২৮ অক্টোবর ২০২৫

সকলে মিলে সিআরবিকে রক্ষা করতে হবেঃ সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন

বাংলাধারা প্রতিবেদন»

সিআরবি শুধু চট্টগ্রাম বা বাংলাদেশের নয়, এটি পুরো বিশ্বের সম্পদ। সিআরবির অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আমাদের সকলে মিলে রক্ষা করতে হবে। সিআরবি রক্ষার জন্য চট্টগ্রামবাসী যেকোন ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি আছে বলে আমার বিশ্বাস।

গতকাল শুক্রবার (২৭ আগস্ট, ২০২১) সন্ধ্যা ৭ টায় চট্টগ্রামের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহের ফোরাম চট্টগ্রাম আরবান নেটওয়ার্ক আয়োজিত ‘শ্বাসরোধ করে, হাসপাতাল নয়’ শীর্ষক ভার্চুয়াল নাগরিক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সিআরবি রক্ষায় গঠিত নাগরিক সমাজের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. অনুপম সেন।


তিনি বলেন, ‘৬০ এর দশকের স্মৃতি আমার মনে আছে। সে সময় চট্টগ্রাম শহর ছিল সৌন্দর্যের দিক থেকে একটি অসাধারণ শহর। এখানে প্রায় প্রত্যেকটি বাড়ির সঙ্গে পুকুর ছিল। অসংখ্য দিঘী ছিল, ছিল অনেক মাঠ। জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে পরিকল্পিত নগরায়ন না হওয়ায় ঢাকা এবং চট্টগ্রাম, দেশের দুটি প্রধানতম শহর অনেকের মতে বাসযোগ্য আর থাকছে না। দুঃখজনক হলেও সত্য, চট্টগ্রামে এখন আর তেমন উল্লেখযোগ্য জলাশয় নেই। জলাশয়গুলো ভরাট করে গড়ে উঠেছে বহু স্থাপনা। চট্টগ্রামে তেমন কোন মাঠ নেই, যেসব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আমাদের বাঙালি জীবনের সাথে সম্পৃক্ত- বাংলা নববর্ষ, বসন্ত উৎসব, রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী, নজরুল জন্মজয়ন্তী সেগুলো উদযাপনের কোন উন্মুক্ত স্থান নেই। সত্যিকার অর্থে চট্টগ্রামে এখন একটিমাত্র উন্মুক্ত জায়গা রয়েছে। সেটি হলো সিআরবি। ঢাকায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্য রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দীসহ অনেক উন্মুক্ত জায়গা থাকলেও চট্টগ্রামে সিআরবি ছাড়া দ্বিতীয় কোন উন্মুক্ত স্থান নেই। শুধু উন্মুক্ত স্থানই নয়, চট্টগ্রামে মুক্তভাবে শ্বাস নেওয়ার জন্যও সিআরবি ছাড়া আর তেমন কোন জায়গা নেই। এখানে ২শ প্রজাতির হাজারেরও বেশি বৃক্ষ রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকগুলোই শতবর্ষী।‘


সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন বলেন, ‘বর্তমান সরকার পরিবেশবান্ধব সরকার। তার প্রমান জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে পরিচালিত  ক্যাম্পেইন। ক্যাম্পেইনের আবেদন হলো-গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান। সিআরবিকে অনেক আগেই কালচারাল হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়ে গেছে। এমনকি ১৯৫৪ বা ৫৫ সালেও চট্টগ্রামের জন্য যে আরবান ডেভলপমেন্ট প্ল্যান করা হয়েছিল, সেখানেও সিআরবিকে কালচারাল হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছিল। বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক অঞ্চল ও কালচারাল হেরিটেজগুলো রাষ্ট্র রক্ষা করবে। তাই আমরা প্রত্যাশা করি, চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের আবেদনের প্রেক্ষিতে সিআরবিকে রক্ষার স্বার্থে এখানে যেকোন স্থাপনা নির্মান বন্ধ করবে যথাযথ কর্তৃপক্ষ। এছাড়া তিনি চট্টগ্রাম বাসীর প্রাণের আবেদন সিআরবি রক্ষার দাবির সাথে সংহতি জানানোর জন্য চট্টগ্রাম আরবান নেটওয়ার্ককে ধন্যবাদ জানান।‘


ব্রাইট বাংলাদেশ ফোরামের নির্বাহী পরিচালক উৎপল বড়ুয়ার সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক ও আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব রাজনীতিবিদ মো. ইব্র্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল। এছাড়া প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ প্ল্যানার্স সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ, ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারি আবাসিক প্রতিনিধি আশেকুর রহমান, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির  (বেলা) সভাপতি সৈয়দা রিজোয়ানা হাসান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এবিএম আবু নোমান, কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, ইলমার নির্বাহী পরিচালক জেসমিন সুলতানা পারু। স্বাগত বক্তব প্রদান করেন স্থায়ীত্বশীল উন্নয়নের জন্য সংগঠন ইপসার প্রধান নির্বাহী মো. আরিফুর রহমান। এছাড়াও মুক্ত আলোচনায় আরো বক্তব্য দেন সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক সায়মন রহমান, ইপসার প্রকল্প সমন্বয়কারী মোহাম্মদ আলী শাহিন, ব্রাইট বাংলাদেশ ফোরামের নাসরিন সুলতানা খানম প্রমুখ।

বাংলাধারা/এফএস/এফএস

আরও পড়ুন