৯ নভেম্বর ২০২৫

শিক্ষককে পিটিয়ে বদলির হুমকি ছাত্রলীগ নেতার, প্রতিবাদে শিক্ষকের পদত্যাগ

বাংলাধারা প্রতিবেদন »

চট্টগ্রামের হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের শিক্ষককে পিটিয়ে বদলির হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে একই কলেজের ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী নাঈমের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সহকর্মীকে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুবীর দাশ।

জানা গেছে, পরীক্ষার হলে এক ছাত্রকে অন্যের কাছ থেকে দেখে লিখতে বাধা দেয়ায় ওই শিক্ষককে পিটিয়ে বদলি করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল নাঈম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, পদত্যাগপত্রে পারিবারিক কারণ দেখালেও ওই ঘটনায় সহকর্মীর পাশে দাঁড়ানোর পর চাপের মুখে পড়েন তিনি। এছাড়া এ ঘটনায় কোনো ধরনের সুরাহা না হওয়ায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হন শিক্ষক নেতা সুবীর দাশ। ওই ঘটনায় শিক্ষক নেতা হিসেবে তৎপর ছিলেন সুবীর দাশ। মূলত তিনি সহকর্মীর লাঞ্ছিতের প্রতিবাদ করতে গিয়ে শিক্ষক পরিষদ থেকে পদত্যাগের মতো পরিস্থিতিতে পড়েন। বিষয়টি নিয়ে অধ্যক্ষ সভা করলেও ছাত্রলীগের চাপেই তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ডিগ্রি প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় সরকারি কমার্স কলেজের কেন্দ্র ছিল হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে। পরীক্ষায় এক ছাত্র অপর এক ছাত্র থেকে দেখে লিখছিল। হলে দায়িত্বরত শিক্ষক মুজাহিদুল ইসলাম ওই ছাত্রকে দেখে লিখতে নিষেধ করেন। এরপরও ওই ছাত্র দেখে দেখে লিখছিলেন। পরে ওই শিক্ষক আবারও সর্তক করেন। একপর্যায়ে ওই ছাত্র খাতা জমা দিয়ে হল থেকে বের হয়ে যান। কিছুক্ষণ পর কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী নাঈমসহ বেশ কয়জনকে নিয়ে হাজির হন। এ সময় ওই ছাত্রকে লিখতে না দেওয়ার বিষয়ে দায়িত্বরত শিক্ষকের কাছে জানতে চান। এভাবে পরীক্ষার হলে দেখে লেখার সুযোগ নেই বলে জবাব দেন দায়িত্বরত শিক্ষক।

এরপর নাঈম কর্তব্যরত মুজাহিদুল ইসলামকে বলে, ‘আপনি লিখতে দেবেন কি–না?’ তখন ওই শিক্ষক বলেন, ‘পারবো না’। এরপর নাঈম বলে, ‘আপনাকে মেরে কলেজ থেকে ট্রান্সফার করবো’। এ সময় আরও কিছু অশালীন কথা বলে সে চলে যায়।

সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে কলেজের অধ্যক্ষ মো. কামরুল ইসলামকে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি।

শিক্ষক মুজাহিদুল ইসলামকে লাঞ্ছিত করার পর শিক্ষক নেতা হিসেবে সুবীর দাশ কাজী নাঈমের সঙ্গে কথা বলেন। সে সময় নাঈম তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি কে? আপনাকে কেন কৈফিয়ত দিতে যাব?’

পরে শিক্ষক পরিষদের পক্ষ থেকে অধ্যক্ষকে বিষয়টি জানানো হলে রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিষয়টি নিয়ে সভা ডাকেন তিনি। সেখানে বিষয়টি মীমাংসা করানোর চেষ্টা করেন অধ্যক্ষ। তখন দ্বিমত করেন সুবীর দাশ। এরপর তিনি ওই পদ থেকে পদত্যাগের কথা জানান।

সুবীর দাশ জানান, ‘মুজাহিদুল ইসলামের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। আমি তার প্রতিকার চেয়েছি। কিন্তু কিছুই করতে পারিনি। এর সাথে পদত্যাগের সম্পর্ক নেই। আমি ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছি। শিক্ষকদের সভায় মৌখিকভাবে পদত্যাগের কথা জানিয়েছি। ইতোমধ্যে অধ্যক্ষকে চিঠি দিয়ে এসেছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা কাজী নাঈম অস্বীকার করে গণমাধ্যমকে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। আপনি কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেন।

অধ্যক্ষ কামরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকের সঙ্গে যে ঘটনা সেটা মিটমাট হয়ে গেছে। ওই ছাত্র ক্ষমা চেয়েছে। শিক্ষকও ক্ষমা করে দিয়েছেন। সুবীর দাশ ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ