বান্দরবান প্রতিনিধি :::
আর মাত্র ক”দিন বাকি। তারপর পাহাড়ের মেতে উঠবে “সাংগ্রাইমা ঞিঞি ঞাঞা” সুরে। পার্বত্য অঞ্চলে বান্দরবানের শুরু হতে যাচ্ছে পহেলা বৈশাখ ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই ও জলকেলি উৎসব । পুরানো বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পাহাড়ি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই উৎসবের আমেজ। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের সামাজিক উৎসব সাংগ্রাই উৎসবকে ঘিরে উৎসবের নানান রঙে সাজতে শুরু করেছে পুরো তিন পার্বত্য জেলায়। এতে পাহাড়ের সাংগ্রাই উৎসবের ঘিরে আনন্দিত মারমা সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠিরা।
এদিকে নতুন বছর বর্ষবরণকে ঘিরে আদিবাসী পল্লীগুলোতে এটি মধ্যে শুরু করেছে নানান প্রস্তুতি । পিঠা তৈরি, ঘর সাজানো থেকে শুরু করে নতুন জামা-কাপড় কিনতে স্থানীয় বাজার ও মার্কেট গুলোতে পড়েছে কেনাকাটা ধুম। ছোট থেকে সকল বয়ষ্কের মানুষ নিজেকে রাঙিয়ে দিতে ব্যস্ততা পাড় করছেন অনেকেই। শুধু বাজার নয় বিভিন্ন পাড়া মহল্লায়ও চলছে পুরোদমে নানান প্রস্তুতি। তাছাড়া সাংগ্রাই উৎসবকে ঘিরে তিনদিনব্যাপী পানি খেলা, পিঠা তৈরি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন করা হয় এই দিনে। মৈত্রী পানি বর্ষণের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস-সব মিলিয়ে পুরো জেলার সবক’টি সম্প্রদায়ের মানুষ একাট্টা হবে এই নতুন বছরকে বরণ করে নিতে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সাংগ্রাই আগমনের ফলে পাহাড়ি গ্রাম গুলোতে শুরু হয়েছে বাশঁ কাঠ আদলে তৈরি নৌকার কাজ। সেসব কাজে কয়েকজন যুবকরা এটি মধ্যে শুরু করে দিয়েছে সাংস্কৃতিক মঞ্চায়নও । আবার কেউ কেউ রাজবিলা রাবার ড্যাম ও গোয়ালিয়া খোলা সাঙ্গু খালে ধোয়া শুরু করেছে বিভিন রকমারি কম্বল ও কাপড় চোপড়। গ্রামে গ্রামে ঘর পরিষ্কার – পরিছন্নতা ও ঘর সাজানোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তরুণীরা। আশেপাশে ঘরের আঙ্গিনায় সাজাতে শুরু করেছে বিভিন্ন রকমারি ফুল। আগাম প্রস্তুতির নিতে এরই মধ্যে ব্যস্ততার ধুম পড়েছে পাহাড়ি গ্রামে তরুণ-তরুণীদের। এছাড়াও স্থানীয় মগ বাজার ও হ্লা হ্লা বার্মিজ মার্কেট, চনুমং মাষ্টার বার্মিজ মার্কেট, হ্যাপি বার্মিজ মার্কেট,হিলসিটি বার্মিজ মার্কেটসহ পাহাড়িদের নিজ পছন্দের কেনাকাটা করতে ভীড় জমিয়েছেন পাহাড়ি জনগোষ্ঠিররা। বিভিন্ন ফুলের ও রঙ্গের আদলে তৈরি থামি সেট,থ্রি পিচ,সাংগ্রাই গেঞ্জি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন শিশু থেকে বয়ষ্ক জোষ্টরা।
আয়োজকেরা জানিয়েছেন, ১৩ এপ্রিল বান্দরবানে শহরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে মারমা সম্প্রদায় সাংগ্রাই উৎসবকে স্বাগত জানাবে। ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৩ দিনব্যাপী উৎসব চলবে। উৎসবের মধ্যে রয়েছে সমবেত প্রার্থনা, জলকেলি (পানি খেলা), পিঠা তৈরি, ঘিলা খেলা, বৌদ্ধ মূর্তি স্নান, হাজার প্রদীপ প্রজ্বালন, বয়স্ক পূজা ও নিজস্ব ঐতিহ্যবাসী নৃত্য-গানসহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়াও পার্বত্য এলাকায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে প্রতি বারের ন্যায় এবারও সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন পরিষদ আয়োজন করেছে এ মনোরম অনুষ্ঠান।
বান্দরবানে সাংগ্রাই বাজার করতে আসা সাইমে, নুশৈ ও মুইক্রা জানিয়েছেন, বহু অপেক্ষা পর সাংগ্রাই শুরু হতে চলেছে। এই উৎসবকে ঘিরে তারা নতুন কাপড়চোপড় কিনেছেন। বাদ যায়নি কসমেটিক দোকানে রেসমি চুড়ি। জলকেলি উৎসব ও ছোয়াইং (আহার) দান কে ঘিরে তরুনীদের এমন প্রস্তুতি। নিজেদের এই দিনে রাঙ্গাতে ও ফুটিয়ে তুলতে স্থানীয় মার্কেট গুলোতে ঘুরে ঘুরে শপিং করছেন তারা।
দোকানে বিক্রেতা নিনি ও নাজমুল ইসলাম জানান, সামনে সাংগ্রাই ও ঈদ আসছে। পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়াতেই তেমন ক্রেতারা আসছে নাহ। তবে আশা করছি সামনে আরো ক্রেতারা আগমন ঘটবে।
বান্দরবান ক্ষুদ্র- নৃগোষ্ঠি সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউটের সাবেক পরিচালক মংনুচিং মারমা বলেন, এই দিনে নতুন বছরকে বরণ করতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মাবলম্বীরা নানান কর্মসূচি হাতে নিয়ে থাকেন। এই দিনে পরিশুদ্ধ জল মাধ্যমে পুরানো দিনকে গ্লানি মুছে দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করা হয়।
সাংগ্রাই উদযাপন পরিষদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক শৈটিং মারমা জানান, ঐতিহ্যবাহী মাহা: সাংগ্রাই পোয়ে আগমনের উদযাপন পরিষদ কমিটি বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। আগামী ১৩ তারিখে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা,১৪ তারিখ পিঠা বানানো উৎসব ও ১৫ তারিখ পানি মৈত্রীবর্ষণ। তাছাড়া রোজা মাসকে সামনে রেখে ও প্রত্যেক ধর্মকে সম্মান জানিয়ে সুষ্ঠুভাবে এই বৈসাবি ও সাংগ্রাই শেষ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
বান্দরবান সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি এস এম শহিদুল ইসলাম বলেন, এই উৎসবকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পাশাপাশি সাদা পোশাকধারী মাঠে থাকবে। যাতে সম্প্রতি বান্দরবানে অন্যতম উৎসবকে ঘিরে কোন অপ্রীতিকর দুর্ঘটনা না ঘটে। সেই সাথে পুলিশ সুপার নির্দেশনায় সদর থানা পুলিশ এই উৎসবে কাজে নিয়োজিত থাকবে।













