মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক »
রেল স্টেশনে প্রতারক, টিকেট কালোবাজারি, অসাধু ক্যাটারিং সার্ভিস, বুকিংকৃত মালামালের নিরাপত্তার অভাব। যাত্রীদের অনিরাপদ যাত্রা বছরের পর বছর চলে আসছে ট্রেন সার্ভিস সিস্টেম বা পরিচালনায়। পলিটেকনিক স্টেশনে ঝুলছে শীতবস্ত্র। এসব অনিয়ম আদৌ ঘুঁচাতে পারেনি রেল কর্তৃপক্ষ। প্রতিবছরই পদক্ষেপ নেয়া হয় রেল সেবা সপ্তাহ পালনের। বিভিন্ন সমস্যাগুলো এক সপ্তাহের জন্য দূরীকরণের চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বছরের বাকি ৫১ সপ্তাহ আগের অনিয়মে ফিরে যায়।
অভিযোগ রয়েছে, রেল সপ্তাহ পালনের সময় রেলের বাণিজ্যিক ও পরিচালন বিভাগের সমন্বয়ে টাস্কফোর্সের মনিটরিং চলে। যার কারণেই কয়েকদিনের জন্য সমস্যা দূর হলেও বছরের বাকি ৫১ সপ্তাহ চলতে থাকে চরম অনিয়ম, দুর্নীতি ও নানা অব্যবস্থাপনা। ফলে সেবা বঞ্চিত হয় গ্রাহক ও যাত্রী সাধারণ। অথচ, রেলের পরিবহণ ও যাত্রী সেবাই হচ্ছে আয়ের একমাত্র উৎস। এ আয়কে কেন্দ্র করে প্রতিবছর ট্রেনের পরিচালন বিভাগসহ প্রত্যেকটি বিভাগ সচল রাখতে ৩৫ হাজারেরও বেশি খুচরা যন্ত্রাংশ ক্রয় করা হয়।

আরও অভিযোগ রয়েছে, বছরের প্রায় প্রতিদিনই চরম ভোগান্তিতে থাকে যাত্রী সাধারণ। কোন ট্রেনের যাত্রাই যেন ভোগান্তির পরিবর্তে আরামদায়কে রূপ নেয় না। সাধারণ কোচ থেকে শুরু করে ভিআইপি কোচগুলোতেও যাত্রীদের সঙ্গে চলে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি), রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি), স্টেশনের কর্মচারীরাই যেখানে স্টেশন কম্পাউন্ডে নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকে সেখানে বিভিন্ন সময়ে কয়েকদিনের মনিটরিং সেল বা টাস্কফোর্স আইওয়াশ ছাড়া অন্য কিছু নয় বলে দাবি করেছেন যাত্রী সাধারণ।
টিকেট বুকিংয়ে থাকা অসাধু ক্লার্কদের টিকেট নিয়ে নৈরাজ্য, আরএনবি ও জিআরপির মেইল ও এক্সপ্রেস ট্রেনে সিট বাণিজ্য, টিকেট কালোবাজারির সঙ্গে আরএনবি ও জিআরপি সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকার ঘটনা ওপেন সিক্রেট।

এদিকে, স্টেশনের ওয়েটিং রুম অপরিচ্ছন্ন থাকা, টিকেট চেকিংয়ের নামে অর্থ হাতিয়ে নেয়া, ফ্লাটফর্মে প্রতারক চক্রের আনাগোনা ও রাতযাপন, ভাসমান হকারদের দৌরাত্ম্য, বিভাগের দায়িত্বহীনতার কারণে ট্রেনের বিলাসবহুল কোচে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বিকল, এসির বিনষ্ট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, কোচের ভেতরে এসির পাইপ ব্লক হয়ে পানি পড়া, খাবার গাড়ির পরিচালনায় থাকা ক্যাটারিং বিভাগের চড়ামূল্যে খাবার পরিবেশন, বিলাসবহুল নৈশ ট্রেনগুলোতে মাত্র তিন সদস্যের জিআরপি বাহিনী, ফ্লাটফর্মের অবৈধ কুলীদের কোচে বিচরণসহ নানা অনিয়ম অব্যাহত রয়েছে ট্রেন পরিচালনায়।
পূর্বাঞ্চলীয় উপ-পরিচালকের (গণসংযোগ) দফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছরই সেবা সপ্তাহ পরিচালিত হয়। এ সেবা সপ্তাহে টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে যাত্রী সেবাসহ স্টেশন কেন্দ্রিক ও ট্রেন পরিচালনায় নানা সমস্যা দূরীকরণ এবং পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সপ্তাহব্যাপী সেবার মধ্যে রয়েছে স্টেশন কেন্দ্রিক সড়কগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, টাইম টেবিল ও ভাড়ার তালিকা আপডেট করা, প্যাজেঞ্জার লাউঞ্জ, ওয়েটিং রুম, রিটায়ারিং রুম ও টয়টের পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি চলমান ট্রেনে পানি ও বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিত করা।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে কর্মরত এক কর্মকর্তা জানান, যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক যাত্রী সেবার জন্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা, স্টেশনে প্রতারক, টিকেট কালোবাজারি ও অন্যান্য অব্যবস্থাপনা দূরীকরণসহ খাবার গাড়িতে নিয়োজিত ক্যাটারিং বিভাগের খাদ্যের মান নিশ্চিত করা। স্টেশনে অপেক্ষমান মহিলা ও শিশু যাত্রীদের নিরাপত্তার পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ যাত্রীদের ট্রেনে উঠানামায় হুইল চেয়ার কিংবা ভ্রাম্যমাণ সিঁড়ির ব্যবস্থা করা। কিন্তু এখন আর কোনটিই ঠিক নেই। সবই আগের অবস্থানে চলে যায় রেল সেবা সপ্তাহ শেষে।













