মো. সৈকত »
সরকার ঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউনের দ্বিতীয় দফায় চট্টগ্রাম নগরীর সড়কে আরও বেড়েছে ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল আর রিকশার চলাচল। তবে বাসসহ বিভিন্ন গণপরিবহন যথারীতি বন্ধ রয়েছে। সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ যতই দিন যাচ্ছে ততই দুর্বল হয়ে পড়ছে।
বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) সর্বাত্মক কঠোর বিধিনিষেধের নবম দিনে নগরজুড়ে দেখা গেছে যানবাহনের ব্যাপক চলাচল। অনেক সড়কে গাড়ির চাপের কারণে ট্রাফিক সিগন্যালে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হলেও পুলিশ চেক পোস্টগুলোতে দেখা গেছে উল্টো চিত্র।
জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলে স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা থাকলেও বাস্তবে মানছেন না বেশিরভাগ মানুষ। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন হাটবাজার, দোকানপাট, উন্মুক্ত স্থানেও স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বালাই নেই। আবার যারা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন তারা পাশেরজন না মানায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও স্বাস্থ্যবিধি মানাতে জোরালো কোনো তাৎপরতা দেখা যায় নি। ফলে করোনার সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা আর আগের মতো দেখা যায়নি। এছাড়া নগরীর কোন কোন ট্রাফিক সিগন্যালগুলোতে যানবাহনের ব্যাপক চাপ দেখা যায়।
অন্যদিকে, কঠোর বিধিনিষেধের নবম দিনেও কর্মজীবী মানুষদের কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে নানা দুর্ভোগকে সঙ্গী করে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দ্বিগুণ বা তিনগুণ ভাড়া দিয়ে মোটরসাইকেল, রিকশা বা হেঁটে কর্মস্থলে যাচ্ছেন।
জিইসি চেকপোস্টে থাকা খুলশি থানার এক কর্মকর্তা বলেন, যত গাড়ি এই পথ দিয়ে যাচ্ছে আমরা প্রত্যেককে চেষ্টা করছি জিজ্ঞেস করতে। কারণ অনেকে ভুয়া স্টিকার লাগিয়ে চলাচলের চেষ্টা করে। সেখান থেকে আমরা দেখেছি, কারও মুভমেন্ট পাস আছে, কেউ রপ্তানি পণ্যের কাজে বাইরে যাচ্ছে, কেউ ওষুধ কোম্পানির কাজে আবার কেউবা গার্মেন্টসের কাজে। সময় যত যাচ্ছে, গাড়ির চাপ তত বাড়ছে। তবে কোন গণপরিবহন চলছে না। নিজস্ব পরিবহনগুলো নিজস্ব প্রয়োজনে চলছে।
ওয়াসা এলাকার বাসিন্দা কালাম বলেন, কঠোর লকডাউন বলা হলেও গণপরিবহন ছাড়া রাস্তায় মোটামুটি সবকিছুই চলছে। গণপরিবহন আর সিএনজি না থাকায় রিকশা আর মোটরসাইকেল চালকরা রীতিমত এক প্রকারের জুলুম করছে। আগ্রবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে যাওয়ার জন্য একজন রাইডার ১৫০ টাকা দাবি করছে অন্যদিকে রিকশা বলছে ২০০ টাকা।সরকার যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি গণপরিবহন চালুর ব্যবস্থা করতো তাহলে আমাদের মত সাধারণ মানুষের জন্য অনেক ভাল হত।

সরকারের নির্দেশনায় খোলা স্থানে কাঁচাবাজার স্থাপনের নির্দেশ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। হোটেল-রেস্তোরাঁয় ভিতরে বসে খাওয়ার নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কোন কোন হোটেলে পর্দা টাঙ্গিয়ে বসে খেতে দেখা গেছে।
কাঁচাবাজার আর দোকানপাটগুলোতে বেশিরভাগ ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে মাস্ক নেই । আর তিনফুট শারীরিক দূরত্ব মানার কোন লক্ষণই নেই। এসব দোকানের ভেতরে একজনকে রেখে সামনে দোকানি ও কর্মচারীরা ঘোরাফেরা করেন। কোন ক্রেতা এলে তারা দ্রুত শাটার খুলে মালামাল বিক্রি করে আবার বন্ধ করে দেন।
স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষকে বাধ্য করতে প্রশাসনের তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি। কিছু স্থানে মোবাইল কোর্ট ও পুলিশের তদারকি থাকলেও তা ছিল খুবই সীমিত সময়ের জন্য। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি না মানার জন্য প্রশাসন মানুষের অসচেতনতাকে দায়ী করেছে।
উল্লেখ্য, দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সরকারের ঘোষিত চলমান কঠোর লকডাউনে নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানপাট নির্ধারিত সময় পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশনা থাকলেও অন্যান্য দোকান ও শপিংমল পুরোপুরি বন্ধের নির্দেশনা রয়েছে। আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত এই লকডাউন থাকবে।
বাংলাধারা/এফএস/এআর













