আজ ৩০ মে, শুক্রবার—বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি, স্বাধীনতার ঘোষক এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী। ১৯৮১ সালের এই দিনে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন, যা বর্তমানে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তনের মাধ্যমে তিনি ‘বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের জনক’ হিসেবে পরিচিতি পান।
জিয়াউর রহমান দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) গঠনের প্রস্তাবদাতা হিসেবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। তিনি জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক রাজনৈতিক দর্শনের প্রবর্তক ছিলেন, যা আজও রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করছে।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি ২৬ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত টানা ৮ দিনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা, পোস্টার ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ, কালো ব্যাজ ধারণ, কালো পতাকা উত্তোলন, কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ এবং দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্য ও বস্ত্র বিতরণ।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিএনপি রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন।
আজ শুক্রবার সকাল ৬টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের কার্যালয়গুলোতে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করছেন। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে শেরেবাংলা নগরে শহীদ জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে খাদ্য ও বস্ত্র বিতরণ করা হয়।
জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিল্পায়ন, খাল খনন, সবুজ বিপ্লবসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দেশকে স্বনির্ভর করার প্রচেষ্টা চালান। নারী ও শিশু উন্নয়নে তার পদক্ষেপ জাতিকে নতুন দিকনির্দেশনা দেয়। তার সততা, দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধ এখনও অনেকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।
১৯৮১ সালের ২৯ মে সরকারি সফরে চট্টগ্রাম যান তিনি। ৩০ মে গভীর রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে তাকে হত্যা করা হয় এবং তার মরদেহ চট্টগ্রামের রাউজানের এক জঙ্গলে গোপনে দাফন করা হয়। তিন দিন পর তার মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকায় আনা হয়। শেরেবাংলা নগরে তার জানাজায় লাখো মানুষ অংশ নেয়, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ জনসমাগমে পরিণত হয়।
বর্তমানে জাতীয় সংসদ ভবন চত্বরে ‘জিয়া উদ্যান’ নামে তার সমাধিস্থল প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। বিবিসির জরিপে তিনি সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে নির্বাচিত হন এবং দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) পক্ষ থেকেও সম্মানিত হন।
এআরই/বাংলাধারা