কক্সবাজার প্রতিনিধি »
৭ বছরের মাথায় কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল ১৩ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার ৬ দিনের মাথায় অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনে চব্বিশের নির্বাচন মাথায় রেখেই সঠিক নেতৃত্ব নির্ণয় গুরুত্ব পাচ্ছে বলে দাবি করেছেন নেতৃত্ব প্রত্যাশী ও সাধারণ নেতাকর্মীরা। ফলে সবার নজর এখন ১৩ ডিসেম্বরের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম মাঠে আয়োজিত সম্মেলন স্থলের দিকে। ইতোমধ্যে সম্মেলন সফল করতে সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, পূর্ব নির্ধারিত ১৩ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল আয়োজনের সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ ডিসেম্বর যেখানে জনসভা করেছেন সেই শহিদ শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ওইদিন সকাল ১০টায় এ সম্মেলন শুরু হবে।
দলীয় নেতা-কর্মীদের মতে, দীর্ঘ সময়ের পর আয়োজিত এ সম্মেলনকে ঘিরে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আগেই অদৃশ্য থাকা নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা এখন মাঠে এসে প্রচারণা চালাচ্ছেন। আগের কমিটি বহাল নাকি নতুন নেতৃত্ব আসছে এনিয়ে কৌতুহলী সবাই। এতে বদলে যেতে পারে নেতৃত্ব নিয়ে আগে করা সমীকরণ।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সম্মেলনের উদ্বোধন ও প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন সাধারণ সম্পাদক সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অতিথি থাকবেন কেন্দ্রিয় যুগ্ম-সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ধর্মবিষয় সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, আমিনুল ইসলাম আমিন, ব্যরিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ অন্যান্যরা। সম্মেলনে মোট ৩৫১ জন কাউন্সিলর থাকবে। আওয়ামী লীগ নতুন নেতৃত্বে বিশ্বাসী।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান জানান, এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ পরিবর্তনে বিশ্বাসী। এখানে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
দলীয় নেতা-কর্মীদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ ডিসেম্বর শহিদ শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিশাল জনসভায় ভাষণ দিয়েছেন। দীর্ঘ প্রস্তুতির পর প্রধানমন্ত্রী জনসভাকে অত্যন্ত সফল এবং স্মরণকালের বৃহৎ জমায়েত বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এসব কারণে উৎফুল্ল দলের শীর্ষ নেতারাও। সফল জনসভার কারণে ১৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জেলা সম্মেলনের সমীকরণ বদলে যেতে পারে।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মতে, আওয়ামী লীগের জনসভাটি ছিল কক্সবাজারবাসির সম্মিলন। জেলায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন যজ্ঞের মাঝে প্রধানমন্ত্রী আরো উন্নয়নের ঘোষণা করেছেন। এখানকার উন্নয়ন আন্তর্জাতিক গুরুত্ব বহন করে। চলমান উন্নয়ন প্রকল্প শেষ হলে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার ব্যাণিজিক নগর। দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী অর্থনৈতিক হাবে পরিণত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সেটি প্রকাশ পেয়েছে।
তারা আরও জানান, জেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে জনসভায় জনসমাগম ছিল লক্ষ্যণীয়। এদিন ১৩ ডিসেম্বরে জেলায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী ও আগামী জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজেদের জনবান্ধব প্রমাণে তৎপরতা ছিলো দৃষ্টিতে পড়ার মতো। মনোযোগ আকর্ষণে নানা ভাবে মানুষ এনেছেন। সেদিনের সকল বিষয় বিবেচনায় ১৩ ডিসেম্বরের সম্মেলন নিয়ে দলীয় প্রধানের বার্তা কি হতে পারে তা জানার অপেক্ষায় রয়েছে সবাই।
কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নজিবুল ইসলাম বলেন, ভৌগলিকভাবে কক্সবাজারের যে অবস্থা তার হিসেবের অতীত রেকর্ড ভাঙ্গা জনসমাগম হয়েছে। এটা জেলা আওয়ামী লীগের চলমান কমিটির জন্য পজেটিভ দিক। এটি ১৩ ডিসেম্বরের সম্মেলনে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আমার ধারণা।
দলীয় নেতা-কর্মীদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ও পরবর্তী সময়ে নানাভাবে আওয়ামীলীগের পদ প্রত্যাশীরা নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। চলমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ভারমুক্ত হওয়ার চেষ্টায় আছেন। সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানও সভাপতি হতে আগ্রহী, তবে তিনি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রেখে দিলেও অসন্তুষ্ট নন।
সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপি, চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলমও সভাপতির পদ প্রত্যাশী। সালাহ উদ্দিন ইতোমধ্যে নিজেকে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এমপি জাফরও একই ভাবে চালাচ্ছেন প্রচারনা। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে বর্তমান যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রণজিত দাশ বিগত দু’বছর ধরেই জোর প্রচারণায় রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় ঘোড়ায় চড়ে বিপুল সমর্থক নিয়ে উপস্থিত হিয়ে সবার নজর কেড়েছেন তিনি।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হতে চান আরেক যুগ্ম সম্পাদক আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি মো. খোরশেদ আলম, সহ-সভাপতি রেজাউল করিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান এবং সদস্য রাশেদুল ইসলামও। এদের মাঝে দলের দুঃসময়ের কান্ডারি হিসেবে পরিচিতি রয়েছে অ্যাডভোকেট রনজিত দাশ, যুবলীগের সাবেক সভাপতি মো. খোরশেদ আলম ও রাশেদুল ইসলামের।
জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. খোরশেদ আলম বলেন, ১৩ ডিসেম্বরের সম্মেলনে অনেকেই সভাপতি-সম্পাদক প্রার্থী। এখানে প্রধানমন্ত্রী যে নিদের্শনা দেবেন তা মেনে নেয়া ছাড়া বিকল্প নেই। তবে, আগামী নির্বাচনসহ সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করে তৃণমূলের মাধ্যমে যোগ্য ও ত্যাগী নেতা নির্বাচন গুরুত্ব বহন করে।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রণজিত দাশ জানান, আমি নবম শ্রেণীতে থাকাকালীন ছাত্রলীগের স্কুল সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে রাজনীতি শুরু করেছিলাম। ১৯৮৪ সালে জেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক, ৮৮ সালে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছাত্রলীগের দায়িত্বে থাকাকালীন বিধ্বস্ত ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করে ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন শেষে ৯১ সালের বিএনপি ক্ষমতায় এলে চরম নিপীড়নের শিকার হয়েছিলাম। জেল-জুলুম সবকিছু হজম করে ১৯৯৯ সালে বিনা-প্রতিদ্বন্ধিতায় জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলাম। ২০০৫ সালের জেলা আ’লীগের মোজাম্মেল-সালাহউদ্দিন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, পরবর্তী মোস্তফা-মুজিব কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপালন করছি। সেই হিসেবে ধারাবাহিকতায় এবার সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী হিসেবে গত দু’বছর ধরে কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী আগমন সফল করতে তৎপরতাও চালিয়েছি বেশি। আমি চাই আগামী সম্মেলনে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচন হউক। চব্বিশের নির্বাচনসহ সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় তৃণমূলকে মূল্যায়ন করে দলকে সুসংগঠিত করার মানসিকতা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্নরা-ই আগামীর নেতৃত্বে আসুক সেটাই ত্যাগীদের কামনা। এরপরও দলীয় সভানেত্রী যেভাবে জেলা আওয়ামীলীগ সাজাবেন ওটাই চুড়ান্ত।
রাশেদুল ইসলাম জানান, বর্তমান কমিটির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে তথ্য আছে এতে কিছুটা পরিবর্তনের আভাষ মিলেছে। প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার ঘুরে গেলেন- ১৩ ডিসেম্বর সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা দেবেন, সেটিই ধারণা করছি। নেত্রীর সিদ্ধান্ত সকলেই মেনে নেবেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কক্সবাজার জেলা শাখার ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি। সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার সাড়ে আট মাস পর ১৩ অক্টোবর ৭১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি অনুমোদন দেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ওই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে মনোনীত সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন কমিটি প্রায় ৫ বছর দায়িত্ব পালনের পর দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে ওই কমিটিতে নাটকীয় পরিবর্তন আসে। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর জেলা কমিটির সভাপতি সিরাজুল মোস্তফাকে কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক করেন।
আর সিরাজুল মোস্তফার স্থলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান অনুমোদিত জেলা কমিটিতে সহ-সভাপতির তালিকায় থাকা ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী। ফরিদ-মুজিবের নেতৃত্বে অনেক উপজেলা ও পৌরসভার সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। সর্বশেষ তাদের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভপতির জনসভা সম্পন্ন করেছেন।
বাংলাধারা/এসএ/আরএইচআর













