মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক »
সড়কের ফুটপাতে হাটা যাচ্ছে না মৌসুমী ব্যবসায়ী আর সারা বছরজুড়ে অবৈধ দখলে রাখাদের কারণে। রাস্তা পারাপারেও বিপত্তি পথচারীদের। দ্রুতগামী বাস বা ট্রাকের কারণে এখন আতঙ্কগ্রস্ত পথচারী ও ছোট গাড়ির যাত্রীরা। রাস্তায় টু ও থ্রি হুইলারকে চাপের মুখে রাখে ট্রাক, বাস, মিক্সার মেশিন পরিবাহিত বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানের যানবাহন। পথচারীরা যেমন জেব্রা ক্রসিং মানছেনা তেমনি হেভিওয়েট দ্রুতগামী পরিবহনগুলো চলছে বেপরোয়া গতিতে। অনেকটা জীবন হাতে নিয়ে হাটছে পথচারী ও ছেট বাহনে থাকা যাত্রীরা।
সম্প্রতি ফেনীতে জেলা পুলিশের এক কনস্টেবল কাভার্ডভ্যান চাপায় নিহতের পর র্যাবের অভিযানে আটক চালক স্বীকার করেছে লাইসেন্স বিহীন চালকরাই সড়কে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে। এসব চালকদের বেশির ভাগই বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানের চালক ও হেলপার। চালকের অনুপস্থিতেতে অনেক সময় হেলপাররাই গাড়ি চালাচ্ছে ব্যস্ততম সড়কে। বিশেষ করে রাতের বেলায় চালকরা হেলপারের কাছে গাড়ির স্টীয়ারিং ধরিয়ে দিয়ে কেবিনের ভেতর ঘুমিয়ে পড়ে। এছাড়াও বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানগুলো কম বেতনে ড্রাইভিং লাইসেন্স বিহীন চালক নিয়োগ দিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, সস্তায় চালক পেতে গিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স বিহীন নিয়োগ চুড়ান্ত করায় মহাসড়েকে দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে।
১৭ এপ্রিল বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে মিরসরাইয়ে বাসে পিষ্ট হয়ে পথচারী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। রবিউল হোসেন সেলিম (৩৫) নামের এক যুবক মৃত্যুর ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে ওই উপজেলার লোকজন। জোরারগঞ্জের বিএসআরএম গেট এলাকায় রাস্তা পারাপারের সময় চট্টগ্রাম-কুমিল্লা রুটের তিশা প্লাটিনাম নামের একটি বাসের নিচে সেলিম চাপা পড়ে। তিনি জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাপাহাড় এলাকার মোহাম্মদ আবু তাহেরের ছেলে। জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ বাসটিকে আটক করেছে। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

এদিকে, গত ১২ এপ্রিল রাত ৩টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী সদর এলাকায় আরেকটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। ফেনীর মধ্যম রামপুর এলাকায় মহিপাল মোড়ে ঢাকামুখী লেনে হাইওয়ে থানা পুলিশের একটি টহল দল কর্তব্যরত ছিল। এসময় পুলিশের পিকআপ ভ্যান (ঢাকা-মেট্রো-ঠ-১৪-৩৫৬২) একটি কাভার্ডভ্যান পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে গাড়িতে থাকা কনস্টেবল মোতাহের হোসেন (২৫) গাড়ি থেকে নিচে পড়ে যায়। অপর কনস্টেবল আসাদুল ইসলাম (২৫) গাড়িতেই গুরুতর আহত হন। এমনকি পুলিশের পিকআপ ভ্যানের পেছনের অংশ দুমড়ে-মুছড়ে যায়।
মুমূর্ষু অবস্থায় আহতদের উদ্ধার করে দ্রুত ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক কনস্টেবল মোতাহের হোসেনকে মৃত ঘোষণা করে। তবে কনস্টেবল আসাদুল ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এদিকে ঘটনস্থলেই উল্টে যাওয়া ঘাতক কাভার্ডভ্যানটি পুলিশ উদ্ধার করে মহিপাল হাইওয়ে থানায় নিয়ে গেছে। তবে কাভার্ডভ্যানের চালক ঘটনার পরই পালিয়ে যায়।

ঘটনাস্থল থেকে ট্রাক ড্রাইভার মো. জাফর উদ্দিন (৩২) ও তার হেলপার জয় (১৪) পালিয়ে গেলেও তাদের পরিচয় পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় হেলপারও আহত হয়েছে। গোপনে চালক জাফর হেলপারকে ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। এরপর, হেলপারকে চিকিৎসারত অবস্থায় রেখে জাফর পালিয়ে যায়। র্যাব-৭ এর সদস্য কাভার্ডভ্যানটি তল্লাশি করে গাড়ির কেবিন থেকে দুই পুরিয়া গাঁজা উদ্ধার করে। এক পর্যায়ে ঘাতক ট্রাক ড্রাইভার মো. জাফর উদ্দিনকে (৩২) নোয়াখালীর সেনবাগ থানার দক্ষিণ রাজারামপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়। সেখানে স্থানীয় নাসির আহমেদের ছেলে জুয়েলের বসতঘরে লুকিয়ে ছিল। গত ১২ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে র্যাব-৭ এর ফেনী ক্যাম্পের একটি দল ড্রাইভার মো. জাফর উদ্দিনকে (৩২) আটকের পর জানতে পারে সে মাদকাসক্ত ছিল। তার পিতার নাম মো. সাহাব উদ্দিন, গ্রামের বাড়ি রাজারামপুর, সেবারহাট সেনবাগ।
অভিযোগ রয়েছে, কাভার্ডভ্যানটি মেসার্স তারেক ট্রান্সপোর্ট এন্ড ট্রেডিং এজেন্সি’র। জাফর ২০১৪ সাল থেকে দীর্ঘ ৮ বছর যাবৎ কাভার্ডভ্যানটি চালাচ্ছে। অথচ গাড়ি চালনার কোন লাইসেন্স নেই চালকের। সে ২০১৯ সালে হালকা গাড়ি চালনার লাইসেন্স নিয়ে তথা লার্নার লাইসেন্স দিয়ে হাইওয়েতে ভারী যানবাহন চালনা করে আসছে জাফর।

এর আগে সে সিলেট বগুড়া কক্সবাজার টেকনাফ ও সর্বশেষ ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েতে ভারী গাড়ি চালাতো। চালক জাফরের ডোপ টেস্ট করা হলে তা পজেটিভ পাওয়া গেছে। নেশাগ্রস্থ অবস্থায় সে গাড়িটি চালাচ্ছিল। গাড়িটি অত্যন্ত বেপরোয়া গতির কারনে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যায়। অথচ দুর্ঘটনার সময় হাইওয়ে টহল পুলিশের গাড়ির হুডার লাইট, পুলিশি পোশাক, রিফ্লেক্টিং ভেস্ট, সোল্ডার লাইট থাকার পরও এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। দীর্ঘ আট বছর যাবত এই চালক বিনা লাইসেন্সে শুধুমাত্র লার্নার লাইসেন্স দিয়ে ভারী গাড়ি হাইওয়েতে চালিয়ে আসছে। সড়কপথে ড্রাইভারদের অসর্তকতা ও অনভিজ্ঞতার কারণে সড়কে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে অসংখ্য তাজা প্রাণ। এ ঘটনায় ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে লাইসেন্স ব্যতীত ড্রাইভার দিয়ে ভারী যানবাহন চালিয়ে এই ধরনের ঘটনা যাহাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য গাড়ির মালিক ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে ফেনী মডেল থানায়।
অপরদিকে, গত ৬ এপ্রিল বিকাল সোয়া ৫টার দিকে এক দম্পতি মোটরসাইকেল যোগে বাসায় ফিরছিলেন লালখান বাজার ফ্লাইওভার সংলগ্ন সিডিএ এভিনিউ সড়ক দিয়ে। মোটরসাইকেলটি লালখানবাজার ফ্লাইওভারের শেষ প্রান্তে ইস্পাহানী মোড়ে রাস্তার উপর পেছনে থাকা রেডিমিক্স কন্সট্রাকশন ম্যাক্স কোম্পানির ট্রাক মোটরসাইকেল আরোহীদ্বয়কে ধাক্কা দেয়। এতে রাস্তায় পড়ে যায় দম্পতি এবং ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে দুইজনে ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করে। ওই মিক্সার ট্রাকটি আটক করেছে কোতয়ালী থানা পুলিশ। এ ঘটনায় ড্রাইভার পলাতক হলেও কয়েকদিন পরে র্যাব সেভেনের একটি দল চালককে গ্রেফতার করে। এদিকে মোটরসাইকেলের যাত্রী ইকবাল হোসেন (৪৭) ও তার স্ত্রী সখিনা ফাতেমীর (৩৫) মৃতদেহ ময়নাতদন্তের পর চমেক হাসপাতাল থেকে আত্মীয় স্বজনের কাছে হস্তান্তর করেছে কোতয়ালী পুলিশ।













