৭ নভেম্বর ২০২৫

লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় চট্টলবাসী; আজ জুম মিটিং

বাংলাধারা প্রতিবেদন »

চট্টগ্রামের গ্রাহকদের জন্য বিদ্যুতের চাহিদা ছিল এক হাজার ৪৭৫ মেগাওয়াট। সেখানে লোডশেডিং ধরা হয়েছে ১৫৫ মেগাওয়াট। পিক আওয়ারে ২০০-২৫০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য অনুযায়ী, আগের দিন ৩ জুলাই পিক আওয়ারে সারাদেশে ১৫শ মেগাওয়াট লোডশেডিং করে পিডিবি। তার মধ্যে চট্টগ্রামে ২০০ মেগাওয়াট। পিডিবির প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে আসলেও বাস্তবে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা আরও বেশি। সন্ধ্যা থেকে রাত দুপুরে হুটহাট চলছে এ লোডশেডিং। চট্টগ্রামে তীব্র গরমের মধ্যে লোডশেডিং আরও অসহনীয় করে তুলছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লোডশেডিং নিয়ে ট্রল শুরু করেছে।

নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা তানভীর বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে কিছুক্ষণ পর পর বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করছে। কেন করছে সেটা জানি না। পিডিবির পক্ষ থেকেও কোনো বিষয় আমাদের জানানো হয়নি।

হালিশহর কে ব্লকের বাসিন্দা এএইচএম সায়েম শামীম বলেন, রাত ১২টার পর থেকে বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করছে। রাত দুইটা, আড়াইটাতেও লোডশেডিং হচ্ছে। একদিকে গরম, অন্যদিতে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে বাসার বয়স্কদের চেয়ে শিশুরা বেশি অতিষ্ট হয়ে উঠছে।

পিডিবি দক্ষিণাঞ্চল (চট্টগ্রাম) বিতরণ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল সোমবার রাতে বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে বিদ্যুতের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে নির্ধারণকৃত লোড অনুযায়ী দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চল বিদ্যুৎ পেয়ে থাকে। চট্টগ্রামে সরবরাহ ব্যবস্থায় কোনো ত্রুটি নেই। শুধু ন্যাশনাল গ্রিড থেকে কম পাওয়ার কারণে বাধ্য হয়েই চট্টগ্রামে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, অনেক জোর তদবির করে ৫০ মেগাওয়াট বেশি লোড নিয়েছি চট্টগ্রামের জন্য। তারপরেও পিক আওয়ারে ২০০-২৫০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে কথা হলে পিডিবির উপসচিব (উৎপাদন) হেলালুর রহমান সোমবার সন্ধ্যায় বলেন, সরকারি পাওয়ার প্লান্টগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ কমে গেছে। বাধ্য হয়েই গ্যাস নির্ভর অনেক পাওয়ার প্লান্ট বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে সারাদেশে পরিমিত মাত্রায় কিছু লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানান তিনি।

পেট্রোবাংলার তথ্য মতে, সর্বশেষ গত ৩ জুলাই দুই হাজার ৮২২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দিয়েছে পেট্রোবাংলা। দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে দুই হাজার ৩১৫ মিলিয়ন ঘনফুট এবং আমদানিকৃত এলএনজি থেকে ৫০৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পায় পেট্রোবাংলা। তার মধ্যে চট্টগ্রামের জন্য কর্ণফুলী গ্যাসকে দেওয়া হয়েছে ৩০৮ মিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে দুই হাজার ৭৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, আমদানিকৃত এলএনজি সরবরাহের জন্য সরকারের ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে মহেশখালী-আনোয়ারা গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্প এবং আনোয়ারা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত পাইপলাইন নির্মাণ করে পেট্রোবাংলার অঙ্গ প্রতিষ্ঠান গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)। এরপর ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট থেকে এক্সিলারেট এনার্জির ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার এফএসআরইউ (ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট- ভাসমান টার্মিনাল ও পুনঃগ্যাসে রূপান্তরকরণ ইউনিট) থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু করে আরপিজিসিএল।

দ্বিতীয় পর্যায়ে মহেশখালী-আনোয়ারা গ্যাস প্যারালাল আরেকটি পাইপলাইন নির্মাণ করে জিটিসিএল। পরের বছরে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার সামিট এনার্জির এফএসআরইউ যুক্ত হয় আমদানিকৃত এলএনজি সরবরাহ কাজে। দুই এফএসআরইউ দিয়ে সর্বোচ্চ ৯৫০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে। তবে আমদানি কমে যাওয়ায় বর্তমানে দুই এফএসআরইউ দিয়ে মাত্র ৫০০ মেগাওয়াট মতো এলএনজি সরবরাহ দিতে পারছে আরপিজিসিএল।

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) এক মহাব্যবস্থাপক বলেন, এলএনজি আমদানি কমে গেছে। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে গেছে। তার ওপর অনেক দেশ থেকে নানান কারণে স্পট কোটেশনের মাধ্যমে এলএনজি আনা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে দেশে গ্যাসের সংকট তৈরি হচ্ছে। এজন্য আমরা বাল্ক গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিচ্ছি। বড় বড় শিল্প কারখানায় গ্যাসের রেশনিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে ৫ জুলাই সকালে পেট্রোবাংলা জুম মিটিংয়ের আয়োজন করেছে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ