২৪ অক্টোবর ২০২৫

রেড জোন; অবাধে বিচরণ নয়, মানুষকে ঘরে রাখার প্রশিক্ষণ

রাইসুল উদ্দিন সৈকত »

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকার দেশের কিছু কিছু এলাকায় ‘রেড জোন’ জারি করেছে। আর এই রেড জোন মানুষকে ‘ঘরে রাখার’ অন্যতম প্রশিক্ষণ। কারণ এর আগে বিগত দুই মাসের বেশি সময়ের লকডাউনের প্রশিক্ষণকে পুঁজি করে কোন লাভ হয়নি। মানুষের অবাধে বিচরণ করোনাকে আরো উৎসাহিত করছে।

আমাদেরকে সভ্য হতে হবে। সভ্যতা রক্ষার দায় নিতে হবে আমাদেরই। মনে রাখতে হবে বাঁচতে হবে আমাদেরই। মানবজাতিকে বাঁচাতে হবে। করোনা পরিস্থিতিতে টানা দুই মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর সীমিত পরিসরে অফিস খুলে গত ৩১ মে। এই দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা লকডাউন বা সরকারি ছুটিতে জনগণকে দেওয়া করোনাভাইরাস থেকে নিজকে রক্ষা করার নানান কৌশল শেখানো হয়েছে।

মোটামুটিভাবে দেখা যায় সবাই অন্তত মুখে একটি মাস্ক ব্যবহার করছেন। দেশে এই মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর আগে ‘সামাজিক দূরত্ব রক্ষা’ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় সামাজিক ট্রান্সমিশনও বেড়ে গেছে। চিকিৎসা ব্যবস্থাও উন্নতি তেমন করা যায়নি।

এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মতে, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোরভাবে লকডাউন কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর হারের ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে লাল (রেড), হলুদ (ইয়েলো) এবং সবুজ (গ্রিন) অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে।

জানা গেছে, ‘রেড জোনে’ প্রবেশ বা বের হওয়া অনুমতি দেওয়া হবে না। ‘ইয়েলো জোনে’ সর্ব সাধারণ ও যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ থাকবে। ‘গ্রিন জোনে’ তেমন কোনো বিধিনিষেধ থাকবে না। ‘রেড জোন’ এবং ‘ইয়েলো জোন’ থেকে কাউকেই ‘গ্রিন জোনে’ প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১০টি এলাকা রেড জোনের মধ্যে পড়েছে। যা কার্যকর হচ্ছে ১৬ জুন থেকে। সংক্রমণের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোই রেড জোন। যখন কোনো এলাকায় প্রতি লাখে ৩০ জনের অধিক আক্রান্ত ব্যক্তি থাকবে তখন সেটাকে বলা হবে রেড জোন। লকডাউন কার্যকর হলে এই জোনে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না, একইভাবে কেউ বেরুতেও পারবে না।

ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে জেনে গেছি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার রেড জোন এলাকাগুলোর নাম। তারপরও বলতে হয়, ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড, ১৪ নম্বর লালখানবাজার ওয়ার্ড, ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ড, ২০ নম্বর দেওয়ানবাজার ওয়ার্ড, ২১ নম্বর জামালখান ও ২২ নম্বর এনায়েতবাজার ওয়ার্ড, ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর ওয়ার্ড, ৩৭ নম্বর উত্তর মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ড, ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ড, ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ড গুলোই আপাতত রেড জোন।

চট্টগ্রাম মহানগরীর এই এলাকাগুলোতে ১৬ জুন থেকে পরবর্তী ২১ দিন কার্যকর থাকবে।জানতে পেরেছি, লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে ২১ দিন কেউ ঘর থেকে কেউ বের হতে পারবে না। প্রশাসন সক্রিয় থাকবে যাতে কেউ ঘর থেকে বের হয়ে আড্ডাবাজি করতে না পারে। যার যা দরকার তা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

নাগরিকদের কিছু হটলাইন নম্বর জানিয়ে দেওয়া হবে। সামর্থ্যবানরা বিনিময় মূল্যে পেয়ে যাবেন। যারা অসহায় তাদেরকে বিভিন্ন সংস্থা থেকে সাপোর্ট দেওয়া হবে।

জানা গেছে, রেড জোনের আওতাধীন এলাকাগুলোতে মোবাইল, ইন্টারনেট, ব্যাংকিং ও স্বাস্থ্যসেবা, সংবাদপত্রসহ অত্যাবশ্যকীয় খাত ব্যতীত সবকিছু কঠোরভাবে বন্ধ থাকবে।

এদিকে চট্টগ্রামের ৯ উপজেলাকেও ‘রেড জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। রেড জোনের ৯ উপজেলা হলো- আনোয়ারা, বাঁশখালী, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ, পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, সীতাকুণ্ড ও হাটহাজারী।

দেশে করোনা ভাইরাস আসার পর আমরা দেখেছি, মানুষ যতটুকু না ভাইরাসের ভয়াবহতা বুঝে আতঙ্কিত তার থেকেও অস্বাভাবিকভাবে উৎসাহ নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। আমরাও দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছি।আবার ১৮ মার্চ সরকার দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করল। এরপর ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে।

দ্বিতীয় দফায় ছুটির মেয়াদ আবার বাড়ানো হলে দেশের ভিতরে অবকাশকালীন ভ্রমনের হিড়িক পড়ে যায়। যদিও পরবর্তিতে চাপ প্রয়োগ করে সকলকে ঘরে ফেরানো হয়। পরে দেওয়া হলো সাধারণ ছুটি। মানুষ দলে দলে গ্রামে ফিরে গেল। আমরা এইটুকু জানি, করোনা বিস্তার ঠেকাতে আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। আমাদের কর্মকাণ্ডই মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনতে পারে।

লেখক : চেয়ারম্যান, এলবিয়ন গ্রুপ

আরও পড়ুন