৭ ডিসেম্বর ২০২৫

শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী মামলার রায় আজ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর) শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিচারিক নিষ্পত্তি ঘোষণা করবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। বেলা ১১টায় রায় ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃপক্ষ। রেজিস্ট্রার অফিস জানিয়েছে, রায় পড়ার পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)।

রায় উপলক্ষে ট্রাইব্যুনাল ও আশপাশের এলাকায় আগেভাগেই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দোয়েল চত্বর হয়ে শিক্ষাভবনমুখী সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, আর সেনা মোতায়েনের জন্য সেনাসদরে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হয়েছে যাতে রায় ঘোষণার দিন পুরো এলাকা সম্পূর্ণ নিরাপত্তা বলয়ে থাকে।

এই মামলায় প্রসিকিউশনের অভিযোগ ছিল, জুলাইজুড়ে দেশজুড়ে যে হামলা ও হত্যাযজ্ঞ ঘটে, তার পূর্ণাঙ্গ বিচার সম্ভব হয়নি ব্যাপকতা ও জটিলতার কারণে। ফলে সব প্রমাণ-সাক্ষ্যের ভিত্তিতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পাঁচটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ চূড়ান্ত করা হয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নজর কাড়া এই অভিযোগগুলোই আজ রায়ের কেন্দ্রবিন্দু।

প্রথম অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে দেওয়া শেখ হাসিনার বক্তব্য আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে উসকানির জন্ম দেয়। বক্তব্যে তিনি আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে ‘রাজাকারের বাচ্চা ও নাতিপুতি’ বলে উল্লেখ করেন। প্রসিকিউশনের দাবি, এই মন্তব্যের পর তৎকালীন সরকারদলীয় মন্ত্রী–কর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সমন্বিতভাবে হামলার পথে এগিয়ে যায়। হামলার ধরন ছিল ব্যাপক ও পরিকল্পিত, যার ফলে নিহত ও আহত হন বহু মানুষ। এই পুরো ঘটনাক্রমে প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা ও অপরাধ প্রতিরোধে ব্যর্থতার দায় আসামি তিনজনের ওপর বর্তায়।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের দমনে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো, ড্রোন ব্যবহার করে লক্ষ্যস্থল চিহ্নিত করা এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র প্রয়োগের নির্দেশ দেন। পরে এই নির্দেশ বাস্তবায়নে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি তাদের বাহিনীকে সক্রিয় করেন। প্রসিকিউশনের ভাষ্যে এটি ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পরিকল্পনা।

২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার সামনে ছাত্র আবু সাঈদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এই হত্যার দায়ও তিন আসামির ওপর আরোপ করেছে প্রসিকিউশন। তাদের দাবি এটি ছিল নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সম্পৃক্ততা ও পরিকল্পনার ধারাবাহিক অংশ।

চতুর্থ অভিযোগে উঠে এসেছে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকার চাঁনখারপুল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ছয় ছাত্রের মৃত্যুর বিষয়টি। তদন্তে এই ঘটনার সঙ্গে শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের ‘নির্দেশনামূলক ভূমিকা’ এবং অপরাধ প্রতিরোধে ব্যর্থতা তুলে ধরা হয়।

সবচেয়ে নৃশংস বিবেচিত পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়েছে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যার পর নিহত পাঁচজনের লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়। গুরুতর আহত আরেকজনকেও আগুনে ফেলা হয়। প্রসিকিউশনের দাবি, এই ঘটনা এককভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধের গুরুতর উদাহরণ, যার পূর্ণ দায় তিন আসামির ওপর বর্তায়।

মামলায় ৫৪ জন সাক্ষী আদালতে তাদের বক্তব্য দিয়েছেন। ভিডিও, অডিও ও অন্যান্য নথিপত্র উপস্থাপন করে প্রসিকিউশন দাবি করেছে সব পাঁচটি অভিযোগই প্রমাণিত। তাদের বক্তব্য, এই প্রমাণের ভিত্তিতে প্রধান আসামি শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তি প্রাপ্য।

এখন বিচারকদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে এই মামলার রায় কোন দিকে যাবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিয়ম অনুযায়ী, বিচারকরা মৃত্যুদণ্ড, আমৃত্যু কারাদণ্ড বা নির্দিষ্ট মেয়াদের সাজা সবই দিতে পারেন। আবার খালাস দেওয়ারও সুযোগ আছে।

আরও পড়ুন