৈনিক দুইবেলা খাবার এবং মাত্র সাড়ে তিন শ থেকে চার শ টাকা মজুরিতে গুমাই বিলে ধান কাটেন তারা। ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত চলে ধান কাটার উৎসব।

 

 

আরও পড়ুন