৩১ অক্টোবর ২০২৫

রাস্তার রাজা সিএনজি অটোরিক্সা!

তারেক মাহমুদ »

নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের যাত্রী সাধারণের বাহন হিসেবে পরিচিত দেশীয় প্রাকৃতিক গ্যাসে নামমাত্র খরচে পরিচালিত সিএনজি চালিত অটোরিক্সা। অটোরিক্সা চালকদের যাত্রী হয়রানি বন্ধ হয়নি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারি সত্ত্বেও ভাড়া বৃদ্ধি থেমে নেই। ‘পুলিশ ধরলে কিন্তু মিটারের কথা বলতে হবে’– চালকদের এমন শর্ত মেনেই যাতায়াত করতে হচ্ছে যাত্রীদের।

অনেক সিএনজি অটোরিক্সাতে তো ইদানীং আর মিটারই রাখা হয় না। যেগুলোতে আছে তার অনেকগুলোতেই আবার মিটার নষ্ট। অথবা ভালো থাকলেও বলবে মিটার নষ্ট, মিটারে যাওয়া যাবে না। এসবের কারণে এখন জনগণও মিটারের কথা একপ্রকার ভুলেই গেছে। এখন প্রায় শতভাগ সিএনজিই নিজেদের ইচ্ছামত দর হাঁকিয়ে যাত্রী পরিবহন করে। এতে করে সিএনজিগুলো প্রতি ট্রিপেই সরকার-নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ কখনো কখনো তারও বেশি টাকা জনগণের পকেট থেকে বের করে নিচ্ছে। আবার যখন কোন রুটে খুব জ্যাম থাকে সে রুটে কিন্তু তারা মিটারে যেতেই আগ্রহী। কারণ, জ্যামের কারণে অল্প দূরত্বেও অনেক বিল উঠে।

ভুক্তভোগী যাত্রীরা জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত বাস সংকট এবং ট্যাক্সি ক্যাবের আকাশছোঁয়া ভাড়ার কারণে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ওপরই ভরসা করতে হয় তাদের। ফলে বাড়তি ভাড়া, মিথ্যা বলার প্রতিশ্রুতি_ এসব মানতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। 

ছবি: মিটার নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে বিআরটিএ’র ম্যাজিস্ট্রেট
এস এম মনজুরুল হকের অভিযান।

সরকারের প্রনীত সিএনজি অটোরিক্সায় ২০০৭ এর নীতিমালায় ২. এ বলা হয়েছে, সংযোজিত মিটার নিম্মোক্ত সুবিধাদি থাকতে হবে: ক. সরকার নির্ধারিত ভাড়ার হার এডজাস্ট/ মডিফাই করে সীল করার ব্যবস্থা, খ. ভাড়া করার পর চালিত প্রকৃত দুরত্ব কিলোমিটার এবং ভাড়ার টাকা রেকর্ডের ব্যবস্থা, গ. মোট দূরত্বের এবং মোট ভাড়া দিনে রাতে পড়ার উপযোগী দৃশ্যমান এবং পরিস্কার উজ্জলভাবে প্রদর্শনের ব্যবস্থা, ঘ. সরকার কর্তৃক নির্ধারিত প্রাথমিক ভাড়া এবং এক চতুথাংশ এক পঞ্চামাংশ কিলোমিটার ভাড়া রেকর্ড করার ব্যবস্থা, ঙ. যাত্রী কর্তৃক ভাড়ার এবং মোট ব্যবহার সময় রেকর্ডের ব্যবস্থা, চ. যাত্রী আসন থেকে সম্পূর্ণ মিটার অবলোকনের ব্যবস্থা, ছ. ২ মিনিট ওয়েটিং টাইমের জন্য এবং এক চতুথাংশ এক পঞ্চামাংশ কিলোমিটার ভাড়া রেকর্ড করার ব্যবস্থা, জ. ভাড়ার মিটার সর্বদা অপারেশনাল থাকা বাধ্যতামূলক। রাস্তায় চলাচল কালে মিটার নষ্ট টেম্পারিং রং এডজাস্টমেন্ট প্রমাণিত হলে চালকের ক্ষেত্রে ড্রাইভিং লাইন্সেস মালিকের ক্ষেত্রে গাড়ীর রুট পারমিট বাতিল করা হবে।

আইনে আরো বলা আছে,  মেট্রো সিএনজি শহরের যেকোনও স্থানে যেতে বাধ্য থাকবে। আইন অনুযায়ী, এক্ষেত্রে চালক না করতে পারবে না। যাত্রী প্রথম ২ কিলোমিটারের ভাড়া ৪০ টাকা, এরপর প্রতি কিলোমিটারের জন্য ১২ টাকা করে পরিশোধ করবেন। অর্থাৎ কোন যাত্রী ৩ কিলোমিটার দূরত্বের কোন স্থানে গেলে তার ভাড়া আসবে ৫২ টাকা। অথচ বর্তমানে একজন যাত্রী ৩ কিলোমিটার দূরত্বের কোন স্থানে ১০০ টাকার কমে যেতে পারবেন না।


ছবি: মিটার নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে বিআরটিএ’র ম্যাজিস্ট্রেট
এস এম মনজুরুল হকের অভিযান।

বিআরটিএ চট্টগ্রামের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মনজুরুল হক বলেন, রাস্তায় সবচেয়ে চামে থাকে এই সিএনজিওয়ালারাই। এককথায়, এরা রাস্তার রাজা বললেই চলে। কোন লাগাম নেই। কোন কিছুর ধার ধারে না এরা। পরোয়া করে না কাউকেই। তাদের ইচ্ছাই সবকিছু। সিএনজিতে সরকার-নির্ধারিত ভাড়া বলে যে কিছু আছে এদের আচরণ দেখলে তা মনেই হয় না। মিটার তো এখন এদের কাছে মান্ধাতার আমলের বিষয় হয়ে গেছে। মিটারে চলা বন্ধ করে দিয়েছে সেই কবেই! এখন কোন যাত্রী ‘ভুল করে’ মিটারে যাওয়ার কথা বলে ফেললে এরা এমন এক চাহনি দেয় কিংবা এমন এক মন্তব্য করে বসে, যাতে মনে হয় মিটারের কথা বলে যাত্রী আইনবিরোধী কথা বলে ফেলেছেন।

তিনি বলেন, মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্ট ও ট্রাফিক পুলিশ মিটার চেক করার কারণে সিএনজিওয়ালারা যাত্রীদের শিখিয়ে দেয়, মোবাইল কোর্ট বা ট্রাফিক পুলিশ ধরলে বলবেন মিটারে যাচ্ছি। নাহলে কিন্তু ঝামেলায় পড়ে যাবেন! দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা আর কি! 

তিনি আরো বলেন, আজ আমার পুরো অপারেশনই ছিলো এই সিএনজিগুলোর বিরুদ্ধে। মিটারে না চলা, মিটার সচল না থাকা, মিটারে না চলেও মিটারে চলছে বলে মিথ্যা বলা, যাত্রী দেখতে পায় এমন স্থানে মিটার স্থাপন না করা, যাত্রীর চাহিত গন্তব্যে যেতে রাজি না হওয়া, নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরিধান না করা ইত্যাদি না অপরাধে আজ অনেকগুলো সিএনজিকে জরিমানা করেছি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন থেকে নিয়মিতই অভিযান চালাবো।

নগরবাসীকে অনুরোধ করে মনজুরুল হক বলেন, আপনাদের কাছে অনুরোধ, এখন থেকে সিএনজিগুলো মিটারে যেতে রাজি না হলে সিএনজির নম্বরসহ আমাদের ইনবক্সে অভিযোগ দায়ের করুন। আইন না মানা সিএনজিগুলোর রেজিস্ট্রেশন বাতিলের ব্যবস্থা করা হবে।

বাংলাধারা/এফএস/এমআর/টিএম

আরও পড়ুন