রাজধানী ঢাকায় গত কয়েক দিনে নানা ধরনের ঘটনা রাজধানীর নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে।
পুরান ঢাকায় খুন, নয়াপল্টনে বিস্ফোরণ, পল্লবীতে চাঁদা না পেয়ে হামলা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিচারিক কার্যক্রম ঘিরে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে একাধিক ইস্যু। এসব ঘটনা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মাঝে উদ্বেগ ও আতঙ্ক বাড়িয়ে তুলছে।
পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ড: নীরবতা ঘেরা এলাকা
রাজধানীর পুরান ঢাকায় মো. সোহাগ নামে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় করা একটি অস্ত্র মামলায় ছাত্রদল নেতা তারেক রহমান রবিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে নিহত সোহাগের পরিচয় বা হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চাইলেও স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীরা মুখ খুলতে রাজি নন। এলাকাটিতে অদ্ভুত এক নীরবতা বিরাজ করছে।
তবে ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে এন সি পি ও, ছাত্রদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয় একাধিক জায়গা থেকে।
এছাড়াও সেই হত্যাকান্ড সংগঠিত হওয়ার পাশেই ছিল আনসার অফিস। কিন্তু সেই ঘটনায় তাদের কোনো উপস্থিতি বা কার্যক্রম না থাকায় শিক্ষার্থীরা তাদের তিরস্কার করে শাড়ি ও চুরি উপহার দেয়। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করে।
নয়াপল্টনে ককটেল বিস্ফোরণ
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শনিবার রাত সোয়া ১০টার দিকে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিকট শব্দে বিস্ফোরণের কারণে আশপাশের এলাকা কেঁপে ওঠে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পথচারী ও যানবাহনে থাকা যাত্রীদের মধ্যে। মুহূর্তের মধ্যেই মানুষ যে যার মতো করে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে দৌড় দেন। পুলিশ প্রাথমিকভাবে ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে এবং বিস্ফোরণের উৎস শনাক্তে কাজ শুরু করে।
পল্লবীতে হামলা: চাঁদার অভিযোগ
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর পল্লবীর আলব্দিরটেক এলাকায় এ কে বিল্ডার্স নামের একটি আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে ‘চাঁদা না পেয়ে’ হামলার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, অজ্ঞাত পরিচয়ের একদল অস্ত্রধারী লোক পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে, যা না পেয়ে তারা প্রতিষ্ঠানটিতে হামলা চালায় এবং চারটি গুলি করে। গুলিতে প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম আহত হন এবং বর্তমানে তিনি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পল্লবী থানা পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটি তদন্তাধীন এবং অপরাধীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিচারিক কার্যক্রম: সাবেক আইজিপি পৃথক সেলে
জুলাই-আগস্টে সংঘটিত সহিংসতার একটি মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে নাম আসা পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে কেরানীগঞ্জের বিশেষ কারাগারে আলাদা একটি কক্ষে রাখা হয়েছে। তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রুমের সামনে রাখা হয়েছে অতিরিক্ত কারারক্ষী। একই সঙ্গে তাকে পৃথকভাবে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছে, মামলার মূল অভিযুক্তদের বিষয়ে সত্য তথ্য প্রদান করলে মামুনকে ক্ষমার বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে। তবে এর জন্য তাকে যথাযথভাবে সাক্ষ্য দিতে হবে।
শিক্ষক নিয়োগ ও রাজনৈতিক কর্মসূচি
রাজধানীতে চলমান বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়েও মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি চলছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হচ্ছে, যার মধ্যে সোহাগ হত্যাকাণ্ড একটি অন্যতম ইস্যু হয়ে উঠেছে।
চুরি-ছিনতাইয়ে বেড়েছে আতঙ্ক
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে চুরি, ছিনতাই এবং ডাকাতির ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় নাগরিকরা আতঙ্কিত। বেশ কিছু ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে আরও উদ্বেগ তৈরি করেছে।
সাম্প্রতিক এই ঘটনাপ্রবাহ ঢাকার নাগরিক জীবনকে প্রভাবিত করছে উল্লেখযোগ্যভাবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিতের চেষ্টা চললেও সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা কাজ করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজন দায়িত্বশীল পদক্ষেপ ও দ্রুত তদন্ত-প্রতিবেদন প্রকাশ।
বাংলাধারা/এফইএমএফ