জালাল উদ্দিন সাগর »
কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) জনসংযোগ শাখার পক্ষ থেকে একটি হটলাইন নাম্বারে ফোন করার অনুরোধ জানিয়ে ফেসবুক পেইজে দেয়া কয়েকটি নোটিশ চোখে পড়েছে।
কয়েকদিন আগে একটি নোটিশ ছিল এমন- ‘নগরীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি ও স্বাস্থসেবা না পেলে কিংবা রোগী ভোগান্তির তথ্য জানা থাকলে ০১৮৮০-৮০৮০৮০ নাম্বারে ফোন করে জানান।’ গতকাল একটি নোটিশ দেখলাম এমন- ‘কোনো ফার্মেসি যদি অসুধের মূল্য বেশি রাখে সে ক্ষেত্রে হটলাইন নাম্বারের জানাতে পারেন। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিবে সিএমপি।’
সিএমপি থেকে যখন কোনো নোটিশ বা তথ্য প্রদান করা হয়, গুরুত্ব বিবেচনায় সে সংবাদটি গুরুত্ব দিয়েই প্রকাশের চেষ্টা করি এবং করিও। সিএমপি’র হটলাইনে তথ্য দেয়া সম্পর্কিত নিউজগুলো গুরুত্বের সাথেই করেছি। কিন্তু নিউজগুলো যখনই আমি লিখেছি তখনই মনে মনে আমি হেসেছি। কেন হেসেছি- তা বলছি একটু পরে।
করোনা মহামারিতে চট্টগ্রামসহ পুরো দেশে আমরা ভিন্ন এক পুলিশকে দেখেছি। যে পুলিশের পোশাক কিংবা শরীরের কোনো অংশে লিখা ছিল না ‘মানবিক’ শব্দটি। তবুও আমরা অচেনা এক মানবিক পুলিশ পেয়েছি। এই মানবিক পুলিশকে আমরা খোঁজে পেয়েছি অসময়ে-বিপদের বন্ধু হিসেবে, ঘোর অন্ধকারে জ্যোতির মতো। সিএমপি’র কর্ণধার মাহাবুবর রহমান রিপন ভাই হলেন আলোর মশাল হাতে দ্বীপ্ত চলা জ্যোতির্ময় সে কাণ্ডারি।
সম্প্রতি আমি আমার একটি লেখাতে লিখেছিলাম, করোনাকালীন সময়ে চট্টগ্রামের মানুষের জন্য সিএমপি কমিশনার মাহাবুবর রহমান যে অবদান রেখেছেন সে অবদানের জন্য মাহাবুব ভাইকে শত বছর মনে রাখবেন চট্টগ্রামের মানুষ কিংবা তারও বেশি।
যাই হোক, বলছিলাম, হটলাইনে তথ্য দেয়ার কথা। হট লাইনে তথ্য দেয়ার নিউজগুলো আমি যখনই করেছি তখনই মনে মনে হেসেছি। আমার হাসার কারণটা হলো, ক্লু বিহীন ডাবল মার্ডারের ক্লু উদ্ধার করতে এবং খুনিকে গ্রেফতার করতে যে সিএমপি’র ২৪ ঘন্টা সময় লাগে না। রাস্তার মোড়ে বোমব্লাস্ট করা অপরাধীদের ধরতে পারে ক্লু ছাড়া। যে সিএমপি শত মাইল দুরে পালিয়ে থাকা ধর্ষক গ্রেফতার করতে পারে একদিনে। সে সিএমপি জানে না কোন হাসপাতাল রোগীর চিকিংসা হচ্ছে আর কোন হাসপাতালে হচ্ছে না। কিংবা কোন ফার্মেসিতে ওষুধের দাম বেশি রাখা হয়!
কেন জানি এই ঠুনকো অজুহাতটি বিশ্বাস করতে মন চাইছে না আমার। কারণ আমার দৃঢ় বিশ্বাস বাংলাদেশ পুলিশ মেধা-যোগত্যা আর অনুসন্ধানী স্পেশালিজমে বিশ্বের যে কোনো পুলিশ বাহিনী থেকে অধিকতর যোগ্যতা সম্পন্ন।
পাঠক, ছেলে বেলায় শোনা একটা গল্প বলি আপনাদের। রাজা-বাদশার গল্প। শুধুই বলার জন্যই বলা।
প্রজাবান্ধব এক রাজার দরবারে একেক দিন একেক প্রজা একেক অভিযোগ নিয়ে আসেন। কেউ বলেন, বাজারে চালের দাম বেশি। কেউ বলেন, ডালের দাম বেশি। কারও অভিযোগ নিত্য পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় অনাহারে দিন কাটাতে হয় তাঁদের।
দিন কয়েক প্রজাদের অভিযোগ শুনে রাজাবাহাদুর মন্ত্রী মশাইকে বললেন, মন্ত্রী তড়িৎ ব্যবস্থা নিন। কোনো বেপারী যেন পণ্যের দাম বেশি না রাখে।
মন্ত্রী মশাই সব বেপারীকে বৈঠকে ডাকলেন। করা গলায় বললেন, যে চাল-ডালের দাম বেশি রাখবেন তার গর্দান যাবে। বেপারীরা সবাই সমস্বরে মন্ত্রীকে বললেন, হুজুর প্রজারা মিছা কথা কয়। আমাদের কী সাধ্য আমরা রাজা মশাইয়ে নির্দেশের বাইরে গিয়ে গর্দান হারাই।
কয়েকদিন পর রাজ দরবারে আবারও প্রজাদের অভিযোগ। রাজা মশাই ক্ষেপে গিয়ে মন্ত্রীকে বললেন, এরপর যদি কোনো অভিযোগ আসে এবার তোমার গর্দান নিব।
নিজের গর্দান বাঁচাতে সেনাপতিকে সাথে নিয়ে বিশাল সৈন্যবাহিনীসহ গেলেন হাঁটে। বিশাল বিশাল চট আর কাপড়ের মধ্যে হাতে লিখে ঝুলিয়ে দিলেন হাট-বাজারের গলি-গলি। লিখলেন, যে পন্যের দাম বেশি নিবে তার গর্দান যাবে।
কয়েকদিন পর রাজ দরবারে আবারও প্রজাদের অভিযোগ। জাহাপনা বাঁচান-কিছু একটা করেন। চার আনার চালের দাম দশ আনা। আর পাঁচ আনা ডালের দাম ১২ আনা। প্রজাদের নিত্য অভিযোগে মন্ত্রীর যায় যায় অবস্থা। কোনোভাবেই রাজার চোখের দিকে তাকাতে পারেন না মন্ত্রী।
রাজা মশাই মন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন সমস্যাটা কোথায়? মন্ত্রী বললেন, ‘মিছা কথা’। এই মিছা কথা কে বলছে সেটাই বুঝতে পারছিনা জাহাপনা।
রাজা মশাই নির্দেশ দিলেন- পরের দিন রাজমহলের সব বাবুর্চিকে দরবারের হাজির করতে। মন্ত্রী মশাই তাই করলেন, রাজমহলের শ’খানেক বাবুর্চিকে রাজ দরবারে নিয়ে আসলেন।
রাজা সব বাবুর্চির হাতে একটি ফর্দ আর কিছু টাকা দিয়ে বললেন, তোমরা একেক জন একেক হাঁটে গিয়ে ফর্দ অনুযায়ী সদাই (বাজার) করে নিয়ে আসবা। খবরদার কেউ যেন জানতে না পারে তোমরা রাজমহলের বাবুর্চি।
পরের দিন সব বাবুর্চি সদাই করে রাজ দরবারে হাজির হলেন। রাজা মশাই একজন একজন করে সব বাবুর্চিকে জিজ্ঞেস করলেন, চালের দাম কত আর ডালের দাম কত নিয়েছে।
সব বাবুর্চিই রাজা বাহাদুরকে কে জানালেন, হুজুর মন প্রতি চাল দশ আনা। আর ডালের দাম মনপ্রতি ১২ আনা। কেউ কেউ বললো, দাম তারও বেশি। রাজা মশাই মন্ত্রীকে ডেকে বললেন, মন্ত্রী তুমি সব বাবুর্চিকে সাথে নিয়ে হাঁটে যাও। ওরা যে যে বেপারীর কাছ থেকে সদাই কিনেছে প্রকাশ্যে তাদের গর্দান কর্তন করো।
রাজা বাহাদুরের প্ররিকল্পনাটি কাজে লাগাতে পারেন সিএমপি। ছদ্মবেসে নিজস্ব বাহিনী পাঠাতে পারেন হাসপাতালগুলোতে। কিংবা থানাওয়ারি ফার্মেসিগুলোতে।
আমার ব্যক্তিগত অভিমত হটলাইনে জানানো অভিযোগ থেকে সরজমিনে অভিজ্ঞতা সিএমপির জন্য অনেক বেশি ফলপ্রসু হবে।
লেখক : সংবাদকর্মী













