বাংলাধারা ডেস্ক »
‘সংসদে আসব, অনেক জায়গা থেকে কিন্তু আমাকে ভীষণভাবে বাধা দেয়া হয়েছে, নিষেধ করা হয়েছে। বলেছে- নেত্রী আপনি যাবেন না। আমি বললাম- গুলি, বোমা, গ্রেনেড কত কিছুই তো মোকাবেলা করে এ পর্যন্ত এসেছি। আর একটা অদৃশ্য শক্তি তার ভয়ে ভীত হয়ে থাকবো?’
রোববার (১৪ জুন) জাতীয় সংসদে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে আনা শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহর মৃত্যুতে তিনি শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাধা দেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্যের হার মাত্র ১০ বছরের মধ্যেই আমরা কমিয়ে এনেছি। আমাদের জিডিপি বেড়ে গিয়েছিল। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছিলাম। কিন্তু এমন একটি অদৃশ্য শক্তি করোনাভাইরাস সারাবিশ্বটাকে স্থবির করে দিয়েছে। সারাবিশ্বে কেমন একটা অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করল।
‘আমাদের কোনো নেতাকর্মী মারা গেলেও আমরা ছুটে গেছি তার জানাজায়, কবরে ফুল দেয়া ও পরিবারের সঙ্গে দেখা করার জন্য। এখন এমনই অস্বাভাবিক পরিবেশ যে আমরা এবার সেটি করতে পারলাম না। সেটিই হলো সবচাইতে বড় কষ্টকর। একটা আতঙ্ক, ভয়ভীতি যেন সারাবিশ্বকে পেয়ে বসেছে।’ -যোগ করেন তিনি।
সহযোদ্ধাদের মৃত্যুতে শোক ও তাদের মাগেফেরাত কামনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটি এক ধরনের যুদ্ধ। এই সময় আমাদের দুজন হারালাম, যারা সবসময় আমাদের সঙ্গে ছিল। তাদের হারানোটা অত্যন্ত কষ্টের। আমি তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বাজেট উত্থাপনের পর মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছিল সংসদ। আজ তৃতীয় কার্যদিবসে বাজেটের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুই সংসদ সদস্যের মৃত্যু জাতীয় সংসদের কার্যক্রমকেও এলোমেলো করে দিয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে মোহাম্মদ নাসিমের অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁকে ১৪ দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো। কারণ তিনি সকলকে নিয়ে চলতে পারতেন। শরীক দলের সদস্যরাও তাকে ভালো জানতেন। তিনি সফলতার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মৃত্যুতে বিরাট ক্ষতি হয়েছে নিঃসন্দেহে। শেখ আব্দুল্লাহ’র মৃত্যুতেও যে ক্ষতি হয়েছে তা পুরণ হবার নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মোহাম্মদ নাসিম ওয়ান-ইলেভেনের সময় কারাগারে থাকা অবস্থায় স্ট্রোক করেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওই সময় কারাবন্দি সালমান এফ রহমানের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স সবসময় জেলগেটে তার পরিবারের পক্ষ থেকে রাখা থাকতো। ওই অ্যাম্বুলেন্সে করে মোহাম্মদ নাসিমকে হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় বলে তিনি সে যাত্রায় বেঁচে যান। তবে ওই সময় তার শরীরের একপাশ প্যারালাইজড হয়ে যায়। তারপরও তিনি মাঠে-ময়াদানে দৌড়ে বেরিয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাস আক্রান্ত উন্নত-অনুন্নত দেশের সবাই ভয়ে আছেন। এই আতঙ্কটা এমন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে যেটা দুঃখজনক। তবে যে এলাকাটায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে সেখানে লকডাউন করছি। মানুষের জীবনযাপন যেন স্বাভাবিক থাকে সেই ব্যবস্থা নিয়েছি।’
অধিবেশনের শুরুতে সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবেগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। অনেক কষ্টে তিনি সভাপতির বক্তৃতা শেষ করেন। এসময় তিনি রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনে প্রয়াত দুই নেতার অবদানের কথা তুলে ধরেন।
পরে সংসদে দুই সংসদ সদস্যের ওপর আনীত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের, আওয়ামী লীগ নেতা মতিয়া চৌধুরী, ডা. হাবিবে মিল্লাত ও মৃণাল কান্তি দাস, ওয়ার্কার্স পার্টির অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এবং জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ। আলোচনা শেষে সর্বসম্মতিতে শোক প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়।
এরপর এক মিনিট নিরাবতা পালনের পর দুই নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া। এরপর দিনের অন্যান্য কার্যসূচি স্থগিত করে অধিবেশন মুলতবি করা হয়।
উল্লেখ্য, শনিবার আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ও আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মারা যান। নাসিম করোনায় আক্রান্ত হলেও পরে মুক্ত হন। কিন্তু শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহর মৃত্যু সর্বনাশা করোনায়।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ













