২৮ অক্টোবর ২০২৫

সচেতনতা বাড়ানোর সাথে ত্রাণও দিচ্ছে সেনাবাহিনী

কক্সবাজার প্রতিনিধি »

করোনার তীব্রতা রোধে মানুষের কোয়ারান্টাইন নিশ্চিতে কঠোর হয়ে মাঠে নেমেছে পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। সচেতনতা বাড়াতে লিপলেট, মাস্ক বিতরণ ও মাইকিং করে মানুষকে ঘরে থাকতে অনুপ্রেরণা যোগানোর পাশাপাশি এ কঠিন পরিস্থিতিতে খাবার নিয়ে বিপর্যয়ে পড়া পরিবারে ত্রাণ সহায়তাও দিচ্ছে সেনাবাহিনী রামু ১০ পদাতিক ডিভিশন।

বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) সকাল থেকে প্রচারণা ও মাইকিংয়ের পাশাপাশি কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, কলাতলী ও ফিশারিঘাট এলাকায় ১০ পদাতিক ডিভিশনের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে শতাধিক দুস্থ ও খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে।

প্রতি প্যাকেটে ১০ কেজি চাউল, ২ কেজি আটা, ১ কেজি ডাল, ৫ কেজি আলু, ১ কেজি লবণ, ১ কেজি পেঁয়াজ ও আধা লিটার তেল এবং ২টি সাবান বিতরণ করা হয়।

রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো. মাঈন উল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে এসব ত্রাণ বিতরণ কালে ডিভিশনের ২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আলীমুল আমীন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমদ, জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনসহ সামরিক এবং বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বিচ্ছিন্নভাবে ত্রাণ বিতরণকালে জিওসি করোনার প্রভাব থেকে নিজে এবং পরিবার-পরিজন ও দেশ বাঁচাতে সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বান জানান।

বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হতে অনুরোধ জানিয়ে জিওসি বলেন, যাদের খাবার নিয়ে সমস্যা হবে তারা জেলা ও পুলিশ প্রশাসন এবং সেনা সদস্যদের কাছে জানালে খাবার ঘরেই পৌছে যাবে। দূর্যোগের প্রকোপতা পরিহারে কষ্ট করে হলেও বাসায় থাকতে সবার প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। এসময় প্রতিবেশী দরিদ্রদের খবরা-খবর রাখতে বিত্তবানদের প্রতিও অনুরোধ জানান জিওসি।

নির্মল শীল কক্সবাজার ডিসি অফিসের সামনে জুতা সেলাই ও পলিশের কাজ করেন। সরকারের নির্দেশনা মেনে গত একসপ্তাহ বাসায় থাকায় জমানো টাকা ও খাবার শেষ হওয়ায় আহারের সন্ধানে আজ কাজে বের হন। সেনা সদস্যদের ঝটিকা ত্রাণ বিতরনে তিনিও এক প্যাকেট ত্রাণ পেয়ে আবেগাপ্লুত হন। তার মতে, হতদরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষরা এভাবে সহযোগিতা পেলে দুর্যোগ কেটে না যাওয়া পর্যন্ত ঘরের বাইরে যাবে না।

পেকুয়ার উপকূলীয় উজানটিয়া ইউনিয়নের মজনু আলী শহরে রিকশা চালিয়ে তিন ছেলে-মেয়েসহ ৫ জনের পরিবার নিয়ে থাকেন। করোনার কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে দুরাবস্থায় যাচ্ছে সময়। পেটের তাগিদে আজও রিক্সা নিয়ে বের হলেও দুপুর পর্যন্ত কোন ভাড়া পাননি। এরই মাঝে সেনাবাহিনীর ত্রাণ তার শুকানো প্রাণে পানি এনেছে। আগামী কয়েকটা দিন বাসা থেকে বের না হয়ে কাটানো যাবে।

এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র সেনাবাহিনীর ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমটি দৃষ্টিকটু বলে মন্তব্য করেছেন। প্রশাসন মানুষকে ঘর থেকে বের না হতে এবং একসাথে বেশি মানুষকে জড়ো হতে নিষেধ করে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করলেও ২০ কেজি ত্রাণ দিতে দু’ডজনাধিক গাড়ির বহরে এলাকায় এলাকায় গিয়ে ত্রাণ বিতরণ কালে তারা-ই জটলা পাকায়। এটি কেউ মুখ খুলে না বললেও, নিজেদের মাঝে সমালোচনা করছেন ঠিকই।

সেনাবাহিনী সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ‌’আপনার সুস্থতাই আমাদের কাম্য’- এ প্রতিপাদ্যে গত ২৪ মার্চ হতে কক্সবাজার জেলা এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামের আটটি উপজেলায় রামু সেনানিবাসের সদস্যরা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনতা তৈরিতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতায় দিন-রাত কাজ করছে। দায়িত্বপালনের পাশাপাশি বিগত কয়েকদিন ধরে এ জনপদের অসচ্ছল, খেটে খাওয়া ও দরিদ্র মানুষদের মাঝে রামু সেনানিবাসের তত্ত্বাবধানে ত্রাণ বিতরণের মাধ্যমে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে সাধারণ মানুষদের বাসায় অবস্থান নিশ্চিত করা হচ্ছে। বিনা প্রয়োজনে বাইরে চলাচলরত ব্যক্তিদের ফুল দিয়ে ঘরে ফেরানোর উদ্যোগ গ্রহণ, শহর-গ্রামের বিভিন্ন স্থানে হাত ধোয়ার বেসিন স্থাপন এবং করোনা প্রতিরোধে নানা ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম বেগবান করার মধ্য দিয়ে রামু সেনানিবাসের সদস্যরা ইতোমধ্যে সব শ্রেণীর মানুষের ভালোবাসা ও আস্থা অর্জন করেছে। জনকল্যাণে সেনাবাহিনীর গৃহীত এ ধরনের কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে দাবি করেছে রামু সেনানিবাস সূত্র।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ

আরও পড়ুন