কক্সবাজার প্রতিনিধি »
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে প্রথম তালিকার ১৬৮ পরিবারের ৪৮০ জনের তথ্য যাচাই-বাছাই ও সাক্ষাৎকার শেষে মিয়ানমারের ১৭ সদস্যের টেকনিক্যাল টিম ফিরে গেছে। বুধবার (২২ মার্চ) সকাল ১০টার দিকে ১৭ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি নৌযানে নাফনদী হতে টেকনাফ চৌধুরী পাড়ার ট্রানজিট জেটিঘাট দিয়ে মিয়ানমারের উদ্দেশ্য রওনা দেয়।
কক্সবাজারের শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার মো.সামছু-দ্দৌজা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে দেয়া রোহিঙ্গাদের প্রথম তালিকার যাচাই-বাছাই করতে মিয়ানমারের ১৭ সদস্যের একটি টেকনিক্যাল টিম ১৫ মার্চ সকালে টেকনাফ ট্রানজিট জেটিঘাট হয়ে বাংলাদেশে আসেন।
এরপর প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের কাছে পাঠানো প্রথম তালিকাটি থেকে গত ৭দিনে ১৬৮ পরিবারের ৪৮০ জনের তথ্য যাচাই-বাছাই ও সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়া শেষ করেন। যাদের সাক্ষাৎকার গ্রহন করা হয়েছে তাদের থেকে বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরে জন্ম নেওয়া ওই পরিবারের শিশুদেরও নথিভুক্ত করেছে টেকনিক্যাল টিম।
এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বুধবার (২২ মার্চ) সকালে তারা নৌপথে মিয়ানমারের উদ্দেশ্য রওনা দেয়।
উল্লেখ্য, মানবিক কারণে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার পর থেকেই প্রত্যাবাসনের চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। একাধিকবার তালিকা তৈরি করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার দিনক্ষণ দেয়া হলেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সরকার রাখাইনে সেনা অভিযান শুরু করার পর রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে আসে। শেখ হাসিনা সরকার উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে ৭ লাখের অধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়। এর আগেও বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে আসা আরো ৪লাখ রোহিঙ্গা মিলিয়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়। বর্তমানে সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গার উপস্থিতি রয়েছে।
২০১৭ সালের ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলের চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আর শুরু হয়নি।
তবে ২০১৯ সালে দু’দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হননি রোহিঙ্গারা।
পরবর্তীতে প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ থেকে ৮লাখের বেশি রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারের কাছে পাঠায়। ওই তালিকা থেকে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রাথমিক ভাবে ১ হাজার ১৪০ জনকে বাছাই করে ৭১১ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমারের সম্মতি মিললেও বাকি ৪২৯ জনের ব্যাপারে আপত্তি ছিল।
নতুন করে আবারো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার লক্ষ্য বাংলাদেশ থেকে পাঠানো রোহিঙ্গাদের তালিকার তথ্য যাচাই-বাছাই করতে বুধবার ১৫ মার্চ সকালে টেকনাফ জেটিঘাটে হয়ে মিয়ানমারের ১৭ সদস্যর একটি টেকনিক্যাল টিম বাংলাদেশে আসেন।
এরপর টেকনাফ স্থল বন্দরের অভ্যন্তরে মালঞ্চ সম্মেলন কক্ষে মিয়ানমারের টেকনিক্যাল টিমের প্রধান মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্সের মংডুর আঞ্চলিক পরিচালক অং মাইউ এর নেতৃত্ব ১৭ সদস্যর প্রতিনিধি দলটি তালিকা ভুক্ত রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার গ্রহন করেন।
টেকনাফে অবস্থিত ক্যাম্প-২৬ থেকে সাক্ষাৎকার দেয়া মনোয়ারা বেগম (২৮) বলেন, মিয়ানমার টেকনিক্যাল টিম তার কাছ থেকে জানতে চেয়েছে মিয়ানমারের রাখাইনে যেখানে বসবাস করতে সেখানকার কোন কাগজ পত্র আছে কিনা। তাদের পুর্ব পুরুষদের নাম ঠিকানা ও তাদের বসত ঘরের উত্তর-দক্ষিণ ও পুর্ব- পশ্চিমে কি ছিল সব। তাদের সব প্রশ্নের উত্তরসহ তাদের চাওয়া প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র দেখানো হয়েছে ।
লেদা ক্যাম্পের হেড মাঝি নুরুল আমিন বলেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার কথা বলে টিম পাঠানো মিয়ানমার সরকারের এক ধরনের নাটক। আফ্রিকার মুসলিম প্রধান দেশ গাম্বিয়া রোহিঙ্গাদের পক্ষে গণহত্যার অভিযোগ এনে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসতে (আইসিজে) করা চলমান মামলাকে প্রভাবিতসহ বহির্বিশ্বকে দেখাতে নাটক দেখানো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার কার্যক্র শুরু করছে মিয়ানমার।
আমরা অব্যশই আমাদের নিজ দেশে ফিরতে চাই। তবে আমাদের নাগরিক অধিকার, নিরাপত্তা, মর্যাদা হারিয়ে যাওয়া জায়গা-জমি ও রোহিঙ্গা হিসাবে স্বীকৃতি দিলেই মিয়ানমারে ফিরে যাবো।