রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি »
রাঙ্গুনিয়ায় বসতিবাড়ির জায়গা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে রুবি আকতার (৩২) নামে এক নারীর ওপর সশস্ত্র হামলার অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) পৌরসভার দক্ষিণ নোয়াগাঁও ২নং ওয়ার্ড এলাকার গোডাউন এলাকায় নিজ বাড়িতে এ হামলা শিকার হন তিনি। এ সময় হামলাকারীরা ওই নারীকে এলোপাতাড়ি মারধর করে গুরুতর আহত করে।
জানা যায়, হামলাকারীরা মূলত তার পরিবারের লোকজন। পারিবারিক জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এ হামলার শিকার হন তিনি। আহত রুবি আকতার পৌরসভার দক্ষিণ নোয়াগাঁও ২নং ওয়ার্ড এলাকার সফি আহম্মদের মেয়ে ও উপজেলা যুব মহিলা লীগের নেত্রী।
এ ঘটনায় পাঁচজনকে আসামি করে রাঙ্গুনিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী রুবী বেগম।
রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুব মিলকী বলেন, ‘এ বিষয়ে দু’পক্ষই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে। এটা তাদের দীর্ঘদিনের বিরোধ। কারও থেকে কেউ কম নয়। সেখানে দু’পক্ষের লোকজনই মারামারির জন্য উদগ্রীব ছিল। ঘটনার দিন থেকেই রাতে সেখানে পুলিশ ছিল। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ভুক্তভোগী রুবি বেগমের স্বামী রানা বলেন, ‘ঘটনার দিন ব্যবসায়িক কাজে আমি চাক্তাই ছিলাম। সেদিনই পরিকল্পিতভাবে রুবিকে হত্যার উদ্দেশে এ ঘটনা ঘটায় তার পরিবারের লোকজন। আসলে রুবির সাথে জমি নিয়ে তার পরিবারের লোকদের সাথে বিরোধ ছিল। ঘরের পাশে কিছু খালি জায়গা আছে। হামলাকারীদেরও আছে, আমাদেরও আছে। কিন্তু তারা তাদের জায়গাগুলো থেকে রুবির ভাই বাবু মিস্ত্রি গ্যারেজ ও ঘর নির্মাণ করেছে। এরপর তারা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের জায়গাগুলোও দখল করার জন্য পায়তারা করছিল।’
রুবির স্বামী আরও বলেন, ‘এ নিয়ে জালাল কমিশনার ওয়াসা কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ডেকে বৈঠক করে, সে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় জায়গাটা রুবির। অথচ এরপরেও শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রুবির ভাই বাবু মিস্ত্রি, ছোট বোন শেলী, ভাবী জান্নাতুল নাঈম, মা বাচু ও বাবা সফি ড্রাইভার’সহ সকলে মিলে সশস্ত্র হামলা করেছে রুবির ওপর। এক পর্যায়ে আশেপাশের লোকজন জড়ো হলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা রুবিকে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়, সেখানে রুবির অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করে। আমি প্রশাসনের কাছে এ হামলার ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর (প্যানেল মেয়র) জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জায়গাটি মূলত রাঙ্গুনিয়া ওয়াসার। ওয়াসা তাদের জায়গা নেওয়ার সময় উচ্ছেদ করার পরও মানবিক কারণে ঘর বেঁধে দেয় তাদের। তবে যে জায়গা নিয়ে বিরোধ হচ্ছে সেটি রুবির।’
এদিকে হামলাকারীদের মধ্যে ১নং অভিযুক্ত মাহবুব আলমের কাছে হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘রুবি সম্পর্কে আমার খালাতো বোন ও তার বড় বোনের স্বামী। সে যুব মহিলা লীগের নেত্রী হওয়ায় বাইরের মহিলা নেতাকর্মী এনে আমাদের পরিবারকে শাসিয়ে যেতো। ঘটনার সময় আমি ছিলাম না। শুক্রবার ইফতারের আগে আমার স্ত্রী কল দিয়ে বলে— তার পায়ে কাটা গেছে, তাই বাসায় এসে তাকে চিকিৎসা করিয়ে নিয়ে আসি। রুবির আহত হওয়ার বিষয়ে জানি না। তবে রুবির সাথে ঝগড়া হয়েছে তার মা, ভাই, বোনের সাথে। ঘটনাস্থলে আমি না থাকার পরেও আমার নিয়ে মিথ্যে অভিযোগ দিল রুবি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জসিম উদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘আমি অসুস্থ থাকায় বাড়িতে ছিলাম, মেয়র কল দিয়ে বললেন— রুবির বাবা মা মেয়রের কাছে এসেছেন। বিষয়টি আপনি একটু দেখেন। পরে আমি সবার সাথে যোগাযোগ করে খতিয়ে দেখি। রুবির অবস্থা খারাপ হওয়ায় চমেক হাসপাতালে নিতে বলেছে চিকিৎসকরা। এ বিষয়ে মেয়রকে জানিয়েছি। এছাড়াও রুবি হয়তো থানায় অভিযোগ করেছে, পুলিশ তদন্তে এসেছে।’













