দেখে মনে হবে এটা সড়ক নয়, যেন ময়লার ভাগাড়। দুর্গন্ধে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় পথচারীদের। নাক চেপে যাতায়াত করতে হয় স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের। এমনই দৃশ্য দেখা গেছে, চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জ্যারটেক আখতারুজ্জামান চত্বরের পূর্ব পাশের কালারপোল সড়কে। সড়কের পাশেই আবর্জনার স্তূপ ও কারখানার ময়লা পানি।
এমনকি কারখানার ভেতরে অবস্থিত ভেজিটেবল অয়েল তৈরিতে বর্জ্য মিশ্রিত দূষিত পানিতে সয়লাব হচ্ছে শিকলবাহা কালারপোল সড়কের অলিগলি। কখনো দেখা যায় কারখানার বর্জ্যের ময়লার পানিতে সড়কও তলিয়ে যায়। সড়কে দু’পাশের কারখানা ও দোকানগুলোর কারণে এ দুরবস্থা বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
কোনো ইটিপি প্ল্যান্ট স্থাপন ছাড়াই চলছে কর্ণফুলী এলাকায় এ রকম নানা কলকারখানা। ডাইংয়ের ক্যামিক্যাল মিশ্রিত বর্জ্য নিষ্কাশনের কোনো ড্রেন নির্মাণের জায়গা না থাকায়, মইজ্জ্যারটেকের কালারপোল মূল সড়কের উপর দিয়ে এ বর্জ্য মিশ্রিত পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
জনবহুল পরিবেশে কলকারখানা গড়ে ওঠায় দিন দিন আশে পাশে বসবাস করা মানুষের জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে। এসব কল কারখানার বিকট শব্দ, অপসারিত নানা রাসায়নিক পদার্থ বাতাসে মিশে যাওয়ায় আশপাশের শিশুদের প্রায় নানা চর্মরোগ ও শ্বাসকষ্টে ভোগতে দেখা যায়।
মুনিরুল ইসলাম সেলিম নামে এক এলাকাবাসী বলেন, ‘কালারপোল সড়কের ফুটপাতের উপর কারখানার জমিয়ে রাখা বর্জ্য ও ময়লা ফেলা হচ্ছে। এছাড়াও দোকানপাট স্থাপন করার সময় পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন না রাখায় সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে, পথচারীদের হাঁটাচলা অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।’
আবার অনেকের অভিযোগ, পথচারীরা চলাচলের সময় ড্রাইভাররা গাড়ি চালাতে গিয়ে জোরে গাড়ি চালিয়ে গেলে রাস্তায় জমে থাকা নোংরা পানি ছিঁটকে পরিধেয় পথচারীদের কাপড় চোপড়ও ভিজে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফুটপাতের পাশে ট্রাক পার্কিং করে কারখানার উৎপাদিত পণ্য লোড আনলোড করছেন। এতে পথচারীদের নির্বিঘ্নে পথ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও স্থানীয় প্রশাসন কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তর কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় বাবুল কুমার শীল বলেন, ‘ময়লার দুর্গন্ধ বাতাসে ভেসে আসে। দুর্গন্ধে এ সড়ক দিয়ে আসা যায় না। অনেক সময় বমি আসে। এলাকাবাসীর স্বার্থে এখানে ময়লা ফেলা বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’ একই কথা জানালেন স্থানীয় যুবক আলা উদ্দিন আজাদ ও অমিত হাসান।
শিকলবাহার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘কারখানা কতৃপক্ষের চরম অব্যবস্থাপনায় সড়কটির এই অবস্থা। রাস্তার উপর তারা ময়না-আবর্জনা ফেলায় দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে যাত্রী ও পথচারীরা। ওই সড়কে চলাচলরত স্কুল, কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণী পেশার মানুষদের নাক-মুখ চেপে অতিক্রম করতে হচ্ছে সড়কের ওই অংশটি। এতে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে এলাকার বাসিন্দারাও।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম দক্ষিণ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, কালারপোল সড়কে দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলছে। স্থানীয় কোন জনপ্রতিনিধি অভিযোগ করেনি। এলাকার মানুষের স্বার্থে এ সমস্যা সমাধান করতে পারে উপজেলা প্রশাসনও। আমরা খবর নিচ্ছি বিষয়টির।’
কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুমা জান্নাত বলেন, ‘এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
চট্টগ্রাম জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, ‘সড়ক তো ময়লা আবর্জনা ফেলার জায়গা না। কেউ যদি সড়কে বা রাস্তায় কারখানার বর্জ্য মিশ্রিত পানি ফেলে জনসাধারণের পথ চলায় বিঘ্ন ঘটায় তাহলে আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে পারে। আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।’













