বাংলাধারা প্রতিবেদক »
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, ‘আদালত অঙ্গনেও নানাভাবে এই অপশক্তির পদচারণা আমরা দেখেছি। আদালত থেকে বিভিন্ন আলোচনা আমরা শুনছি, রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্য এটা অনেক চিন্তার বিষয়। কারণ তারা (অপশক্তি) সেখানেও নানাভাবে ঢুকে গেছে। সরকারের বাহিনী, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও তারা ঢুকে গেছে। সেজন্য আমাদের সজাগ থাকতে হবে, ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সাংগঠনিক ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থাকতে পারে, কিন্তু কঠিন সময়ে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা সংগঠনের স্বার্থে পরিহার করে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে।’
শুক্রবার (১৯ আগস্ট) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর জে এম সেন হল প্রাঙ্গনে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় আয়োজন জন্মাষ্টমী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এক ধর্ম সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে সেই ভয়াবহ রাজনৈতিক শক্তি এখনও রয়ে গেছে, যারা আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বোমা মেরে হত্যা করতে চেয়েছিল, যারা আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। সংখ্যালঘু শব্দটা আমি কখনোই বলতে চাই না, কারণ তারাই সংখ্যালঘু যারা বাংলাদেশের আদর্শকে মানে না, ধারণ করে না। আমরা নানা ধর্মের অনুসারীরা আমরা এই বাংলাদেশে আছি।’
ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশকে ‘ধর্মরাষ্ট্রে’ পরিণত করার চেষ্টা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আমাদের একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র দিয়ে গেছেন। কিন্তু যারা এই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রকে ধর্মীয় রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছে, তাদের অজ্ঞতা এবং মূর্খতা এতটাই বেশি যে, তারা জানে না- নবী হযরত মুহম্মদ আরব দেশকে কিন্তু নিজেই ধর্মীয় রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেননি। ধর্মীয় রাষ্ট্রের চিন্তা ইসলাম ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও কখনো গ্রহণযোগ্য নয়, এটা মওদুদীবাদের সৃষ্টি। মানুষ ধর্মের অনুসারী হয়, কিন্তু রাষ্ট্র কোনো ধর্মের অনুসারী হতে পারে না। রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকতে পারে না। রাষ্ট্র তো নামাজ পড়তে পারে না বা পূজা করতে পারে না। রাষ্ট্র তো গীর্জায় যেতে পারে না। রাষ্ট্র কোনো ব্যক্তি না, রাষ্ট্র একটা প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের মানুষের ধর্ম থাকবে, নিজ নিজ ধর্ম তারা পালন করবে।’
‘মওদুদীবাদী এবং উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো শরিয়তি আইন সমাজে সবার জন্য চাপিয়ে দেওয়ার রাজনীতি করে। তারা জঙ্গিবাদকে সহানুভূতি দিয়ে বাংলাদেশকে নিমজ্জিত করার কুপরিকল্পনা করে। এ জন্য অস্ত্র, বোমা একসময় রাষ্ট্রীয়ভাবে জঙ্গিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। আমরা সবাই জানি- দশ ট্রাক অস্ত্র ভারতে পাচারের জন্য নেওয়া হচ্ছিল, এর সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, সেই লোকগুলো তো এখনও বেঁচে আছে। তারা যে রাজনীতির ধারায় ছিল, এখনও সেটাতেই আছে। তাদের সঙ্গে আমাদের যে যুদ্ধ, এটি চলমান আছে।’
একই ‘অপশক্তি’ আদালত, সরকারি বাহিনী ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঢুকে গেছে তথ্য দিয়ে উপমন্ত্রী বলেন, ‘আদালত অঙ্গনেও নানাভাবে এই অপশক্তির পদচারণা আমরা দেখেছি। আদালত থেকে বিভিন্ন আলোচনা আমরা শুনছি, রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্য এটা অনেক চিন্তার বিষয়। কারণ তারা (অপশক্তি) সেখানেও নানাভাবে ঢুকে গেছে। সরকারের বাহিনী, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও তারা ঢুকে গেছে। সেজন্য আমাদের সজাগ থাকতে হবে, ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সাংগঠনিক ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থাকতে পারে, কিন্তু কঠিন সময়ে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা সংগঠনের স্বার্থে পরিহার করে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে।’
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিজেদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কারও অধিকার, সাংবিধানিক শুধু নয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকারও আমাদের যা আছে, আমাদের নাগরিক অধিকার যেটা সংবিধানে আছে, সেটা হরণ করার জন্য অপরাজনৈতিক শক্তি, সাম্প্রদায়িক শক্তি যখন সেখানে আক্রমণ করে, তখন কোনো সম্প্রদায় বা জনগোষ্ঠী নিশ্চুপ হয়ে থাকলে বা নিজের অধিকারের দায়িত্ব যদি নিজে নিতে না পারে এবং সেই অপশক্তিকে সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করতে না পারে, তাহলে আমাদের জায়গাটা শক্তিশালী হবে না। পরিষ্কারভাবে বলতে চাই- শেখ হাসিনার প্রত্যেক কর্মী বাংলাদেশের সকল সম্প্রদায়ের সকল নাগরিকের পাশে আছে।’
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের সুযোগে বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদের উত্থান হতে পারে আশংকা করে উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, ‘সামনের দিনগুলোতে অর্থনৈতিক চাপ, অর্থনৈতিক সংকট যেভাবে আসছে সেটাকে বাংলাদেশে একটা সাম্প্রদায়িক রূপ দেয়ার চেষ্টা করবে কেউ কেউ। বাংলাদেশকে যদি একটি উগ্রবাদী জঙ্গি রাষ্ট্র করা যায়, তাহলে প্রতিবেশি দেশ ভারতেও অস্থিতিশীলতা আসবে, মিয়ানমারেও আসবে। আন্তর্জাতিকভাবে এটা একটা গৃহযুদ্ধপূর্ণ এলাকায় পরিণত হবে, আফগানিস্তানে যেটা হচ্ছে। আফগানিস্তান এখন অরাজকস্থানে পরিণত হয়েছে। ধর্মের অপব্যবহার করতে করতে তারাই সে পর্যায়ে নিজেদের রাষ্ট্রকে নিয়ে গেছে।’
‘ধর্ম নিয়ে যদি আমরা বাড়াবাড়ি করি, সাম্প্রদায়িকতার প্রতিফলন যদি আমরা ঘটাতে যাই, তাহলে দেশ আর দেশ থাকবে না, নরকে পরিণত হবে। নরক আমরা চাই না, দোজখ আমরা চাই না। আমাদের শক্তভাবে মাটি কামড়ে প্রতিহত করতে হবে। অপশক্তি থাকবে, এদের গডফাদাররা বিদেশে বসে আছে। দেশি-বিদেশি শক্তি মিলে বাংলাদেশে অরাজকতা করতে চায়। আমাদের অর্জনগুলোকে তারা পিছিয়ে নিয়ে যেতে চায়। আমাদের অনেক সমস্যা, কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ও দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশকে একটি স্থিতিশীল ও নিরাপদ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে’— বলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং বিশেষ অতিথি আইনজীবী ও মানবাধিকার সংগঠক তানিয়া ও জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারাও বক্তব্য রাখেন।













