৩ নভেম্বর ২০২৫

অস্ত্র ও তৈরীর সরঞ্জাম জব্দ-

রামুতে ডাকাত সর্দার দেহরক্ষী, মহেশখালীতে অস্ত্র কারিগর বাবা-ছেলেসহ গ্রেফতার ৪

কক্সবাজারের রামু থেকে আন্ত: জেলা ডাকাত সর্দার আবছারের সহযোগী ও মহেশখালীর পাহাড়ী এলাকা থেকে অস্ত্র তৈরীর কারিগর পিতা-ছেলেসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১৫’র সদস্যরা। এসময় অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জাম এবং গান পাউডার ও অস্ত্র বিক্রয়লব্ধ টাকা জব্দ করা হয়েছে। শনিবার (১৬ মার্চ) ভোররাতের পৃথক সময়ে পৃথক অভিযানে এসব ডাকাত ও অস্ত্র তৈরি র কারিগর এবং আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়। আইনগত ব্যবস্থা নিতে শনিবার রাতে তাদের সংশ্লিষ্ট থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-১৫’র সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সালাম চৌধুরী।

গ্রেফতারকৃতরা হলো, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী ইউনিয়নের থিমছড়ির আব্দুল খালেকের ছেলে মনছুর আলম (২০)। তিনি কুখ্যাত আন্ত: জেলা ডাকাত সর্দার ও অস্ত্র ব্যবসায়ী নুরুল আবছার ওরফে ডাকাত আবছারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও দেহরক্ষী হিসেবে পরিচিত। তাকে রামুর ঘোনারপাড়া হতে গ্রেফতার করা হয়।
মহেশখালী হতে গ্রেফতার করা হয়, কালারমারছরার অফিসপাড়ার পাহাড়তলী এলাকার মৃত ফকির মোহাম্মদের ছেলে বর্তমানে চকরিয়ার বরইতলীর বাসিন্দা ফরিদুল আলম (৫৪), তার ছেলে জিসাদ ওরফে সোনা মিয়া (২২) বাহিম (২০)।

র‌্যাব-১৫’র সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সালাম চৌধুরী জানান, কক্সবাজারের কুখ্যাত ডাকাত সর্দার আবছার ডাকাতি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের পাশাপাশি দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসা ও ভাড়া দেওয়ার কাজে যুক্ত রয়েছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-১৫ এর গোয়েন্দা দল অনুসন্ধান শুরু করে। এ ধারাবাহিকতায় র‌্যাব জানতে পারে, রামু গর্জনিয়া ইউনিয়নের ঘোনারপাড়ায় ডাকাত নুরুল আবছার বসত ঘরে কতিপয় দুষ্কৃতিকারীসহ বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদকদ্রব্য নিয়ে অবস্থান করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার ভোররাতে র‌্যাব-১৫, সিপিএসসি ক্যাম্পের আভিযানিক দল অভিযান চালায়। র‌্যাবের উপস্থিতি বুঝতে পেরে সুচতুর ডাকাত আবছার পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও তার দেহরক্ষী মনছুর ধরতে সক্ষম হয় র‌্যাব। পরবর্তীতে তল্লাশী করে একটি এলজি এবং পলাতক ডাকাত আবছারের বসত ঘর থেকে ৬টি ওয়ান শুটার গান, ২ রাউন্ড গুলি, ২০০ গ্রাম গান পাউডার এবং অস্ত্র বিক্রয়লব্ধ ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত মনছুর কুখ্যাত আন্তঃজেলা ডাকাত সর্দার ও অস্ত্র ব্যবসায়ী নুরুল আবছার ওরফে ডাকাত আবছারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করে বলে স্বীকার করে। তারা পরস্পরের সহযোগীতায় বিভিন্ন মাধ্যমে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ এবং নিজেদের হেফাজতে মজুদ করে ডাকাতি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ব্যবহারসহ কক্সবাজার শহর এবং শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকা ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্র-গোলাবারুদ বিক্রি করে আসছিল।

তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণার্থে শনিবার সন্ধ্যায় রামু থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

অপরদিকে, সম্প্রতি কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার বিভিন্ন দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় অস্ত্র তৈরির কারখানা হতে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের নিকট অস্ত্র সরবরাহ হয় বলে র‌্যাবের আভিযানিক দল তথ্য পায়। এরপর হতে গোয়েন্দা কার্যক্রম ও নজরদারি শুরু করে শনিবার অভিযান চালিয়ে মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের পূর্ব পুইরছড়া খঞ্জনীর বাপেরঘোনা পাহাড়ী এলাকায় অস্ত্র তৈরীর কারখানার সন্ধান পায়।সেখানে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব-১৫ অস্ত্র তৈরী ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ের সাথে জড়িত বাবা-ছেলেসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে। এসময় অস্ত্রের কারখানা হতে দুটি দেশীয় তৈরী ওয়ান শুটার গান এবং অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জাম লোহার তৈরী ড্রিল মেশিন, হাতুড়ী, করাত, চারটি লোহার পাইপ, দুটি লোহার ব্যারেল, হেক্সো ব্লেড, দুটি লোহা কাটার ব্লেড, ষাটটি ওয়াশার, দুটি পাঞ্চিং রড, দুটি বড় নাট, রেঞ্চ, স্টীল সীড, তিনটি লোহার অংশ ও লোহার ব্রাশসহ অস্ত্র তৈরীর আনুষাঙ্গিক ছোট-বড় ৫০টি অস্ত্র তৈরীর বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে তার জানায়, গ্রেফতারকৃতরা অস্ত্র তৈরীর কারখানার কারিগর। তারা দীর্ঘদিন ধরে গোপনে অস্ত্র তৈরী ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা পরিচালনাসহ ডাকাতি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় এবং মাদক’সহ নানাবিধ অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল বলে স্বীকার করেছে।

তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে রাতেই মহেশখালী থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন