২৮ অক্টোবর ২০২৫

দখল আর শিল্পবর্জ্যে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ

শতবর্ষী ৫০ ফুটের খাল হয়ে গেছে ১৫ ফুট

খাল

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে শতবর্ষী ৫০ ফুটের একটা খাল হয়ে গেছে মাত্র ১৫ ফুট। দখল আর শিল্পবর্জ্যে বন্ধ হয়ে গেছে পানি নিষ্কাশনের পথ।
একসময় নৌকাবোঝাই মালামাল খালটিতে খালাস হলেও স্থানীয়দের দখল আর দূষণ দেখে আর বোঝার কোনো উপায় নেই, এটি খাল নাকি ড্রেনের সুয়ারেজ লাইন।

কর্ণফুলী থানার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নেরর সাবেক মেম্বার প্রবীণ রাজনীবিদ ডা: গিয়াসউদ্দিন ফারুকী ফয়সাল নিজের জীবনের শৈশবের স্মৃতিচারণ করে বলেন, শিকলবাহা হয়ে চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে চরপাথরঘাটা থেকে কর্ণফুলী নদীর সাথে গিয়ে মিশেছে ওসি মিয়ার খালটি। এক সময় এখানেই আমরা নৌকা চালাতাম। পালতোলা নৌকায় ঘুরে বেড়ানো সাঁতার কেটে একপাড় অন্য পাড় যাওয়া আমাদের কিশোরকালের আনন্দ ছিল। অথচ আজ খালটি এতই সংকীর্ণ হয়ে গেছে যে দেখে বুঝার কোনো উপায় নেই এটাই সেই খাল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কর্ণফুলী নদীর সাথে মিশে যাওয়া ওসি মিয়ার খালটি দখলের জন্য স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রতিযোগিতা করছেন। তাল মিলিয়ে সবাই খাল দখল করতেই ব্যস্ত। এমনকি শিল্প-কারখানার মালিকরা খাল দখল করে বিশাল আকারে দেয়াল নির্মাণ করে নিজেদের দখলে নেওয়ার প্রচেষ্টায় আছেন। কারখানা ও বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরার বর্জ্যে পানির গতি পথ আটকে গেছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, খাল দখল করে অবৈধস্থাপনা নির্মাণের কারণে ৫০ ফুটের খালটি এখন কোথাও ১২-১৫ ফুট আবার কোথাও ৮-১০ ফুট প্রশস্ত। মিল কারখানা ও দোকানপাট এবং হোটেল রেস্তোরাঁ, বাসাবাড়ির বিভিন্ন বর্জ্য ফেলার কারণে হারিয়ে যাওয়ার পথে ওসি মিয়ারখাল। খাল দখল করে গড়ে উঠেছে দ্বিতল ভবন, দোকানপাটসহ বিভিন্ন অবৈধস্থাপনা। এতে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতেই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় এলাকাবাসীকে। কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ও চরপাথরঘাটার শিল্পাঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ ওসি মিয়ার খালটি বেদখল হয়ে গেছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: সাইফুদ্দিন মানিক জানান, ওসি মিয়ার খাল দখল আর বিভিন্ন কলকারখানা ও দোকানপাট এবং বাসাবাড়ির বিভিন্ন বর্জ্য খালটিতে ফেলার কারণে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতেই শিকলবাহা সহ চরপাথরঘাটা এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতায় হাজার হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। খাল যারা দখল করেছে তারা কোনো সাধারণ মানুষ নন। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও বিভিন্ন শিল্পকারখানার মালিক তারা।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আমি কর্ণফুলী উপজেলাতে নতুন যোগদান করায় এই খালটির বিষয়ে আমি আগে অবগত ছিলাম না আপনাদের মাধ্যমেই জানতে পারলাম বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখতে বলছি। যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত আছে তাদের সাথে আমি এই খালটির বিষয়ে কথা বলতেছি তারা পরিদর্শন করে যদি আমাদের জানায় তাহলে আমরা খালটি সংস্কার করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পীযূষ কুমার চৌধুরী বলেন, খালটি দখলের বিষয়ে শুনেছি। আমরা আগামী দুই একদিনের মধ্যেই খালটি পরিদর্শনে গিয়ে দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

আরও পড়ুন