টুংটাং ঝনঝন শব্দে মেতে উঠেছে কামারপল্লী। কেউ হাঁপর টানছেন, সেই হাঁপরে পুড়ছে কয়লা। তাতে জ্বলছে লোহা। ঈদকে সামনে রেখে শেষ সময়ে মহাব্যস্ততায় দিন পার করছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন কামার পল্লীর কর্মকাররা। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের।
কোরবানির ঈদ উপলক্ষে এক মাস আগে থেকে দা, ছুরি-চাকু-বটি ও চাপাতি তৈরিতে ব্যস্ত তারা। কেউ কেউ হাতুড়ি পিটিয়ে তৈরি করছেন দা, বটি, ছুরিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম। সেই সাথে অনেকেই ব্যস্ত পুরাতন সরঞ্জামগুলো শান দেওয়ার কাজে। কোরবানির ঈদ ঘিরে কামারদের যত রোজগার। তাই ঈদের দিন পর্যন্ত চলবে তাদের এমন ব্যস্ততা।
প্রতিবছর কোরবান এলেই চাপ বাড়ে কামার পল্লীর কর্মকারদের। সেই সাথে চাহিদা বাড়ে কোরবানির পশু মাংস কাটার উপকরণ দা, ছুরি-চাকু-বটি ও চাপাতির। বেচা-কেনাও বেড়ে যায় আগের চাইতে অনেকখানি।
বলা যায় কোরবানির ঈদ তাদের মৌসুমি ব্যবসার অন্তর্ভুক্ত। এ মৌসুমের অর্জিত আয়ে তাদের সংসার চলে সারা বছর। বছরের বেশিরভাগ সময় এইসব লৌহ সরঞ্জামের চাহিদা কম থাকায় অল্প রোজগারে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। আর তাই এই সময়টাকে খুব ভালোভাবে কাজে লাগান কর্মকাররা।
সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শেষ সময়ে কামার পল্লীগুলোতে গ্রাহকদের ভিড় তুলনামূলক অনেকটাই বেশি। শেষ সময়ে দা, বটি, ছুরিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনতে এবং শান দিতে নিয়ে এসেছেন অনেকেই।
বর্তমানে প্রতিটি দা তৈরিতে প্রকারভেদে মজুরি নেওয়া হচ্ছে ২৫০-৬০০ টাকা পর্যন্ত। চাকু তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ১২০ টাকা। বড় ছুরি তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ৫০০-৭০০ টাকা। বটি তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে।
নগরীর চৌমুহনী এলাকার কামার পল্লী ঘুরে দেখা যায় বাপ-দাদার পুরনো ব্যবসা ও স্মৃতি হাতড়ে বেঁচে আছেন অনেকে। এই কামার পল্লীর একজন পুরনো ও বয়স্ক কামার শিল্পী গুনু কর্মকার। দীর্ঘ চল্লিশ বছর যাবত এই শিল্পের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন তিনি।
গুনু কর্মকারের সাথে কথা বলে জানা যায়, তার বাবা এই শিল্পের সাথে জড়িত ছিলেন। বাবার কাছথেকেই তার কামার শিল্পের হাতেখড়ি। ব্যবসা নিয়ে গুনু কর্মকার বাংলাধারাকে বলেন, কোনো একসময় ব্যবসায় খুব ভালো চাহিদা ছিল। তবে সময়ের সাথে সাথে ব্যবসার প্রচলন ও উপার্জন দুটোই কমে আসছে। তবে সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও এই ঈদের সময় বিশ্রাম নেওয়ার সময় পাই না আমরা।
কথা হয় গুনু কর্মকারের ছেলে শান্তু কর্মকারের সাথে। তিনি বলেন আমার দাদা এই শিল্পের সাথে জড়িত ছিলেন। তারপর আমার বাবাও করে গেছেন এই কাজ। আমি নিজেও মাঝেমধ্যে বাবার কাজে হাত লাগাই। তবে এই শিল্পকে পেশা হিসেবে নেওয়ার মতো আগ্রহ আমি পাইনা। আমার ইচ্ছে পড়ালেখা করে একজন ইঞ্জিনিয়ার হব এবং দেশের জন্য ভালো কিছু করবো।













