২৪ অক্টোবর ২০২৫

লকডাউনের কবলে দিশেহারা বন্দর নগরীর নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ

মো. সৈকত  »

লকডাউনে কাজ হারিয়ে শ্রমজীবী মানুষসহ নিম্ন আয়ের মানুষেরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আবার কেউ কেউ চাকরি হারিয়ে রয়েছেন বিপাকে। বিচ্ছিন্নভাবে কেউ কেউ হয়তো তাদের একবেলা ইফতার বা সেহেরী করাচ্ছেন। কিন্তু সেটা আদৌতে কোন সমাধান নয়।

চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নিম্ন আয়ের মানুষের নানা দুর্ভোগ চোখে পড়েছে। নগরীর নিউমার্কেট এলাকায় কথা হয় ভ্যান চালক জাফর গাজীর সাথে। লকডাউনের কারণে মার্কেটের দোকানপাট সব বন্ধ থাকায় এখন তার উপার্জন বন্ধ বললেই চলে। আগে তিনি ভ্যান গাড়িতে পাইকারি দোকান থেকে মাল নিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকার খুচরা দোকানগুলোতে পৌঁছে দিয়ে আসতেন। এতে তার প্রায় প্রতিদিন ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত আয় হত। কিন্তু এখন লকডাউনের কারণে সব বন্ধ। পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে তাই অনেকটা খেয়ে না খেয়ে জীবন পার করতে হচ্ছে।

কামাল(ছদ্ম নাম) ছিলেন বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট অফিসার। এপ্রিলের শুরুতেই তার চাকরি চলে যায়। তাই তিনি আছেন চরম বিপাকে। হাতে তেমন কোন জমা টাকা নাই যে তিনি সংসার চালিয়ে যেতে পারবেন। বাধ্য হয়ে একজনের কাছ থেকে ২০০০০ টাকা ধার করেছেন। লকডাউনের কারণে আবার কবে চাকরি পাবেন তার কোন ঠিক নেই।

একটি ফ্যাশন হাউসের বিক্রয়কর্মী রহমান বাধ্য হয়ে এখন বাদামতলী মোড়ে ভ্যানগাড়িতে করে ফল বিক্রি করছেন। ঈদের সময় তাদের বাড়তি উপার্জন হবার কথা কিন্তু লকডাউনের কারণে মার্কেট বন্ধ আছে। প্রতিদিন ফল বিক্রি করে যে ২০০-৩০০ টাকা আয় হয় সেটা দিয়েই সংসার চালাতে হচ্ছে।

কথা হয় মাহমুদ(ছদ্ম নাম) নামক রিকশা চালকের সাথে। কথাবার্তায় মার্জিত হওয়ায় জিজ্ঞাসা করলাম, রিকশা কতদিন ধরে চালাচ্ছেন। উত্তর দিলেন দুই মাস। মাহমুদ পড়ালেখা করছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স প্রথম বর্ষে। টিউশিনি আর কোচিং সেন্টারে পড়িয়ে নিজের খরচ নিজেই চালানোর পাশাপাশি পরিবারকেও সাহায্য করতেন। কিন্তু এখন লকডাউনের কারণে টিউশনি আর কোচিং বন্ধ থাকায় রাতে রিকশা চালিয়ে পরিবারকে সাহায্য করছেন। তিনি কারো কাছে হাত পাততে রাজি নন।

করোনা মহামারি প্রতিরোধে সরকারের সর্বাত্মক লকডাউন অনেককে পথে বসিয়ে দিচ্ছে। অভুক্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা এভাবে বাড়তে থাকলে সামাজিক বিপর্যয়সহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। তাই সরকারের উচিত এসব নিম্নআয়ের মানুষদের খাদ্য সহায়তা প্রদান করা।

বাংলাধারা/এফএস/এআর

আরও পড়ুন