রুবেল দাশ »
রসনা বিলাসি বাঙালির রসনায় শুটকি আলাদা একটি জায়গা করে নিয়েছে। বিশেষত চট্টগ্রামে শুটকির কদর বেশি থাকলেও সময়ের সাথে সাথে সারাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এটি। দেশ ছাড়িয়ে এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে চট্টগ্রামের শুটকি। মানসম্পন্ন দেশীয় উৎপাদিত শুটকির একটি অংশ দুবাই, সৌদিআরবসহ কয়েকটি দেশে রপ্তানি হয়।
জানা যায়, বঙ্গোপসাগর অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সামুদ্রিক মাছ থেকে শুটকি তৈরি করা হয় বেশি। শুষ্ক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি শুটকি তৈরি হয়। চট্টগ্রামের চাক্তাই আছদগঞ্জ হচ্ছে শুটকির প্রধান আড়ৎ। এখানে একটি শুটকি পট্টিও আছে। এখানে প্রায় সব ধরনের শুটকি বাজারে মিলে। দেশের বিভিন্ন স্থানে উৎপাদিত শুটকিগুলো সরাসরি চলে আসে চট্টগ্রামের আছদগঞ্জ শুটকি পট্টিতে। সে সবের মধ্যে ছুরি শুটকি, ইছা শুটকি, লাল ইছা, মইল্যা, লইট্ট্যা, লাক্কা, রূপচাঁদা, পোপা, মিশালী, ইলিশ, ফাইস্যা, ধইঞ্চাসহ আরো অনেক প্রকারের শুটকি রয়েছে।
চট্টগ্রামের বাইরে যারা থাকেন তারা চট্টগ্রামে এসে প্রথমে সংগ্রহ করেন শুটকি। সামুদ্রিক মাছের সংকটের কারণে, শুটকির দাম বাজারে চড়া হলেও শুটকি খাওয়ার প্রবণতা কিন্তু হ্রাস পায়নি। তবে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে শুটকি ক্রমশ খাদ্যবিলাসে পরিণত হচ্ছে। দাম বেড়ে গেলেও সামর্থ্য অনুসারে খাদ্য তালিকায় শুটকি স্থান পায়। আর শীত মৌসুম এলে যেন বেড়ে যায় শুটকির বিকিকিনি।
আছদগঞ্জে শুটকি কিনতে আসা মিঠু দাশ বাংলাধারাকে বলেন, শীতকালে তো শুটকির তরকারি খেতেই হবে। তাই আছদগঞ্জে এসেছি কম দামে ভালো মানের শুটকি কিনতে।
আছদগঞ্জের শুঁটকি ব্যবসায়ীরা জানান, এখানে সপ্তাহের শনিবার বড় বাজার বসে। এদিন এক হাজার টনের মতো শুঁটকি বিক্রি হয়। সপ্তাহের অন্যদিনগুলোসহ মিলিয়ে সপ্তাহে দুই হাজার টন শুঁটকি দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যায়। বছরে প্রায় ৫০ হাজার টন শুঁটকির চাহিদা রয়েছে। টাকার হিসেবে দেশে দুই হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে। এছাড়া দেশে উৎপাদিত শুটকি মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও হচ্ছে।
শুটকি বিক্রেতা পলিটন বড়ুয়া বাংলাধারাকে বলেন, দেশের চাহিদা মিটিয়ে আছদগঞ্জের শুটকি এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে শুটকির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

এদিকে, শুটকি খেতে মন চাইলেও অনেকে ভালো শুটকি চিনতে পারেন না। তবে ভালো মানের শুটকি কিনতে পারলে সেটি স্বাদে-গন্ধে হবে অতুলনীয়।
শুটকি কেনাবেচার সঙ্গে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু মানুষের জীবিকা ও শুটকির একটা বৃহৎ বাজার । এই বৃহৎ বাজারে চাহিদা অনুযায়ী শুটকি বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে যায়।

প্রধানত চট্টগ্রামে হলেও খুলনা, রাঙ্গামাটি প্রভৃতি স্থানেও শুটকি উৎপাদিত হয়। তবে বৃহত্তর চট্টগ্রামের কক্সবাজার, মহেশখালী, মাইশদিয়া, কুতুবদিয়া অঞ্চলে শুটকি উৎপাদনের পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত হয়ে থাকে।
চট্টগ্রামের আছাদগঞ্জে শুঁটকির ৪০টি আড়ত রয়েছে। ছোট-বড় দোকান রয়েছে ২৭০টির মতো। যারা বেশি দামে শুটকি কিনতে পারেন না আছাদগঞ্জের বড় আড়তগুলোর সামনে ফুটপাতেও বিক্রি হয় কম টাকার শুটকি।
বাংলাধারা/এফএস/এআর













