২৪ অক্টোবর ২০২৫

রাঙ্গুনিয়ায় পুলিশের সাথে ডাকাত দলের গোলাগুলি— ওসিসহ ৩ পুলিশ আহত, গ্রেফতার ১

বাংলাধারা প্রতিবেদক »

রাঙ্গুনিয়ায় ডাকাতিকালে শীর্ষ সন্ত্রাসী কামাল বাহিনীর সাথে গোলগুলিতে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি ওবাইদুল ইসলামসহ ৩ পুলিশ সদস্য গুরত্ব আহতে হয়েছেন। এ সময় ডাকাত দলের কামালকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। এসময় সন্ত্রাসী কামালও আহত হয়। গ্রেফতার কামাল ওরফে মদন কামালের বাড়ি সরফভাটা ইউনিয়নের মীরেরখীল বলে জানা গেছে। 

মঙ্গলবার (৫ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পদুয়া ইউনিয়নে আজিমপুর মহিষের বাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুল ইসলাম বলেন, রাত সাড়ে দশটার পাহাড়ে ৭-৮ জনের ডাকাত দলের ডাকাতির প্রস্তুতি নেওয়ার খবর পেয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে দুই পক্ষের মাঝে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ডাকতরা গুলি চালালে পুলিশও ১০ রাউন্ড গুলি ছুড়ে। এ সময় ২টি অস্ত্র ও ৫ রাউন্ড গুলিসহ ডাকাত দলের কামাল নামে একজন গ্রেফতার করা হয়।

এসময় ওসি ওবাইদুল ইসলামের বাম পায়ে, এসআই জুয়েলে ডান পায়ে ও কনস্টেবেল জিয়ার বাম হাতে গুরুত্বর জখম হয়েছে। পরে ডাকাত কামালসহ ৩ পুলিশ সদস্যকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়।

সরফভাটায় থামছে না চাঁদাবাজি, অপহরণ— তথ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ ইউপি সদস্যের (ভিডিও)

এর আগে গত ১৫ মে উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ড মীরেরখীল এলাকা থেকে তিন ব্যক্তিকে অপহরণ করে মুক্তিপুণ দাবি করে এই সন্ত্রাস বাহিনী। পরে পুলিশ তিনজনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১ মার্চ সকালে রাঙ্গুনিয়ার জঙ্গল সরফভাটার কালিছড়ি এলাকায় নিজেদের সেগুন বাগানে অবস্থান করছিলেন পশ্চিম সরফভাটা গঞ্জম আলী সরকার বাড়ির আবুল কালামের পুত্র উকিল আহমদ (৫৫) ও তার পুত্র মো. ইসমাইল (১৬)। বিক্রি করার জন্য স্থানীয় মো. আলীকে গাছ দেখাতেই তারা সেখানে যান। একপর্যায়ে সেখানে পূর্ব থেকে ওঁত পেতে থাকা ১০-১৫ জন দুর্বৃত্ত অতর্কিতভাবে ধারালো কিরিচ ও দা নিয়ে পিতা ও পুত্রের উপর হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা বৃদ্ধ উকিল আহমদকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ঘটনাস্থলেই হত্যা করেন।

এরপর ধাওয়া করে নিহতের ছেলে মো. ইসমাইলকে কুপিয়ে ডান পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। তার একটি হাতও প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ঘটনায় উকিল আহমদের স্ত্রী মমতাজ বেগম বাদী হয়ে ইউনুসসহ ২৪ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটায় ওসমান বাহিনীর ওসমান ২০১৯ সালে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহতের পর তোফায়েল বাহিনী লিড দিয়ে আসছে। এরই মধ্যে গত ১০ এপ্রিল মো. মফিজ নামে আরেকজন প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হওয়ার পর থেকে এলাকায় ওই তোফায়েল বাহিনীর আধিপত্য বিস্তার করে। এতে এলাকার মানুষের ঘুম হারাম হয়ে যায়।কামল-তোফায়েল বাহিনী দিন-দুপুরে চাঁদাবাজি, খামারের গরু, মহিষ ও ছাগল চুরি হতে শুরু সব ধরনের লুটপাট শুরু করে। এমনকি তাদের ভয়ে চিড়িঙ্গা এলাকা সব পরিবার এলাকা ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় চলেও গেছে। চিড়িঙ্গা ছাড়াও মীরেরখীল থেকে প্রায় দুইশ পরিবার বর্তমান এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে সন্ত্রাসীদের ভয়ে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, একেকদিন একেক পরিবারকে দুই লাখ, তিন লাখ, পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে এই সন্ত্রাসীরা। এমনকি দিতে না পারলে তুলে নিয়ে দুর্গম পাহাড়ে বেঁধে মারধর করার অভিযোগও রয়েছে। এই মারধরের বিষয়ে কাউকে কিছু বললে মেরে ফেলারও হুমকি দেয় এই সন্ত্রাসী বাহিনী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একজন বলেন, ‘মীরেরখীল গ্রাম নয় শুধু পুরো সরফভাটার মানুষ রাতে ভয়ে ঘুমাতে পারে না। কারণ, কখন কিভাবে কার ঘরে ঢুকে কি দাবি বসে— সেই ভয়ে থাকে সবাই। অনেকের কাছে লাখ-দেড়লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে বসে। আর তা যে কোনভাবে ব্যবস্থা করতে হবে। যদি নির্দিষ্ট সময়ে ব্যবস্থা করতে না পারে তাহলে বাড়িতে এসে নানা হুমকি-ধমকি দেয়, এমনকি মারধরও করে। প্রাণের ভয়ে এসব ঘটনা কাউকে জানায় না, থানা গিয়েও কোন অভিযোগ করে না কেউ।’

এলাবাসীদের আরেকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, ‘মানুষ ভয়ে-আতঙ্কে থাকলেও স্থানীয় ইউপি সদস্য ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় এর প্রতিবাদ করলেও চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ-যুবলীগের নেতার চুপ। তারা কোন পদক্ষেপ নেন না কিংবা দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। যদিও তারা সবই জানেন। বলতে গেলে, এটা মগের মুল্লুক হয়ে গেছে। যখন যা ইচ্ছা তাই করে যাচ্ছে অথচ সবাই নিশ্চুপ। মানুষ ভোট দিয়ে এই জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচন করেছে কেন তাহলে, যদি জনগণের নিরাপত্তা দিতে না পারে? এভাবে চুপ থাকলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? এখন তো দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া আলাদা থাকাও হয়েছে, তাছাড়া মীরেরখীলে পুলিশ ফাঁড়িও আছে— তবুও চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, অপহরণ তো এখনো কমেনি।’

বিশেষ সূত্রে জানা যায়, এলাকায় দিন-দুপুরে দাপিয়ে বেড়ায় এই সন্ত্রাসী দল। তাদের মধ্যে সবাই স্থানীয় বলে জানা গেছে। তবে স্থানীয় প্রভাবশালী যুব নেতাদের আশ্রয় পশ্রয়ে এরা এসব করতে সাহস পায়, এমনকি আদায়কৃত চাঁদার একটি অংশ এসব নেতাদের পকেটে যায় বলে জানায় ওই সূত্র।

দেখা গেছে, স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. দিলদার হোসেন ঈদের দ্বিতীয় দিন গত ৫ মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভিডিও বার্তা ছাড়েন। এতে স্থানীয় সাংসদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এলাকার ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির কথা বর্ণনা করে এক ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, ‘প্রিয় নেতা, আধুনিক রাঙ্গুনিয়ার রূপকার ড. হাছান মাহমুদ এমপি মহোদয়কে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি— আপনি আমাদের মীরেরখীল এলাকার প্রতি একটু নজর দিন। আপনার কৃপায় এখানে একটি পুলিশ বিট স্থাপন হওয়ায় অশেষ কৃতজ্ঞ প্রকাশ করছি। আগে দিনদুপুরে যে তাণ্ডবগুলো হতো তা থেকে কিছুটা স্বস্তি মিললেও রাত্রীকালী তাণ্ডব এখনো চলছে।’

ভিভিও বার্তায় তিনি আরও বলেছিলেন, ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে কল করে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে প্রতিনিয়ত চাঁদা দাবি করে যাচ্ছে। স্থানীয় নেতা ও এলাকাবাসী এতে নির্বিকার। এগুলোর বিরুদ্ধে কেউ কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না। কেন হচ্ছে না সেটাও জানি না। এখানে একাত্তর সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গুটি কয়েক সন্ত্রাসী শান্ত মীরেরখীল এলাকাকে অশান্ত করে তুলেছে।’

এলাকার সর্বস্তরের জনগণ ও নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ইউপি সদস্য দিলদার বলেছিলেন, ‘আমাদের মীরেরখীল ও হাজারিখীলকে এগুলো (সন্ত্রাসী) থেকে মুক্ত করতে সহযোগিতা করেন। আপনারা যদি সহযোগিতা করেন, ইনশাল্লাহ, এগুলো অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে। কখনো সন্ত্রাসীরা এদেশে স্থায়ীভাবে ঠিকতে পারেনি, সামনেও ঠিকতে পারবে না। আপনারা সহযোগিতা করলে এরাও ঠিকতে পারবে না।’

এলাকাবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘মোবাইল ফোনে কেউ চাঁদা দাবি করলে আপনারা চাঁদা দিবেন না, আপনারা আমার সাথে যোগাযোগ করবেন। যথাযথ সাহায্য করব, ইনশাল্লাহ। চেষ্টা করব এগুলো প্রতিরোধ করার জন্য, মোকাবেলা করার জন্য। একজনের দেখা-দেখিতে আরেকজন চাঁদা দিয়ে দিচ্ছে, একজন দিলে আরেক হাসতেছে— এভাতে আমরা গণহারে ওই চাঁদা দেয়ার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েছি। কেউ চাঁদা দাবি করলে আমাকে ফোন দিবেন, পুলিশ ফাঁড়িতে ফোন দিবেন। রাত্রীকালী কেউ যদি এসে দরজা ধাক্কায়- দরজা খুলবেন না, সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ফোন দিবেন। আমি যথাযথ চেষ্ট করব আপনাদের পাশে থাকার। এসব অ্যথাচারে বিরুদ্ধে আমাদের নিজেদেরকে দাঁড়াতে হবে। এতে সন্ত্রাসীদের হাত যত লম্বা হোক না কেন, এলাকাবাসীর সাথে কখনো পেরে উঠবে না। আপনারা সাহস যোগান।’

এসময় তিনি সরফভাটার আওয়ামী লীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের এগিয়ে এসে মীরেরখীলবাসীকে রক্ষা করার আহ্বান জানান। সাথে সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সযোগিতার অনুরোধ জানান তিনি।

আরও পড়ুন