২৩ অক্টোবর ২০২৫

শোকের সাগরে ভাসছে দেশ; বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ

মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক »

বঙ্গবন্ধু-বাংলার বন্ধু। বাংলার মানুষই জাতির পিতা শেখ মজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু নামে ভূষিত করেছেন। তাই আমরা বাঙ্গালী এই গর্বটুকু করতে পারি শুধুমাত্র জাতির জনকের দেশপ্রেমের কারণে। আমরা বাংলাদেশী তাও বলতে পারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারণেই।

আজ ১৫ আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস। এটি শোকের মাস। তাই আজ জাতির পিতা হারানোর দিনে শ্রদ্ধাভরে স্মরণের দিন।

‘৭৫ এর এই দিনে জাতি হারিয়েছে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধুকে। মনের মণিকোঠায় স্মরণ করে আজ বাঙ্গালী কাঁদছে বেদনা বিধুঁর চোখে। যিনি ছিলেন বাংলার মাইলফলক। জাতির পিতাই সর্বপ্রথম আমাদের মায়ের ভাষা রক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রভাষা বাংলা চান। তাঁর এই নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ আমাদের মাতৃভাষাকে কেড়ে নিতে দেয়নি। পাকিস্তানীরা বঙ্গবন্ধুকে হটাতে নানা কৌশল নিয়েছিল, কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে টলাতে পারেনি।’

এই দিনেই বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের ও আত্মীয় স্বজনসহ মোট ১৮ জনকে হত্যা করেছে পাকিদের দোসররা। এ শোক বিরাজ করছে শুধু দেশেই নয়। বিদেশে বঙ্গবন্ধুর জন্য আজ বাঙ্গালীরা শোক দিবস পালন করছে। শোকের এই মাসে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি জাতির এ জনক বঙ্গবন্ধুকে।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেল। অর্ধশত বছরের এই রেকর্ড এখন বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। আরো পেয়েছি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া সেইসব শহীদের রক্তে মাখা লাল পোশাকের স্মৃতিচিহ্ন আর বাংলা মায়ের সবুজ প্রকৃতির আভায় গড়া আমাদের জাতীয় পতাকা।

৫২’র ভাষা আন্দোলন আর ৬৯’এর গণ অভ্যূথানের পর বাঙ্গালী জাতি শেখ মুজিবুর রহমান নামের এই দেশপ্রেমিক ও নেতাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ নামে ভূষিত করে। কোটি বাঙ্গালীর কন্ঠে জয় বাংলা, বাংলার জয়। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু কারন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাংলার জন্য লড়েছেন। বাংলা মাতৃভাষার দ্বিতীয় জন্ম হয়েছে বঙ্গবন্ধুর কারনেই।

আমরা তাই উচ্চস্বরে বলতে পারি আমার মায়ের ভাষা বাংলা। বাংলা মায়ের তথা বাংলাদেশের জন্মদাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালী জাতির উদ্দেশ্যে বলেছেন- ‘এই স্বাধীনতা তখনই আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে যেদিন বাংলার কৃষক, মজুর ও দুঃখী মানুষের দঃখের অবসান হবে। আর বাংলা ভাষাই হইবে রাষ্ট্র ভাষা।’

একমাত্র বঙ্গবন্ধুই তাঁর দেশপ্রেম জাগাতে এবং পাকিদের বিরুদ্ধে বাঙ্গালীদের জাগ্রত করতে কারাগার থেকেও হুঙ্কার দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে শুরু করে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বাংলার দামাল ছেলেসহ সকলকেই যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে আহবান জানান বঙ্গবন্ধু। আর এই আহবানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা দেশকে স্বাধীন করেছেন।

চট্টগ্রাম নগরীর জামালখানে ‘বরেণ্য বাঙালী’ স্মরণে সড়কের দেয়ালে স্থাপন করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ কবি-সাহিত্যিক আর বিদ্রোহীদের প্রতিকৃতি। বাঙ্গালী চেতনায় উদ্ভূদ্ধ করতে ২০১৮ সালে তৃতীয় প্রজন্মকে বিকশিত করতে ব্যতিক্রমী এই কর্মকান্ডের সূচনা হয়েছে। পথচারী আর যাত্রীদের নজর কাড়তে নগরীর জামালখান মোড় থেকে শুরু করে কাটা পাহাড় সড়ক ঘিরে থাকা রিটেইনিং দেয়ালেই যেন এখন এক মাইলফলক।

তৃতীয় প্রজন্মের জন্য গড়ে তোলা এই মাইলফলকের শুরুতেই স্মরণ করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে। স্মরণ করা হয়েছে আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ ভাষা সৈনিক, কবি সাহিত্যিক যারা আমাদের স্বধীনতার সূর্য টিকিয়ে রাখতে গান কবিতা আর ইতিহাস লিখে বাঙ্গালী জাতিকে সমৃদ্ধ করে দিয়ে গেছেন তাদের স্মরণেই এই আয়োজন। ব্যতিক্রমী এই আয়োজনকে সাধুবাদ জানিয়েছে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষেরা। সেখানে বিশিষ্টজনদের উক্তিতে প্রকাশ পেয়েছে বাঙ্গালীর দেশপ্রেম।

বাংলাদেশের স্রষ্টা তথা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই উক্তি যেখানে তিনি প্রকাশ করেছেন নিজের স্বাধীনতা অর্জনের মূলমন্ত্র। বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালী জাতির উদ্দেশ্যে বলেছেন- ‘এই স্বাধীনতা তখনই আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে যেদিন বাংলার কৃষক, মজুর ও দুঃখী মানুষের দঃখের অবসান হবে।’

স্মৃতির পাতায় শততম অধ্যায় এখন জাতির জনকের। বাঙ্গালী জাতির এ জনক শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানী হানাদারদের দোসরদের হাতেই নির্মমভাবে বুলেটের আঘাতে খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কাল রাত্রিতে। সারা বাংলাকে হারাতে হয়েছে জাতির পিতাকে। আমাদের জানা আছে বা নেই তবে তৃতীয় প্রজন্মের কাছে এখন ১৯৫২ যেমন ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস তেমনি ৬৯’র গনঅভ্যূথানে বাংলাদেশ গড়ার প্রাক্কালে শেখ মুজিবুর রহমানের ইতিহাস।

১৯৫২ সালের ২৩ জানুয়ারী খাজা নাজিম উদ্দিন ঘোষণা করেন- পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে ‘উর্দু’। এর প্রতিবাদে বন্দি থাকা অবস্থায় ২১ ফেব্রুয়ারীকে রাজবন্দি মুক্ত এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবী দিবস হিসেবে পালন করার জন্য বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান। ১৬ ফেব্রুয়ারী বঙ্গবন্ধু এ দাবিতে জেলখানায় অনশন শুরু করেন। ২১ ফেব্রুয়ারী রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে ছাত্রসমাজ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। মিচিলে পুলিশ গুলি চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এসময় সালাম, বরকত, রফিক ও শফিউল শহিদ হন। ১৯৫৩ সালে মাওলানা ভাসানীসহ প্রভাতফেরীতে বের হন কোটি মানুষের কন্ঠস্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৬৯ এর ২২ ফেব্রুয়ারী জনগনের অব্যাহত চাপের মুখে তৎকালীন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ প্রত্যাহার করে বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্য আসামীদের মুক্তিদানে বাধ্য হয়। এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারী রেসকোর্স (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। প্রায় ২০ লাখ ছাত্রজনতার এই সংবর্ধনা সমাবেশে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

বাংলাধারা/এফএস/এআই

আরও পড়ুন