মুহাম্মদ আব্দুল আলী »
চট্টগ্রাম ওয়াসার হয়রানির শিকার গ্রাহকরা। ওয়াসার অসাধু কর্মকর্তারা অবৈধভাবে সংযোগ দিতে ব্যস্ত। কিন্তু নির্দিষ্ট গ্রাহকদের পানি সরবরাহে কর্মকর্তাদের কোনো পদক্ষেপ নেই। অভিযোগ মৌখিক, লিখিত বা ওয়াসার দালালদের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের দিয়ে কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ পানি নিশ্চিত না করেই গ্রাহকের কাছ থেকে মাসিক গড় বিল আদায় করছে।
নগরীর জাকির হোসেন সড়কে কাট্টলী ভূমি অফিস সংলগ্ন আহম্মদ মঞ্জিলে সংযোগের প্রায় ১২ বছর পার হলেও কর্তৃপক্ষ পানি যেমন নিশ্চিত করতে পারেনি, তেমনি কোনো ইউনিট বিলও এ পর্যন্ত ইস্যু করেনি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ প্রসঙ্গে ওয়াসার রাজস্ব বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ওয়াসার সংযোগ দেয়া হলে কমপক্ষে গড়বিল হলেও দিতে হবে। পানি পাওয়া না পাওয়া কর্তৃপক্ষের সরবরাহের উপর নির্ভরশীল। গ্রাহকের সুনির্দিষ্ট হিসেবে বিল না যাওয়া পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের মেরামত বা চেকিংয়ের নিয়ম নেই।
অভিযোগ উঠেছে, ২০০৯ সালের ৩১ মে ৯৭৭ নং আবেদনপত্রে একটি আবাসিক ভবনে ওয়াসার পানির সংযোগের আবেদন করা হয়। জাকির হোসেন রোডস্থ শহীদ স্মরণি আবাসিক এলাকার রোড নং-২ এর আহম্মদ মঞ্জিলে এ সংযোগ দেয়ার জন্য ওয়াসার পক্ষ থেকে ঐ বছরের ২৮ জুলাই ১১২৭ নং ডিমান্ড নোট ইস্যু করা হয়। ওয়াসা বোর্ডের ১৬৫ ও ১৮০তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুই বছরের পানি ব্যবহারের গড় বিল আবেদনপত্র জমা দেয়ার তারিখ থেকে প্রদেয় হিসেবে ডিমান্ড নোটে শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ডিমান্ড নোটের শর্ত অনুযায়ী ২০ দিনের মধ্যে জনতা ব্যাংক ওয়াসা ব্রাঞ্চে জমা দিতে বলা হয়। অথচ, এ ডিমান্ড নোট গ্রাহকের হাতে পৌছায় দীর্ঘ প্রায় তিনমাস পর। সে অনুযায়ী ২০০৯ সালের ১০ নভেম্বর ডিমান্ড নোটের অর্থ পরিশোধ করা হয়। পরবর্তীতে রোড কাটিংয়ের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত ফিও জমা দেয়া হয় ২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি।
ওয়াসা কর্তৃপক্ষ গ্রাহক থেকে ১৬ আনা অর্থ আদায়ের পরও মিটার নেই এমন অজুহাতে আরও একমাস অতিক্রান্ত করে। সর্বশেষ কার্যাদেশপত্র ১ হাজার ৯৫৫ অনুযায়ী ২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারি নির্বাহী প্রকৌশলী সাক্ষরিত আদেশে সংযোগ প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়। এ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সময় মতো বিল পাওয়া না গেলে অত্র সংস্থার বিলিং শাখার সঙ্গে যোগাযোগ করে গ্রাহককে নিজ দায়িত্বে বিল সংগ্রহপূর্বক পরিশোধের অনুরোধ জানানো হয়। অথচ, পানি প্রদানের বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা না দিয়ে ওয়াসার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিজেদের স্বার্থ ও শর্ত আদায়ের বিষয়টি ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহকের মাঝে ক্ষোভ ও প্রশ্নের সঞ্চার করেছে।
২০১০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি এ গ্রাহককে সংযোগ দেয়া হলেও কোনো মিটার রিডার বা উর্ধ্বতন কর্মকর্তা চলতি বছরের ৪ মে পর্যন্ত পরিদর্শনে যাননি। গ্রাহকের পক্ষ থেকে পানি না পাওয়ার বিষয়টি বার বার অবগত করানো হয়েছে। কিন্তু এরপরও বিক্রয় বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নানা অজুহাতে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। এমনকি ওয়াসার নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন।
এ বিষয়ে আহম্মদ মঞ্জিলের কর্ণধার রওশন আরা বেগম বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার সংযোগের ১২ বছর সময়ের মধ্যে একফোঁটা পানি দিতে পারেনি। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ পানি নিশ্চিত না করেই গড় বিল নিচ্ছে। এক্ষেত্রে গ্রাহকের কাছ থেকে গড়বিল নেয়া কতটুকু যৌক্তিক।
এ ব্যাপারে জানতে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফয়জুল্লাহকে মঙ্গলবার বিকেলে মুঠোফোনে বার বার কল দেওয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এ কে এম ফজলুল্লাহ ২০০৯ সালের ৬ জুলাই চট্টগ্রাম ওয়াসার চেয়ারম্যান পদে এক বছরের জন্য নিয়োগ পান। পরে আরও এক বছর বাড়ানো হয়। ২০১১ সালে ঢাকা ওয়াসার আদলে চট্টগ্রাম ওয়াসায় এমডির পদ তৈরি করা হয়। তখন এমডি পদে নিয়োগ পান ফজলুল্লাহ। ১৯৯৮ সালে অবসরে যাওয়া এই কর্মকর্তার বয়স এখন ৮০ বছর।
সর্বশেষ ২০২০ সালের ১ অক্টোবর তিন বছরের জন্য ফজলুল্লাহকে নিয়োগ দেয় সরকার। তাঁকে পুনর্নিয়োগের সুপারিশ করেছিল যে বোর্ড, তার চেয়ারম্যান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের (ইউএসটিসি) উপাচার্য মো. জাহাঙ্গীর আলম। অভিযোগ রয়েছে, তাঁকে চেয়ারম্যান করতে ফজলুল্লাহর ভূমিকা ছিল।
ওয়াসার নথিপত্র অনুযায়ী, শুরুতে ফজলুল্লাহ মাসে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা সম্মানী পেতেন। ২০১৬ সালে তিনি বেতন-ভাতা বৃদ্ধির আবেদন করলে তাঁর মোট বেতন নির্ধারণ করা ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এরপর তিনি মূল বেতন সাড়ে চার লাখ টাকা করার আবেদন করলে তা যাচাই–বাছাই করে প্রতিবেদন দিতে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
বর্তমান এমডির ১৩ বছরের আমলে চট্টগ্রাম ওয়াসা ১৪ বার পানির দাম বাড়িয়েছে। ২০১৩ সালে আবাসিক সংযোগে প্রতি ইউনিট (এক হাজার লিটার) পানির দাম ছিল ৬ দশমিক ৫৮ টাকা। এখন সে পানির দাম ১৮ টাকা, বাণিজ্যিকে ৩৭ টাকা।













