পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে সারাদেশে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হচ্ছে। তবে এই দিনটিকে কেন্দ্র করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে ব্যাপক মূল্য বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে, বিশেষ করে গরু, মুরগি ও খাসির মাংসের দামে।
মাংসের বাজারে অস্থিরতা:
খুচরা বাজারের তথ্য অনুযায়ী, এক সপ্তাহের ব্যবধানে গরুর মাংসের কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে গত সপ্তাহেও প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেখানে শবে বরাতের দিনে তা বেড়ে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায় পৌঁছেছে।
ব্রয়লার মুরগির ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে। তিন দিন আগেও যেখানে প্রতি কেজি ১৮০-১৯০ টাকায় বিক্রি হতো, সেখানে এখন তা ২১০ টাকা পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
এছাড়া, খাসির মাংসের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। দীর্ঘ ছয় মাস ধরে রাজধানীতে খাসির মাংস ১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও, শবে বরাতের বাজারে তা ১১৫০ টাকা কেজিতে উঠেছে।
বাজারে ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়া:
চট্টগ্রাম নগরের নয়াবাজার, পাহাড়তলী ও দেওয়ানহাট কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি মাংসের দোকানে ক্রেতাদের ভিড়। ক্রেতারা অতিরিক্ত দাম নিয়ে বিক্রেতাদের কাছে প্রশ্ন তুললেও, ব্যবসায়ীরা তা সরবরাহ সংকট এবং শবে বরাত উপলক্ষে চাহিদা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখাচ্ছেন।
দেওয়ানহাট কাঁচাবাজারে গরুর মাংস কিনতে আসা মোহাম্মদ মুন্না বলেন, “গত কয়েক মাস ধরেই গরুর মাংস ৭৫০ টাকা ছিল। হঠাৎ করে ৮০০ টাকা কেন? বিক্রেতারা কোনো সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারছেন না।”
অন্যদিকে, মুরগির দামের বিষয়ে বিক্রেতারা জানিয়েছেন, পাইকারি বাজারে সরবরাহ কম থাকায় তাদেরও বেশি দামে কিনতে হয়েছে, তাই খুচরা বিক্রয়েও দাম বেড়েছে।
সবজির বাজারে স্বস্তি:
মাংসের বাজারের এই অস্থিরতার বিপরীতে কিছুটা স্বস্তি মিলছে সবজির বাজারে। খুচরা বাজারের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি কেজি টমেটো ৩০ টাকা, আলু ২৫ টাকা, বেগুন ৫০-৭০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা এবং শসা ৫০-৮০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতি পিস ২০-২৫ টাকা, লাউ ৪০-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের বাজারও স্থিতিশীল রয়েছে, প্রতি কেজি ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে রসুনের বাজার কিছুটা চড়া, দেশি রসুনের কেজি ১৫০-১৬০ টাকা এবং আমদানি করা রসুন ২৫০-২৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আদার দামও সামান্য বেড়ে ১৭০-১৯০ টাকায় পৌঁছেছে।
মূল্যবৃদ্ধির কারণ ও বাজার বিশ্লেষণ:
বিশ্লেষকদের মতে, শবে বরাতের মতো ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা কৌশলগতভাবে মূল্য বৃদ্ধি করে থাকেন। পাশাপাশি, সরবরাহ ঘাটতি থাকাও অন্যতম কারণ। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজির দাম স্থিতিশীল থাকায় ক্রেতারা কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন।