২৫ অক্টোবর ২০২৫

কক্সবাজার পৌর নির্বাচন

শেষ সময়ে এগিয়ে নৌকা- বিজয়ী হতে তৎপর বিদ্রোহী প্রার্থী

আগামীকাল সোমবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচন। শনিবার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে প্রচার ও প্রচারণা। রবিবার রাত পোহালেই শুরু হবে ভোট গ্রহণ।

প্রচারণা শেষ হলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ সাধারণ ভোটাররা হিসাব মেলাচ্ছেন কে হবেন আগামীর পৌর মেয়র। ১২টি ওয়ার্ডের ৯৪ হাজার ৮০২ জন ভোটারদের মনকাড়তে মেয়র পদে এবারের নির্বাচনে ৫ প্রার্থী মাঠের লড়াইয়ে থাকলেও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী ও নাগরিক কমিটি মনোনীত প্রার্থী (আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত) মাশেদুল হক রাশেদের মাঝে মূল প্রতিদ্বন্ধিতা হচ্ছে। নির্বাচনে ১২টি কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৩ প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতায় রয়েছেন।

সূত্র জানায়, শুরু থেকে মেয়র পদে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে বিপাকে ছিল আওয়ামী লীগ। বিদ্রোহী প্রার্থীর পারিবারিক, রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে প্রকাশ্যে তাঁর পক্ষে অবস্থান নেন অনেক নেতা-কর্মী। ফলে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। এতে কৌশলগত অবস্থান পরিবর্তন করে মাঠে নামে আওয়ামীলীগসহ অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং নৌকার প্রার্থীর সমর্থিত নানা পেশাজীবীরা। তবে ৫ জুন মাহাবুবুল আলম হানিফের কক্সবাজার সফর দিয়ে দৃশ্যপট প্লাটাতে শুরু করে।

পিছিয়ে থেকে অগোছালো প্রচারণা দিয়ে শুরু করলেও শেষ মূর্হুতে দলীয় লোকজন, ব্যবসায়ী, হিন্দু, বৌদ্ধ, আইনজীবি ও নানা পেশাজীবি এবং সামাজিক সংগঠন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান চৌধুরীর পক্ষে মাঠে নামে। ফলে উল্টে গেছে ভোটের হিসেব নিকেষ। জয়ের কাছাকাছি রয়েছে নৌকা এমনটাই ভাবছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা।

অপরদিকে, বাবার জনপ্রিয়তা এবং ৫ ভাই-বোনের আওয়ামীলীগের ক্ষমতা ও টাকার প্রভাবে নির্বাচনের শুরুর দিকে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন নাগরিক কমিটির ব্যানারে নারিকেল গাছ প্রতীকের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ। তবে দল থেকে সব ভাই-বোন বহিষ্কার ও পদত্যাগ এবং জেলার প্রবীণ নেতাদের নিয়ে কটুক্তি ও কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বিষোদাগারসহ নানা দাম্ভিকতা পূর্ণ বক্তব্যের কারণে শেষ মুহুর্তে এসে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে নাগরিক কমিটির প্রার্থী রাশেদ।
কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম বলেন, এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ওই পরিবারের সাথে আওয়ামী লীগের আর কোন সম্পর্ক নেই। তারা ৫ ভাই-বোনই কয়েকদিন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত না মানায় তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়। তাদের হয়ে কাজ করছে এমন আওয়ামীলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রায় ৪০ জন নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী একযোগে মাঠে কাজ করছেন। যেখানে প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামীলীগের প্রচারণা দল রয়েছেন, একই সঙ্গে রয়েছে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ, মহিলা আওয়ামীলীগ, তাঁতীলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, শ্রমিক লীগসহ অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের পৃথক দল। প্রার্থীর বাইরে টানা প্রচারণায় সাধারণ ভোটারদের বিশ্বাস এবং আস্থা অর্জন সম্ভব হয়েছে। একারণে বিপুল ভোটে নৌকা বিজয়ের ইংগিত পাওয়া যাচ্ছে।

অন্যদিকে, আওয়ামীলীগের প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান চৌধুরীর পক্ষে কক্সবাজার দোকান মালিক সমিতি ফেডারেশন প্রচারণা চালাচ্ছে জানিয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবুল হাশেম বলেন, মাবুর পক্ষে ব্যবসায়ীরা ১২ ওয়ার্ডে ১২টি প্রচারণা দল নামিয়েছে। ব্যবসায়ীরা নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে কাজ করেছেন।এছাড়া নারিকেল গাছ মার্কার সমর্থক ও প্রার্থীরা সাতকানিয়া-লোহাগড়াবাসীকে হেয় করে নানা কথাবার্তা বলায় তাঁরাও স্বতস্ফূর্ত ভাবে নৌকার জন্য মাঠে নামেন।

নৌকার অবস্থান আরও সুবিধাজনক হওয়ার কারণ উল্লেখ করে কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আবছার বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতে স্থানীয়-বহিরাগত একটি ইস্যু মাঠে এনেছেন। পৌরসভার ৯০ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে এসেছেন। এখানে স্থায়ী বলতে কিছু সংখ্যক রাখাইন ছিল। এতে ভোটারদের মধ্যে প্রভাব পড়েছে। নারিকেল গাছের প্রার্থীর পক্ষ থেকে জেলার প্রথিতযশা কয়েকজন ব্যক্তি যারা ইতোমধ্যে মারা গেছেন তাদের নিয়ে বিরূপ আচরণ করা হয়েছে। এটার প্রভাবও পড়েছে মাঠে।

জেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা অ্যাডভোকেট বাপ্পী শর্মা ও স্বপন গুহ বলেন, পৌরসভায় ১৫ হাজার হিন্দু-বৌদ্ধ খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ভোটার রয়েছে। আমরা স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নৌকা প্রতীকের বাইরে ভোট দিই না, এবারো আমরা নৌকার জন্য মাঠে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি, ভোটও নৌকায় দেবো। এভাবে সম্প্রদায়গতভাবে ভোটগুলো নৌকার পক্ষে গেলে, নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত।

পৌর নির্বাচনের অংশ নেয়ার কারণে রাশেদ হারিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ, তার ছোট ভাই সোহেলকে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পদক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, অপর ভাই কায়সারুল হক জুয়েলকে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সচিব ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার এবং তার একমাত্র বোন তাহমিনা চৌধুরী লুনা জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এত কিছুর পরেও থামেননি বিদ্রোহী প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।

বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে বহিষ্কৃত ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জানে আলম পুতু জানান, কক্সবাজার পৌরসভায় রাশেদকে মানুষ কখনও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মনে করেন না। দলের নেতারা তাকেই মেয়র করতে মাঠে রয়েছেন। একই সঙ্গে প্রার্থীর পিতা ও ভাই সকলেই জনপ্রিয় মানুষ। ১২ জুন ভোটে নারকেল গাছ প্রতীকের বিজয় হবে।

মাসেদুল হক রাশেদ জানান, সার্বিক পরিস্থিতিতে আওয়ামীলীগ ছাড়াও অন্যান্য দলের নেতা-কর্মী, সাধারণ ভোটাররা তাকে ভোট দিতে আগ্রহী। নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু থাকলে তিনিই বিজয়ী হবেন। পরিবেশ রক্ষার জন্য প্রশাসনের কাছে আহবান জানান তিনি।

মো. মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, জনগণ বুঝে কার কাছে তারা নিরাপদ। আমাকে নিরাপদ মনে করেই জনগণ এবারও আমার পাশে রয়েছে। সাধারণ ভোটাররা নিরাপদ থাকতে, উন্নয়নের ধারাবাহিতা রক্ষায় নৌকার পক্ষে রায় প্রদানে সম্মত রয়েছেন।

কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটানিং কর্মকর্তা এসএম শাহাদাত হোসেন জানান, একটি শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট আয়োজনের সকল প্রস্তুতি শেষ। এবারের ১২টি ওয়ার্ডের ৪৩টি কেন্দ্রে ইভিএম এ অনুষ্ঠিত হবে ভোট।

আরও পড়ুন