ইয়াসির রাফা »
করোনা চিকিৎসার নামে চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালটির ১০০ বেড করোনা চিকিৎসায় প্রস্তুত আছে- এই মর্মে পরিদর্শন কমিটি একটি চিঠি জমা দিলেও বাংলাধারার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে অনিয়মের চাঞ্চল্যকর তথ্য।
করোনা চিকিৎসায় চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালকে প্রাথমিকভাবে কোয়ারেন্টাইনের জন্য নির্ধারণ করা হলেও করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় পরবর্তীতে করোনা ইউনিট চালু করা হয়। যার প্রেক্ষিতে সরকার এই হাসপাতালের ১০০ বেডের জন্য ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকার অর্থ বরাদ্দ দেয়। সেই হিসেবে প্রতিটি বেডের জন্য সরকারি বরাদ্দ ৪০ হাজার ৫০০ টাকা।
কিন্তু ১০০ বেডের পরিবর্তে মাত্র ৫৪টি বেড দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। প্রশ্ন উঠতে পারে- বাকী ৪৬টি বেড গেল কোথায়? যার সদোত্তর দিতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চীফ মেডিকেল অফিসার (পূর্ব) ডা. শামছুল আলম মো. ইমতিয়াজ বলেন, ১০০টি বেড রেডি হলেও তার মধ্যে ৫০টি বেড আপাতত চালু করেছে, বাকিগুলো আবার চালু করা যাবে। এতে সমস্যা কোথায়!

এদিকে রেলওয়ে হাসপাতাল চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক সৈয়দ নুরুল আফসার জানান, বরাদ্দে আপাদত কোন সংকট নেই। বেড তো বসানোই যাবে, কিন্তু একটু স্পেস বেশি দেয়ার কারণে এই সমস্যাটা সৃষ্টি হয়েছে।
এই সংকটময় অবস্থাতে ১০০ বেড বরাদ্দের পরেও কেবল মাত্র ৫৪ বেড দিয়ে চিকিৎসাসেবা চলছে। বাকি বেডগুলো কেনো বসানো হচ্ছে না বা কবে বসানো হবে, সে প্রসঙ্গে কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট এই কর্মকর্তারা।
বাংলাধারা’র হাতে আসা সরকারি আদেশের তথ্যানুযায়ী হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ড বয় এবং আয়াসহ সকলের জন্য ২ হাজার পিপিই বরাদ্দ দেয়া হলেও হাসপাতালের কর্মচারীদের একটি মাত্র পিপিই টানা সপ্তাহ ধরে ব্যাবহার করতে হচ্ছে। এছাড়াও দেখা যায়, হাসপাতালের রোগীদের সাথে ডাক্তাররা দূরত্ব বজায় রেখে কথা বললেও তাদের শরীরে ছিলনা কোন পিপিই। অভিযোগ আছে, ডাক্তাররা নাকি তেমন একটা রোগীদের কাছেই যান না, যেতে হয় সবসময় কর্মচারীদের। তাহলে প্রশ্ন জাগতে পারে- সরকারের দেয়া পিপিইগুলো যাচ্ছে কোথায়? ব্যবহারই বা করছে কারা?
হাসপাতালের কর্মচারিরা অভিযোগ তুলেন- একটা মাক্স পাচ-ছয়দিন ব্যবহার করতে হচ্ছে অথচ একদিনের বেশি এই মাক্স ব্যবহার করা উচিৎ না। প্রত্যেক রুমে গরম পানি করার জন্য আলাদা আলাদা কেটলি বরাদ্দ থাকা হলেও দেয়া হয়েছে মাত্র একটি কেটলি। কিছু বললে তারা বলে- ‘এসব বাইরের থেকে অনুদান হিসাবে আনতে হচ্ছে।’ বাইরের অনুদান আনতে হলে বরাদ্দকৃত সামগ্রীগুলো গেলো কোথায়?- এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেন কর্মচারীরা।
সরকারি আদেশ মোতাবেক কর্মচারিদের সাত দিন কাজ করার পর ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও এখনো পর্যন্ত এর কোন উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের এক ওয়ার্ড বয় অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদেরও তো ছেলে-মেয়ে পরিবার আছে। দশদিন টানা ডিউটি করার পর তারা বলে বাসায় চলে যাও। অথচ নিয়ম অনুযায়ী আমাদের কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করার কথা। আমাদের পরিবারেও তো সুরক্ষার ব্যাপার আছে।’
এদিকে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলায় কর্মীদের উপর চড়াও হয় একাউন্টসের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা। প্রতিদিন কতজন রোগীর জন্য খাবার আসে তারও কোন তথ্য দিতে পারেনি একাউন্টসের এই কর্মকর্তা। অভিযোগ আছে ১০০ জন রোগী দেখিয়ে খাবার নিয়ে আসা হলেও হাসপাতালে খাবার পৌঁছায় শুধুমাত্র ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যানুযায়ী।
এইসব অভিযোগের ব্যাপারে পরিদর্শন কমিটির আহবায়ক এবং স্বাস্থ্য বিভাগের উপ পরিচালকের সাথে কথা হলে দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা অস্বীকার করে বরাদ্দকৃত অর্থ এখনো বুঝে পাননি বলে জানান তিনি।
সাস্থ্য বিভাগের উপ পরিচালক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের বরাদ্দ যতটুকুই দেয়া হোক, যা দরকার ওতটুকুই আমরা খরচ করবো। অনিয়ম হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
ভিডিও দেখতে নিচে ক্লিক করুন…
বাংলাধারা/এফএস/টিএস/এএ













