১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বামী-স্ত্রীর সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে শালিকাসহ তিনজন খুন

কক্সবাজার প্রতিনিধি »

মাদক সেবন নিয়ে চলা পারিবারিক কলহের জের ধরে দা ও খুন্তি নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান স্বামী-স্ত্রী। একজন আরেকজনকে এলোপাতাড়ি কোপাচ্ছে দেখে সংঘর্ষ থামাতে মাঝখানে দাঁড়িয়ে যান যুবতী শ্যালিকা। বেসামাল স্বামী-স্ত্রী দুজনের আঘাতের জখম হন সংঘর্ষ থামাতে চেষ্টা চালানো তরুণী। এতে রক্তাক্ত জখম হয়ে তিনজনেরই মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের বালুর মাঠ এলাকায় শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর হৃদয় বিদারক এ ঘটনা ঘটেছে।

নিহত রোহিঙ্গারা হলেন, কুতুপালং মেগা ক্যাম্পের ২-ইস্ট ক্যাম্পের ডি-৭ ব্লকের আলী হোসেনের ছেলে নুরুল ইসলাম (৩২), তার স্ত্রী মরিয়ম বেগম (২৬) ও নুরুল ইসলামের শালিকা হালিমা খাতুন (২২)। দাম্পত্য জীবনে নুরুল ইসলাম-মরিয়ম দম্পতির তিন সন্তান রয়েছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃংঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত আমর্ড পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গারা জানান, নিহত নুরুল ইসলাম মাদকাসক্ত ছিলেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো। সংসারে তিনজন শিশু সন্তান থাকায় সংসার বিচ্ছেদ না করে সমস্যা সমাধানে বেশ কয়েকবার শালিসি বৈঠকও হয়েছে। বৈঠকের পর কয়েকদিন স্বাভাবিক চললেও সপ্তাহ পার হতেই স্বামী পুরোনো অভ্যাসে জড়ালে দু’জনের কলহ আবারো বাঁধে। এটি যেন নিয়মে পরিণত হয়ে যায়।

তারা আরো জানায়, এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সন্ধ্যায় আবারও তর্কে জড়িয়ে পড়েন স্বামী-স্ত্রী। বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে স্বামী দা ও স্ত্রী খুন্তি নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। স্বামী স্ত্রীকে দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে আর স্ত্রীও পাল্টা আঘাত করে স্বামীকে। এটি জানতে পেরে বোন জামাই ও বোনকে থামাতে কোপাকুপির মাঝখানে দাঁড়ায় শ্যালিকা হালিমা। তারা দুজন হালিমাকেও বেপরোয়া আঘাত করে। এতে হালিমা জখম পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান। এরপর একে একে সবাই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। প্রতিবেশীরা ঘটনাস্থলে এসে তিনজনকে ক্যাম্পে চলমান হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে আমর্ড পুলিশ ১৪ (এপিবিএন) এর অধিয়ানক (এসপি) মো. নাজমুল হক বলেন, একে অপরকে বেপরোয়া ভাবে কুপিয়েছে এবং আঘাত করেছে। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণে তিনজনই মারা পড়েছে বলে চিকিৎসকদের ধারণা। রাত সাড়ে ৯টার দিকে মরদেহগুলো উখিয়া থানাকে হস্তান্তর করা হয়েছে। পাশাপাশি অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। এ ঘটনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জুড়ে শোক বিরাজ করছে বলে উল্লেখ করেন এসপি নাজমুল হক।

কুতুপালং ক্যাম্পের ইনচার্জ (উপ-সচিব) মো. রাশেদুল ইসলাম খুনের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামী-স্ত্রী ও শ্যালিকাসহ তিনজন খুন হন বলে জেনেছি। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধতন মহলকে অবহিত করা হয়েছে।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সন্জুর মোর্শেদ জানান, শরনার্থী শিবিরে তিন খুনের ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরন করেছে।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাতে টেকনাফের ২৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কাছে দমদমিয়া ন্যাচার পার্ক এলাকায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গুলিতে বাংলাদেশী এক সিএনজি অটোরিকশা চালক নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয় অপর এক রোহিঙ্গা যুবক। এর ২৪ ঘন্টার মাথায় এ তিন খুনের ঘটনা ঘটলো।

বাংলাধারা/এফএস/এআর

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ