২৩ অক্টোবর ২০২৫

রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, বাস্তবে নাই

মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক »

বাংলা আমার মায়ের ভাষা। বাংলা মায়ের কোল। আর বাংলাকে ঘিরেই আজ মহান একুশ ফেব্রুয়ারি। আজকের দিনের এই প্রভাতফেরি যেন বাঙালিদের মনে করিয়ে দেয় ‘আজ ভাষা আন্দোলনের সেই দিন’। কিন্তু ‘রাষ্ট্রভাষা আমরা বাংলা চাই’ এই স্লোগান শুধু একদিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বছরের বাকি ৩৬৪ দিন আমরা বাংলাকে ভুলে যাই। কারণ আর্ন্তজাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজি স্বীকৃত। অমর একুশকে ঘিরে কত আয়োজন-প্রভাতফেরি, শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পন, সালাম, বরকত আর রফিকসহ ভাষা আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মৃতিচারণে নানা কর্মকাণ্ড।

প্রত্যক্ষভাবে দেখা গেছে, রবিবার গভীর রাতে একটু বৃষ্টি হলেও শহীদ স্মৃতি স্মরণে অনেকেই দিবসের প্রথমভাগে শহদি মিনারে পুষ্পমাল্য দিতে গেছেন। তবে দুঃখের বিষয় এই প্রথম চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এবার ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে পারেনি নগরবাসি। কারণ স্বাধীনতার আগে গড়ে তোলা চট্টগ্রাম শহীদ মিনার ভেঙে ফেলা হয়েছে।

পাহাড়তলীস্থ শহীদ শেখ রাসেল স্মৃতি পার্কে থাকা শহীদ মিনারে সাকাল সাতটা পর্যন্ত মাত্র দুটি সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক দিয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ে কারখানায় থাকা শহীদ মিনারে বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়কের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক দিয়েছন কারখানার শ্রমিক ও কর্মচারিরা। এসময় শহীদদের স্মৃতি চারণ করেছেন কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তাপস কুমার।

আমর উচ্চস্বরে বলতে পারি আমার মায়ের ভাষা বাংলা। বাংলা মায়ের তথা বাংলাদেশের জন্মদাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির উদ্দেশ্যে বলেছেন— “এই স্বাধীনতা তখনই আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে যেদিন বাংলার কৃষক, মজুর ও দুঃখী মানুষের দঃখের অবসান হবে”। আর বাংলা ভাষাই হইবে রাষ্ট্র ভাষা”। ৫২’র ভাষা আন্দোলন আর ৬৯’র গণঅভ্যূত্থানের পর বাঙালি জাতি শেখ মুজিবুর রহমান নামের এই দেশপ্রেমিক ও নেতাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ নামে ভূষিত করে। কোটি বাঙালির কণ্ঠে ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ কারণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাংলার জন্য লড়েছেন। বাংলা মাতৃভাষার দ্বিতীয় জন্ম হয়েছে বঙ্গবন্ধুর কারণেই।

বাঙালি জাতির এ জনক শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদারদের দোসরদের হাতেই নির্মমভাবে বুলেটের আঘাতে খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কাল রাত্রিতে। সারা বাংলাকে হারাতে হয়েছে জাতির পিতাকে। প্রতি বছরের ১৭ মার্চ জাতির পিতার শততম জন্মদিন পালনে সারাদেশেই প্রস্তুতি নিচ্ছে ভক্ত ও অনুরাগীরা। সরকারি-বেসরকারি এমনকি বিদেশি ও মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন পালনে অপেক্ষমান। বিভিন্ন স্থানে ছোট বা বড় আকারে লাগানো হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ছবি।

আমরা বাঙালি— এই গর্বটুকু করতে পারি শুধুমাত্র জাতির জনকের দেশপ্রেমের কারণে। আমরা বাংলাদেশি তাও বলতে পারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারণেই। বঙ্গবন্ধুই পাকিদের বিরুদ্ধে বাঙালিদের জাগ্রত করতে কারাগার থেকেও হুঙ্কার দিয়েছেন। স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে শুরু করে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা অনস্বীকার্য। আমাদের জানা আছে বা নেই তবে তৃতীয় প্রজন্মের কাছে এখন ১৯৫২ যেমন ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস প্রায়ই অজানা।

১৯৫২ সালের ২৩ জানুয়ারি খাজা নাজিম উদ্দিন ঘোষণা করেন— পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে ‘উর্দু’। এর প্রতিবাদে বন্দি থাকা অবস্থায় ২১ ফেব্রুয়ারিকে রাজবন্দি মুক্ত এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি দিবস হিসেবে পালন করার জন্য বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান। ১৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু এ দাবিতে জেলখানায় অনশন শুরু করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্রসমাজ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশ গুলি চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এসময় সালাম, বরকত, রফিক ও শফিউল শহিদ হন। ১৯৫৩ সালে মাওলানা ভাসানিসহ প্রভাতফেরিতে বের হন কোটি মানুষের কণ্ঠস্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

আরও পড়ুন