জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার »
কক্সবাজার শহরের প্রাচীনতম তারাবনিয়ার ছরা জামে মসজিদ পরিচালনার দায়িত্বভার নেয়া নিয়ে দু’পক্ষ মুখোমুখী অবস্থান নিয়েছে। এক পক্ষ অপর পক্ষকে লুটেরা ও দখলবাজ উল্লেখ করে মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন করছেন। এ নিয়ে এলাকায় বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন সাধারণ মুসল্লীরা।
সূত্র মতে, ১৮৯০ সালে তারাবনিয়ার ছরা মসজিদটি নির্মিত হয়। আল্লাহর ঘরটি সুচারুরূপে চালাতে স্থানীয় টেকপাড়া এলাকার ছৈয়দুর রহমান মুন্সি নামের এক ধর্মভীরু ১৯৫০ সালের ২৪ জুলাই ঝিলংজা মৌজার ৩ একর ৪২ শতক জমি মসজিদের নামে ওয়াকফ্ করে তার বড় ছেলেকে মতোয়াল্লি নিয়োগ করেছিলেন। ওয়াকফ ভুক্ত হওয়ার পর ৩২ বছর আগে তৎকালীন কমিটির সভাপতি সাবেক পৌর কমিশনার মরহুম বদিউল আলম মাস্টার মসজিদ পরিচালায় সংবিধান রচনার পর কমিটির পাঁচ সদস্য তা যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজনে পরিপূর্ণ করা অনুমোদিত সংবিধানে মসজিদ পরিচালিত হচ্ছে। সংবিধানে তারাবনিয়ার ছরা প্রধান সড়কের উত্তর পাশের ৩০ জন, দক্ষিণ পাশের ২৩ জন এবং জমিদাতার এলাকা টেকপাড়া থেকে ৭ জন মিলিয়ে ৬০ সদস্য বিশিষ্ট একটি সাধারণ পরিষদ রয়েছে। প্রতি তিন বছর পরপর সাধারণ পরিষদের সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে ২১ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাহী কমিটি নির্বাচিত হয়। নির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পরবর্তী কমিটি গঠনে তিন সদস্যের তত্বাবধায়ক কমিটি গঠিত হয়। এতে একজন আহ্বায়ক ও দুই জন সদস্য থাকেন। পদাধিকার বলে সভাপতিই মতোয়াল্লির দায়িত্ব পালন করেন।
আরও জানা যায়, মসজিদের অধীনে বর্তমানে ১২৬টি দোকান রয়েছে। যার আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্ধারিত অর্থ কমিটির কাছে সংরক্ষিত। কেউ চাইলে পরিচালনায় খবরদারি কিংবা অর্থ অত্মসাতের সুযোগ নেই। গঠনতন্ত্রের বাইরে কেউ যেতে পারেন না।

এরপরও চলমান কমিটি মসজিদের ১২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন মর্মে অভিযোগ এনে গত ১৩ অক্টোবর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এক মানববন্ধন ও প্রশাসনকে স্মরকলিপি দিয়েছে সাধারণ মুসল্লী ও সর্বস্তরের এলাকাবাসীর ব্যানারে একটি পক্ষ। এতে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল খালেকসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।
এ অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে শনিবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে শহীদ তিতুমীর ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের মুখোমুখি মসজিদ কমিটির সভাপতি ও মতোয়াল্লি মাস্টার মুহাম্মদ শফিকুল হক।
তিনি বলেন, মসজিদ পরিচালনায় এসে সম্পদ লুটে নেয়ার পাঁয়তারা করছে জেলফেরত ইয়াবা কারবারিসহ এলাকার চিহ্নিত একটি দখলবাজ সিন্ডিকেট। ইতোমধ্যে তারা মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে নানা ধরণের অপপ্রচার করেছে। পত্রিকায় বানোয়াট বিজ্ঞপ্তি ছাপিয়েছে। যাদের হাত ধরে মসজিদের উন্নয়ন কার্যক্রম সম্প্রসারিত হয়েছে; এলাকায় মুসল্লির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে উদ্ভট বক্তব্য প্রচার করছে। এসব লোকের চরিত্র সবার কাছে স্পষ্ট। তাদের দ্বারা এযাবতকালে এলাকা কিংবা মসজিদের উন্নয়নের কোন রেকর্ড নেই।
বাস্তবতা হলো, মসজিদের অঢেল সম্পদ ও অর্থে লুলোপ দৃষ্টি পড়েছে কিছু কুচক্রি মহলের। তারা জোট বেধে মসজিদের কমিটি দখলে নিতে পরিকল্পনা মতো বর্তমান কমিটিকে বিতর্কিত করতে নানামুখি ষড়যন্ত্র আঁকছে। সমাবেশ ডেকে বানোয়াট বক্তব্যে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এলাকার সাধারণ মানুষ সব জানে ও বোঝে। ভুল তথ্যে কাউকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। মসজিদের সম্পদ ও অর্থে হাত দেয়া মানে আগুন স্পর্শ করা।

তিনি বলেন, নতুন কমিটি করতে তিন সদস্যের তত্ত্বাবধায়ক কমিটি করা হয়। কিন্তু আহ্বায়ক সুরত আলম অকস্মাৎ মৃত্যুবরণ করায় সাধারণ সভায় আতিকুর রহমানকে আহ্বায়ক, মফিজুর রহমান কোম্পানি ও লিয়াকত আলীকে সদস্য করে পুনঃতত্ত্বাবধায়ক কমিটি হয়েছে। তারা নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করলে আবদুল খালেকসহ কয়েকজন বিতর্কিত ব্যক্তি মসজিদের সদস্য হতে চাপ সৃষ্টি করেন। অথচ সংবিধান মতে সদস্য বৃদ্ধির ক্ষমতা তত্তবাবধায়ক কমিটির নেই। এছাড়া নির্বাহী কমিটির সদস্য সরওয়ার কামাল কয়েক মাস পূর্বে জুমার নামাজে নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে মসজিদের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিঘ্নিত করে। একজন মুসলমান হিসেবে যা মোটেও শোভনীয় নয়।
এসময় মসজিদ কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সৈয়দ, শাহ আলম, আব্দুল মালেক, শামসুল আলম, জানে আলম, নজির আহমদ, নুরুল আলম, মোহাম্মদ ইসমাঈল, রাশেদুল হক রাসেল, মোহাম্মদ হাসান, মোহাম্মদ ফেরদাউস, আবুবকর ছিদ্দিক, মাহমুদুর রহমান ও মতিউর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, তারাবনিয়রছরা জামে মসজিদ নিয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টা সেনসেটিভ, তদন্তের পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।













